বিশ্বচোর আমেরিকার অর্থনৈতিক সাফল্যের আসল রহস্য পর্ব ০২

বিশ্ব অর্থনীতির ভয়ানক ভবিষ্যৎ, মূল্যহীন কাগজে মুদ্রা ও আমাদের করনীয়।

এই লেখাটি অবশ্যই পড়বেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা। কোরআন হাদিসে উল্লেখিত দিনার-দিরহাম এবং হারাম কাগুজে মুদ্রা!!! আর আমেরিকা কর্তিক মুসলিম দেশের সম্পদ চুরি। অনেক বড় হলেও উম্মাহর সবাইকে কষ্ট করে সম্পূর্ণটা পড়ার অনুরোধ রইল। লেখাটি তিনটি ধাপে লেখব কাজেই লেখাটি একটু বড় হবে। লেখাটি পড়লে অর্থনীতির অনেক ধরণের পলিসি সম্পর্কে জানতে পারবেন। যারা প্রথম পর্ব
 পড়েননি তারা প্রথম পর্ব পড়ে আসুন বিশ্বচোর আমেরিকার অর্থনৈতিক সাফল্যের আসল রহস্য পর্ব -১ 


১/ আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা ও টাকার মান চুরির কথাঃ 

আমরা কম বেশী সবাই জানি কোন দেশের সরকার কাগজের মুদ্রা ছাপায় ঠিক যত পরিমান স্বর্ণ সরকারের কাছে জমা আছে। অর্থাৎ স্বর্ণের বিপরীতে কাগজের মুদ্রা ছাপানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ১৪ টন স্বর্ণ আছে (হিসাবঃ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। প্রতি টন স্বর্ণের মূল্য ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে হলে ১৪ টন স্বর্ণের মোট দাম হয় ৭২৮০ কোটি টাকা (১ ডলার = ৮০ টাকা)। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ আছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমান প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মত। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাঁজারে স্বর্ণ ক্রয় বিক্রয় করা হয় একমাত্র মার্কিন ডলার এর বিনিময়ে, তাই যে কোন দেশ ডলারকে স্বর্ণের বিকল্প হিসেবে ধরে মুদ্রা ছাপাতে পারে।

এখানেই রয়েছে যত রহস্য ও বাটপারি। বিষয়টা এমন একজন বেক্তি সারাদিন মাছ ধরে বাড়িতে গিয়ে দেখে, মাছ রাখার পাত্রে কোন মাছ নেই বা যত মাছ ধরেছে তার চেয়ে অনেক কম মাছ। পরবর্তীতে লোকটি দেখল মাছ রাখার পাত্রের নিচে একটি বড় ফুটা, ঐ ফুটা দিয়ে তার সব মাছ চলে গেছে। এই বিষয়টা সম্পূর্ণ এই রকমই। আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকে স্বর্ণের বদলে ডলার জমা রাখার মানে হচ্ছে ফুটা পাত্রে মাছ জমা করার মত। আপনি আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকে স্বর্ণ বা ডলার যেটাই জমা রাখবেন মানে আপনি তলা বিহীন পাত্রে আপনার সম্পদ জমা রাখছেন। এমন কি আপনি নিজের কাছে ডলার জমা করার মানেও একই।

মনে করেন, একজনের কাছে ১০ লক্ষ টাকা আছে। বর্তমান বাঁজার মূল্যে সে এই টাকা দিয়ে ২০ টন চাল কিনতে পারবে। এখন সে চাল না কিনে ১০ লক্ষ টাকা সিন্দুকে রেখে দিল। ৫ বছর পরে লোকটি সিন্দুক খুলে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে বাঁজারে এল। বাঁজার ঘুরে দেখল, এখন এই ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে মাত্র ১২ টন চাল কিনতে পারবে অথচ এই একই পরিমাণ টাকা দিয়ে ৫ বছর আগে সে ২০ টন চাল কিনতে পারত। অথচ পাঁচ বছর আগে চালের মাথা পিছু উৎপাদন যা ছিল বর্তমানে সময়ে চালের মাথা পিছু উৎপাদন আরও বেশী। ১৯৭১ সালের পর থেকে প্রযুক্তি গত উন্নয়ন আধুনিক সেচ বেবস্থার কারনে আমাদের মাথা পিছু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে অনেকটা যা বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মাথা পিছু খাদ্য উৎপাদন থেকেও বেশী। তাহলে কেন আমাদের টাকার মান কমেছে ??

এই বিষয়টা বুঝার জন্য একটা ছোট উদাহরণ দিচ্ছি। মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে মোট স্বর্ণ আছে ৫০ টন যার বাঁজার মূল্য হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এখন সরকার নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কাগজের মুদ্রা ছাপাতে পাড়বে। কিন্তু সরকার ৫০ হাজার এর পরিবর্তে ৬০ হাজার কোটি কাগজের মুদ্রা ছাপালো। ৫০ হাজার কোটি দেশের বাঁজারে ছড়িয়ে দিল, আর বাকি ১০ হাজার কোটি সরকারি দলের লোকেরা ভাগ করে নিল। কাগজের মুদ্রা ৫০ হাজার কোটি বা ৭০ হাজার কোটি যাই ছাপানো হোক মোট স্বর্ণের পরিমান কিন্তু সেই ৫০ টনই আছে। আগে যদি আপনি ১ টন স্বর্ণ ১০০০ কোটি টাকায় পেতেন এখন এটা কিনতে আপনার দরকার হবে ১২০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা আপনার কাছে নাই, তাই আপনি ১ টন স্বর্ণ কিনতে পারছেন না। আর এই ২০০ কোটি টাকা আছে সরকারি লোকদের হাতে, ওরা ২০০ কোটি টাকার স্বর্ণ কিনে নিল একদম ফ্রিতে, শুধু মাত্র বেশী কাগজের মুদ্রা ছাপিয়ে। এই অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি লোকেরা ফ্রিতে নিয়ে গেল, এভাবেই ওরা নিজেদের সম্পত্তি বৃদ্ধি করে চলে দিনের পর দিন, আর চার দিকে খাদ্য পণ্য সহ সকল পণ্যের দাম বেড়েই চলে।

আমাদের অর্থমন্ত্রী দিনের পর দিন জনগণকে বোকা বানিয়ে চলছেন। বাজেটে শুধু টাকার পরিমান বাড়ছে কিন্তু টাকার মূল্য দিন দিন কমেই চলেছে, এর কারন একটাই অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়ে সরকারি মহলের সম্পত্তি লুট। আর এই কাজটা গত ৭/৮ বছর দরে নিয়মিত ভাবে করে চলছে। 

এবার আসি আমেরিকান ফেডারেল ব্যাংকে ডলার জমা রাখলে কি হয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকে জমা আছে। এখন সরকার চাইলে এই টাকায় ৫২০ টন স্বর্ণ ক্রয় করতে পারবে (হিসাবঃ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। মনে করেন, সারা পৃথিবীর মার্কেটে মোট আমেরিকান ডলার আছে ১০০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এখন আমেরিকা তার কিছু ঋণ পরিশোধ করার জন্য আরও ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাপালো। 

এখন যদি ২০১৭ সালে পৃথিবীতে মোট আমেরিকান ডলার ১০০০ বিলিয়ন হয়, আর ২০১৮ সালে মোট আমেরিকান ডলার হবে ১২০০ বিলিয়ন। কত পারসেন্ট ডলার আমেরিকা অতিরিক্ত ছাপালো ?? ২০% ডলার আমেরিকা অতিরিক্ত ছেপেছে। এখন ২০১৭ বাংলাদেশ সরকারের ৫২০ টন স্বর্ণ কিনতে যদি ৩৩ বিলিয়ন ডলার লাগত, ২০১৮ সালে ৫২০ টন স্বর্ণ কিনতে বাংলাদেশ সরকারের লাগবে অতিরিক্ত ২০% ডলার সহ মোট ৪০ বিলিয়ন ডলার। অতিরিক্ত ৭ বিলিয়ন ডলার এখন আমেরিকার হাতে, আর আমেরিকা ঐ ৭ বিলিয়ন ডলার ছেপে নিজেদের কাজে ব্যাবহার করল। অথচ মোট সম্পদ কিন্তু সেই ৫২০ টন স্বর্ণই আছে। কারণটা খুব সহজ আমেরিকা অতিরিক্ত ডলার ছাপার কারনে ডলার এর মূল্য কমে গেছে, কিন্তু স্বর্ণের মূল্য ঠিকই আছে। বাঁজারে ডলার বেশী সাপ্লাই দিয়ে আমেরিকা ডলার এর মূল্য কমিয়ে নিজেরা অতিরিক্ত ডলার দিয়ে নিজেদের সম্পত্তি বাড়িয়ে চলতেছে। আর আমেরিকা এই কাজটা করছে গত ৫০ বছর ধরে। পৃথিবীর সব দেশ থেকে আমেরিকা এই প্রক্রিয়ায় সম্পত্তি চুরি করে। 

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন এখানেত ডলারেরও দাম কমছে, কিন্তু টাকার সাথে ডলার এর তুলনা করলে দেখা যায় টাকার মান অনেক কমে গেছে কিন্তু ডলার এর মান প্রায় কমেই না। এর সহজ উত্তর হচ্ছে আমেরিকা অতিরিক্ত ডলার ছাপানোর কারনে ডলার দাম কমে যায়, কিন্তু ঐ অতিরিক্ত ডলার দিয়ে আমেরিকা অন্য দেশ থেকে স্বর্ণ ক্রয় করে থাকে। এই অতিরিক্ত বা ফ্রি ছাপানো ডলার দিয়ে আমেরিকা স্বর্ণ কিনে নিজেদের সম্পদ বাড়িয়ে চলে, পরবর্তীতে দেখা যায় আমেরিকার মোট সম্পত্তি এবং স্বর্ণের রিজার্ভ ও বেড়ে যায়। এতে করে আমেরিকার মোট সম্পত্তির তুলনায় মোট ডলার এর দাম ঠিকই থাকে বা একটু মাত্র কমে। আরেকটু সহজ ভাবে বললে, আমেরিকার কাছে যদি ২০১৭ সালে ১০০০ বিলিয়ন ডলার, ৮০০০ টন স্বর্ণ থাকে তাহলে ২০১৮ সালে আমেরিকার কাছে ১২০০ বিলিয়ন ডলার থাকবে, আর মোট স্বর্ণ থাকবে ৯০০০ টনের বেশী। প্রসেসটা হচ্ছে প্রথমে আমেরিকা বেশী ডলার ছাপানোর কারনে ডলার এর মান কমে, তখন আমেরিকা ঐ অতিরিক্ত ডলার দিয়ে স্বর্ণ কিনতে থাকে এতে করে আমেরিকার স্বর্ণের রিজার্ভ আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমন করে স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়ানোর কারনে একটা সময়ে আবার ডলারের মান ফিক্সড হয়ে যায়। হাঁ তবে এতে করে ডলার এর মান একটু কমে, কিন্তু আমেরিকার মোট সম্পত্তি বেড়েই চলে। মানে আমেরিকার ডলার এর মূল্যও কমে পাশাপাশি আমেরিকার কাছে মোট ডলার এর নোটও থাকে বেশী আবার আমেরিকার সম্পদও বাড়ে।

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন সরকার ডলার জমা না রেখে স্বর্ণ জমা রাখলেই পারে। এখানেই আমেরিকার আরও বড় শয়তানী। আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ নামের শয়তানী সংস্থা মিলে নিয়ম করেছে যাকে আমরা আন্তর্জাতিক আইন বলি, যে স্বর্ণের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে না। একমাত্র ডলারেই লেনদেন করতে হবে। আর সবাইকে এই আইন মানতে হবে এটাই আন্তর্জাতিক আইন। এখন মনে করেন কোন দেশ চাইল সে সবসময় গোল্ড জমা রাখবে, কোন এক সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ঐ দেশে খাবারের খুব সমস্যা হয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক আইনের কারনে ঐ দেশ স্বর্ণের বিনিময়ে খাদ্য কিনতে পারবে না, তখন ডলার লাগবে খাদ্য কিনতে। আর এই সুযোগে আমেরিকা আপনার সব স্বর্ণ সস্তায় কিনে নিবে আপনাকে বিপদে রেখে। এটাই আন্তর্জাতিক আইন। এজন্যই ওরা স্বর্ণের দাম ফিক্সড করতে দেয়ে না।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ৩৩ বিলিয়ন ডলার এর বিনিময়ে ৫২০ টন স্বর্ণ কিনতে পারত। এখন সরকার এই হিসাব করে ৩৩ বিলিয়ন ডলারকে ৫২০ টন স্বর্ণ দরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশী মুদ্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকার কাগজের মুদ্রা ছেপেছে। এখন ২০১৮ সালে আমেরিকার অতিরিক্ত ২০% ডলার ছাপার কারনে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে আর ৫২০ টন স্বর্ণ পাচ্ছে না। কাজেই আমেরিকার অতিরিক্ত ডলার ছাপার কারনে অটোমেটিক ভাবে বাংলাদেশী মুদ্রার ২০% দাম কমে যাচ্ছে। আর আমেরিকা প্রতি বছর এই কাজটা করে থাকে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১ ডলার = ৬০+ টাকা ছিল। অথচ ২০১১ এর ডিসেম্ভরে এটা হয়ে যায় ১ ডলার = ৮১ টাকা। এর কারন কি জানেন ? ঐ বছর ওবামার নির্দেশে আমেরিকা অতিরিক্ত ৭০০ বিলিয়ন ডলার ছেপেছিল। যেহেতু আমরা ডলারকে স্বর্ণ হিসেবে ধরে টাকা ছাপাই, তাই আমেরিকা অতিরিক্ত ডলার ছাপালে অটোমেটিক ভাবে আমাদের টাকার মান কমে যায়। 
আমাদের টাকার মান আরও কমে যায় আবার সরকারী দলের সম্পদ চুরির কারনে। একটু আগে বলে ছিলাম, বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ৩৩ ডলার দিয়ে ৫২০ টন স্বর্ণ কিনতে পারত এই হিসাব করে সরকার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকার কাগজের মুদ্রা ছাপায়। কিন্তু সত্য হচ্ছে সরকার আরও অনেক বেশী কাগজের মুদ্রা ছাপায় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশী, অতিরিক্ত মুদ্রা সরকারী লোকেরা ও উপরের মহলের লোকের আত্মসাৎ করে। এই অতিরিক্ত টাকা ছাপার কারনেও আমাদের মুদ্রার মান কমে যায়। আমাদের মুদ্রার মূল্য কমে দুই ধাপে, একদিকে আমেরিকার অতিরিক্ত ডলার ছাপার কারনে, আরেক ধাপে সরকারের লোকেরা অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপার কারনে। আর এই দুই ধাপে টাকার মূল্য চুরি হওয়ার কারনে প্রতি মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম হু হু করে বাড়তেই থাকে। আসলে পণ্যের দাম ঠিকই থাকে, আমাদের টাকার মূল্য চুরি হয়ে যায় প্রতি বছর বছর। আপনি দেখবেন ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের মাথা পিছু খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন সবই বেড়েছে। তাহলে কেন আমাদের মুদ্রার মান কমে ??? অথচ উল্টা আমাদের মুদ্রার মান বাড়ার কথা ছিল, যেহেতু আমাদের মাথা পিছু সব ধরণের উৎপাদন বেড়েছে। এর কারন টাকার মূল্য প্রতি বছরই চুরি হতে থাকে উপরের দুটি ধাপে।

২/ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভয়ানক ভবিষ্যঃ 

বাংলাদেশের সরকার বৈদেশিক মুদ্রাকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে মনে করে। আর এই বৈদেশিক মুদ্রার ৯৫% ই হচ্ছে আমেরিকান ডলার। যেহেতু আমেরিকান ডলার আন্তর্জাতিক লেনদেনের একমাত্র মুদ্রা। তাই সরকার ডলার জমা রেখে ঐ ডলার এর সাথে স্বর্ণের বাঁজার মূল্য হিসেব করে মুদ্রা ছাপায়। কিন্তু আমেরিকার ডলার যে কোন মুহূর্তে বাতিল হয়ে যেতে পারে, আমেরিকান ডলারকে এখন আইসিইউতে অক্সিজেন মাক্স দিয়ে কৃত্তিম ভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে যে কোন মুহূর্তে আমেরিকান ডলার ইন্তিকাল করতে পারে। (আমেরিকান ডলার এর আত্মা, ক্ষমতা, মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আগের নোটটা পড়ার জন্য অনুরুধ করা হচ্ছে।) 

আর যারা আমার ঐ লেখাটা আগে পড়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পাড়বেন। তারপরও ছোট করে আবার বলি, ১৯৭৩ সাল!!!! আমেরিকা ও সৌদি আরবের শুধুমাত্র ডলার এর বিনিময়ে তেল বিক্রির চুক্তিঃ 

১৯৭৩ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার এর চালাকি বুঝতে না পেরে কিং ফয়সাল আমেরিকার সাথে পেটরু ডলার চুক্তি করেন। মানে আরবের তেল বিক্রি হবে শুধু মাত্র ডলার এর বিনিময়ে, এমনকি স্বর্ণের বিনিময়েও না। পরবর্তীতে OPEC গঠিত হয় আর ওপেকেও তেল বিক্রি করবে শুধু মাত্র ডলার এর বিনিময়ে। আর ওপেকের সদস্য হচ্ছে তেল বিক্রয়কারী প্রধান ১০/১২ দেশ (সঠিক সংখ্যা মনে নেই) এই চুক্তির কারনেই আমেরিকা আজকের সুপার পাওয়ার। দুনিয়ার বাকি সব দেশ তেল কিনতে হলে আমেরিকার কাছ থেকে ডলার নিতে হবে। আর আমেরিকা শুধু ডলার ছাপাবে আর ধনী হবে। ফয়সাল যখন বুঝতে পারে এইটা আমেরিকার চালাকি, তখন তাকে খুন করে ফেলা হয়। আর ইরাক ও ইরান একমাত্র দেশ যারা আমেরিকার এই পাতা ফাঁদে পা দে নাই। সাদ্দামকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি শুধু ইরান, যদিও ওরা শিয়া তারপরেও ওরা আমেরিকার ঐ ধোঁকা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে। ইরানের তেল সকল আন্তর্জাতিক মুদ্রা যেমন পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন, রুপি, ডলারে বিক্রি হয়। আমেরিকার ও ইসরায়েলের কাছে শিয়া ও সুন্নি সবই এক।
-
এখন কেউ তেল কিনতে চাইলে আগে তাকে আমেরিকার কাছ থেকে ডলার কিনতে হবে। মানে আমরা ডলার ছাড়া তেল কিনতে পারব না। আর ডলার এর জন্য সবাই আমেরিকার কথামত চলতে হবে। আর এই তেলই হচ্ছে ব্লাক গোল্ড নামে পরিচিত। ঐ দেশ গোলা যেহেতু ডলার ছারা অন্য মুদ্রায় এমন কি স্বর্ণের বিনিময়েও তেল বিক্রি করবে না। তাই আমেরিকা ঐ সকল দেশের তেলের একটা মোট হিসাব করে তেলের মূল্য কত আসে ঠিক ঐ পরিমান ডলার ছেপেছে। এই চুক্তির কারনে পরোক্ষ ভাবে ঐ তেলের মালিকানা আমেরিকার হয়ে গেল। OPEC ভুক্ত দেশের কাজ হচ্ছে কাগজের ডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি করা। 
-
এখন গত কয়েক বছরে বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে গেছে, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, ইরান এখন শুধু মাত্র ডলার এর বিনিময়ে তেল বিক্রি করে না। অপর দিকে ইরাক, সিরিয়া, সুদান, কাতার এখন আমেরিকাকে আর পাত্তা দিচ্ছে না, এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছে, যে কোন মুহূর্তে এই চুক্তি বাতিল করার। একমাত্র সৌদি আরব ও আমিরাত, কুয়েত হচ্ছে আমেরিকার খাস চামচা, পালা কুত্তা। সৌদি পৃথিবীর মধ্যে ১ নাম্বার তেল রপ্তানি কারক দেশ এরাই আমেরিকার বড় চামচা। তবে সিরিয়া যুদ্ধে সৌদি বাদশার রাশিয়া সফর। অপর দিকে রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা এই ডলার ভিত্তিক মুদ্রা ব্যাবস্থা থেকে বাহির হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। রাশিয়া এখন গোল্ডের বিনিময়েও তেল, গ্যাস রপ্তানি করে। চীনও এই ব্যাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। 
-
এখন কোন ভাবে যদি সৌদি ও ইরান যুদ্ধ লেগে যায় তাহলে এই যুদ্ধ ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ হিসেবে সারা পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। একদিকে আমেরিকা অপরদিকে চীন ও রাশিয়া। আর এই যুদ্ধের কারনে ১০০% নিশ্চিত আমেরিকার পতন হবে, সাথে ঐ তেল চুক্তিও আর থাকবে না। আর আমেরিকার ডলার এর কোন মূল্য থাকবে না। আর ঐ সময় যে সকল দেশ বাংলাদেশের মত কাগজের ডলার রিজার্ভ রেখে ক্যালকুলেটরে স্বর্ণের দাম বের করে গাধার মত মুদ্রা ছাপিয়ে এসেছে তাদের মুদ্রার কোন মূল্য থাকবে না। ঐ তেল চুক্তি বাতিল মানে, ডলার এর আর কোন মূল্য থাকবে না। যেহেতু ডলার এর মূল্য থাকবে না, তাই আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভে থাকা সম্পদেরও (ডলারের) আর কোন মূল্য থাকবে না। তখন ১০০০ টাকার নোট দিয়ে বিড়ি বানিয়ে খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তখন ১০০০ টাকার নোট মানে একটা মূল্যহীন কাগজ। 
-
৩/ এই রকম পরিস্থিতে আমাদের করনীয় কি??
-
এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয় হচ্ছে যাদের কাছে বেশী বেশী ক্যাশ টাকা আছে, আপনারা ক্যাশ টাকার পরিবর্তে স্বর্ণের বার কিনে রাখুন। একমাত্র প্রয়োজনীয় ক্যাশ টাকা ছারা সব টাকা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখুন। ক্যাশ টাকার দরকার হইলে স্বর্ণ বিক্রি করে টাকা তুলে ব্যাবহার করেন। এতে আপনার দুইটি লাভ হবে, টাকার মূল্য চুরির কারনে আপনি পরবর্তীতে আরও বেশী টাকায় স্বর্ণ বিক্রি করতে পাড়বেন। আরেকটি লাভ হচ্ছে, আপনার সম্পদ কেউ বেশী টাকা ও ডলার ছেপে চুরি করতে পাড়বে না। আর ডলার এর পতন হলে আপনার সম্পদের কিছুই হবে না। 

লেখক-  Mohammad Ali Ahasan
Powered by Blogger.