মহকাশের বিশালতা



মহাকাশের বিশালতা নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। আমরা মহাকাশ সম্পর্কে কতটুকু জানি?।আসলে আমরা মহাকাশ সম্পর্কে খুবই কমই জানি।আমি মহকাশের বিশালতা সম্পর্কে বুঝানোর আগে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে একটু বলি।আমাদের সৌরজগত বা সুর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একজন সদস্য। আমাদের সৌরজগতের আয়তন ১২২ আস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট বা ১৮৩০০ মিলিয়ন কিলোমিটার [১ আস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট= ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার ]।এখন আপনার মনে হতে পারে আমাদের সৌরজগতটা কত বড়?!!। আসলে এই সৌরজগত মহাকাশের তুলনায় একটা বালির ১০০০০০ ভাগের ১ ভাগও না।আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আয়তন ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। [আলো এক বছরে যে পরিমান পথ অতিক্রম করে তাকে ১ আলোকবর্ষ বলে।আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩০০০০০ কিঃমিঃ]।



সুতরাং আমাদের মহাকাশযান যদি আলোর গতিতেও চলতে পারে এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি পাড়ি দিতে আমাদের ১ লক্ষ বছর সময় লাগবে?।কিন্তু আমরা কি কখনো আলোর গতিতে চলতে পারব?। মানব সৃষ্ট সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রমকারী মহাকাশযান হচ্ছে ভায়েজার -১।বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে ১৪৫ আস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট দুরে রয়েছে। বা ২১.৭ বিলিয়ন কি মি দুরে রয়েছে। এটির গতি সর্বোচ্চ ৭১ হাজার কিলোমিটার।এবং ডিপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে।এই গতিতে যদি আমাদের পাশের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি যেটি পৃথিবী থেকে ৪.২২ আলোকবর্ষ দূরে, ঘুরে আসতে সময় লাগতে পারে ৫ হাজার বছর।বর্তমান মানুষের তৈরী করা সবচেয়ে দ্রুতগতির মহাকাশ যান হচ্ছে পার্কার সোলার প্রুভ।

যেটি ঘন্টায় ৬ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার তারও বেশি বেগে ছুটতে পারে।কখনো কখনো এটি সেকেন্ডে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। .তার পরেও এটি লাইট ইয়ার স্পিডের তুলনায় খুবই লগন্য।তবে নাসার ভবিষ্যৎ স্পেসক্রফটের নকশায় স্পিড দেখানো হয়েছে ১০ লাখ+ কিলোমিটার। যেগুলো কিনা ২০৩০ সালের দিকে মিশনে আসতে পারে।আমাদের মহাকাশের বয়স ১৪ বিলিয়ন বছর। প্ল্যাঙ্ক স্পেস মিশনে ২০১৩ সালে মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরনো আলোটির নিখুঁত একটি নকশা তৈরি করেছিল।এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি যে, মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর কিংবা তার বেশী।দূরত্বের সাথে আলোর বেগ এর সম্পর্কের দরুণ আমরা বলতে পারি যে,আমাদের বিজ্ঞানীগণ ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের যেকোনো অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।



কিন্তু এটি শুধু আমাদের একটি সাধারণ জ্ঞান মাত্র। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রায় ৪০০ বিলিয়নের মত নক্ষত্র রয়েছে।মিল্কিওয়ের মধ্য স্থান হতে আমাদের সৌর জগতের দূরত্ব ২৫ হাজার আলোকবর্ষ। যেখানে আমরা একটি সোলার সিস্টেম পাড়ি দিতে হিমসিম খাচ্ছি সেখানে ৪০০ বিলিয়ন সোলার সিস্টেম?। আমি শুধু একটা গ্যালাক্সির কথা বললাম। অনেক গুলো গ্যালাক্সি নিয়ে আবার গ্যালাক্সি ক্লাস্টার গঠিত হয়। একটি ক্লাস্টার এর মধ্যে ১২ থেকে ১ হাজার গ্যালাক্সি থাকতে পারে। একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার এর আয়তন প্রায় ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি লোকাল গ্রুপ গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে অবস্থিত।সুপার ক্লাস্টার হল ঐ সকল গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের সমন্বয়ে গঠিত আরেকটি মহাজগতিক কাঠামো। এখানে মহাজগতিক কাঠামো বলতে একেকটি অঞ্চল বুঝনো হয়েছে।আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যে সুপারক্লাস্টারের অন্তর্ভূক্ত তার নাম ল্যানিয়াকিয়া।

 এটির মোট বিস্তৃতি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।বর্তমানে আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে সুপারক্লাস্টারের সংখ্যা প্রায় ১০.২ মিলিয়ন।যদি মহাবিশ্বের ইনফ্লেশন কিংবা স্ফীতি একটি ধ্রুব গতিতে ঘটে থাকে, তবে ওই বিন্দু আজ পৃথিবী হতে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাই যদি পৃথিবীকে কেন্দ্র হিসেবে ধরি তবে মহাবিশ্বের সমগ্র ব্যাস দাঁড়ায় প্রায় ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ।কিন্তু এটা অনুমান। মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত দেখতে না পাওয়ার মানে এই নয় যে, আমরাই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে রয়েছি।তাই বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন উপায়ে মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি পরিমাপের চেষ্টা চালিয়েছেন।বর্তমান মহাবিশ্বের ব্যাস আমাদের পর্যবেক্ষণীয় মহাবিশ্বের চেয়ে অন্তত ২৫০ গুন বেশী এবং তা অন্তত ৭ ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে রয়েছে।আসলে এটিই সবই অনুমান।
আমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে ১০০ ভাগের ১ ভাগরেও কম জানি।হয়ত ২ ভাগ সম্পর্কে আমরা ধারণা করতে পারি।এবং বাকি ৯৮ ভাগ সম্পর্কে আমরা ধারণাও করতে পারি না।এটায় হল বাস্তবিক আমাদের জানার পরিধি।
Powered by Blogger.