এয়ারক্রাফট বোনইয়ার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত (বিশেষ পোষ্ট)
একটি প্লেন যখন আর একদমই ব্যবহার করা যায় না তখন বোনইয়ার্ডে যায়। বোনইয়ার্ড সাধারণত মরুভূমিতে বানানো হয় কারণ প্রচুর জায়গা ছাড়া সেখানে এই সুবিধা পাওয়া সহজ হয়। মরুভূমির শুষ্ক আবহাওয়ায় প্লেনগুলো এবং পার্টসগুলো যত সময় অন্য কিছু করা না হচ্ছে তত সময় সংরক্ষণ করা সহজ হয়।
প্লেনগুলো সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস না করে এভাবে এখানে নিয়ে কেন রাখা হয়? আসলে পুরা প্লেনটা একসঙ্গে রিসাইকেল করা যায় না একটা প্লেনের ভেতর নানা ধরনের পদার্থ থাকে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, প্লাস্টিক, নাইলন, মেশিনারিজ, তেল, তার, আরো অনেক কিছু। আমাদের মতো দেশে যেখানে হয়তো ৫ বছরে একটা প্লেন রিটায়ার করে সেটা রিসাইকেল করা সহজ এবং আলাদা জায়গার দরকার পড়ে না কিন্তু যাদের একসঙ্গে অনেক প্লেন রিটায়ার করে তাদের আলাদা জায়গা দরকার পড়ে। কারণ একটিভ প্লেনের যে হ্যাঙ্গার সেখানে রিটায়ারগুলো রাখলে একটিভগুলো কোথায় রাখবে। ফলে আসল কথা হলো রিটায়ার প্লেন রাখার জায়গাই হলো বোনইয়ার্ড।
এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বোনইয়ার্ডগুলোর হিসাবও ঠিকমতো নাই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বোনইয়ার্ডে প্লেনগুলো খুব সুন্দর করে রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর ১০টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় ১টি বোনইয়ার্ড আছে যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত।
প্লেনগুলো রিটায়ার করার পর নির্দিষ্ট টাইপের প্লেনকে নির্দিষ্ট বোনইয়ার্ডে যেতে হয়। কারণ একেক ধরনের প্লেন ডিসএসেম্বেল এবং রিসাইকেল করতে একেক ধরনের টেকনিক্যাল ফ্যাসিলিটি দরকার পড়ে। একেক বোনইয়ার্ডে একেক টাইপের প্লেন ডিসএসেম্বেল এবং রিসাইকেলের ফ্যাসিলিটি থাকে সেই অনুযায়ী ইড়হবুধৎফ বেছে নিতে হয়। ইচ্ছা মতো একটিতে গেলেই হয় না। যেমন কমার্শিয়াল প্লেনের জন্য ক্যালিফোর্নিয়াতে গড়লধাব, ভ্যারাইটিজ মিলিটারি প্লেন বিশেষ করে বি-৫২ বম্বার বিমানের জন্য এরিজোনাতে অগঅজ-এ। টেক্সাসের অনরষবহব তে শুধুই ফাইটার প্লেন।
বোনইয়ার্ডে প্লেনগুলো যখন আসে তার চারটা উদ্দেশ্য থাকে-
১. রিপিয়ার: বড় রকম রিপিয়ার, মডিফিকেশন করা হবে, অপ্রয়োজনীয় অংশ খুলে ফেলা হবে বা পাসেঞ্জার প্লেনকে কার্গো প্লেনে রূপান্তর করা হবে তার জন্য জায়গা দরকার তাই বোনইয়ার্ডের জায়গা ভাড়া নেয়া হয়।
২. সর্ট টাইম স্টোরেজ: এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন প্লেনটি রাখার জায়গা নাই এয়ারপোর্টের হাঙ্গারে রাখতে বেশি খরচ এখানে রাখতে কম খরচ তাই এখানে সল্প সময়ের জন্য রাখা হয়।
যেমন হয়েছিল ৯/১১ এরপর যখন এয়ারলাইন ব্যবসায় প্রচুর ভাটা চলছিল তখন প্রচুর পরিমাণ প্লেন বোনইয়ার্ডে পাঠানো হয়। তখন এমনো দেখা গেছে কোনো এয়ারলাইন্সের সব প্লেন বোনইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিন পর ব্যবসা ভালো হলে আবার ইউস হবে এই আশায়। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং কোল্ড অয়্যার শেষ হওয়ার পর পৃথিবীর সব আর্মি দেখে যে তাদের কাছে যে পরিমাণ যুদ্ধবিমান আছে তা দরকার নাই শুধু শুধু খরচ। তখন প্রচুর পরিমাণ প্লেন বোনইয়ার্ডে পাঠানো হয় পরে ব্যবহার হবে বা পরে বিক্রি করে দেয়া হবে এই আশায়। আরিজনার কিংম্যান এয়ারপোর্টের বোনইয়ার্ড থেকে ১৯৪৫ সাল থকে ১৯৪৭-এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৩৪৭০০ প্লেন বিক্রি করা হয় এবং ২৬৯০০ প্লেন রিসাইকেল করা হয়। কখনো কখনো দেখা যায় যে, এই প্লেনটি আকেজো কিন্তু এর কিছু পার্টস ভালো একই ধরনের অন্য সচল প্লেনের পার্টস লাগলে এখান থেকে ব্যবহার করা হবে তাই এটাকে কিছুদিনের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
বিক্রি করে দেয়া সেকেন্ড হ্যান্ড প্লেন ডেলিভারি নেয়ার আগ পর্যন্তও এখানে রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে কিছু এফ-১৬ বিক্রি করেছিল সেগুলো ডেলিভারি দেয়ার আগে এখানে রাখা ছিল পরবর্তীতে সেই বিক্রি বাতিল করা হয় তখন আবার তারা সেই প্লেনগুলো ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরা ব্যবহার করে।
৩. লং টাইম স্টোরেজ: এ ক্ষেত্রে প্লেনটিকে দীর্ঘ দিনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। প্লেনের পার্টসের জন্য অথবা প্রদর্শনী বা প্রদর্শনী ফ্লাইটে ব্যবহার করার জন্য।
সর্ট টাইম এবং লং টাইম উভয় প্রকার সংরক্ষণের জন্য যে প্লেনগুলো আসে সেগুলোর ওপর একধরনের সাদা স্প্রে করা হয় যা প্লেনের গায়ের ওপর পাতলা প্লাস্টিকের বা ভিনেলের আবরণ সৃষ্টি করে। এই আবরণ প্লেনগুলোকে ধুলাবালি রোদ এবং তাপ থেকে রক্ষা করে।