স্পেশাল ফোরস অপারেশন : অপারেশন মায়ানমার
রাত ১২ টা, বাতাস কেটে গঙ্গা ফড়িঙের মত উড়ে চলেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এএন-৩২ ট্রান্সপোর্ট বিমান। মাটি থেকে ৪০০ মিটার উপর দিয়ে উড়ে চলেছে বিমানটি। শত্রুর রাডার এড়ানোর অনন্য এক কৌশল এটি। মধ্যরাতের এ স্পেশাল ফ্লাইটের যাত্রী হিসেবে রয়েছে একটি মাত্র প্রানী। তার নাম ক্যাপ্টেন হাসিব রাজ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স ১-প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একজন সদস্য। হালকা অস্রসশ্রে সজ্জিত সে। গায়ে বিশেষ ধরনের ক্যামোফ্লাজ, মুখে কালিমাখানোর কারনে দেখতে ভয়ংকর দানবের মত লাগছে। বারবার হাত ঘড়িটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আচমকা শব্দে জ্বলে উঠলো বিমানের হলুদ বাতি। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রাব্বি বিমানের নাক সোজা করে বিমানটিকে আরো একটু উপরে তুলতে লাগলো। হেডফোনে জানান দিলো জাম্পের আর বেশি দেরি নেই। হেডফোনেই বললো - ঈগল আর ইউ রেডি ? প্রতিউত্তরে রাজ জবাব দিল, ইয়েস, আই এম রেডি ফর যাম্প। শ, শ, শ শব্দে খুলে গেল এএন-৩২ এর দরজা। রাজ উঠে গিয়ে দরজার সামনে দারিয়ে পরলো, শেষবারের মত তার নাইন এমএম পিস্তল, এমপি-৫ এসএমজি সহ সব চেক করে নিলো। কয়েক সেকেন্ড পর পিপপিপপিপ আওয়াজে জ্বলে উঠলো সবুজ বাতি। আবারো হেডফোন থেকে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রাব্বির কন্ঠ। ঈগল রেডি ? জবাবে রাজ, ইয়েস, আই এম রেডি। গো গো গো……. কমান্ড শোনা মাত্রই অজানার উদ্দেশ্যে ঝাপ দিল রাজ। রাজ দক্ষ ফ্রিফলার হলেও উচ্চতা কম হওয়ায় সাথে সাথেই প্যারাসুট খুলে দেয়। আপাদত কাজ নেই ভেবে বাতাশে গা ভাসিয়ে দিয়ে মুক্ত পাখির মত উড়ে যাচ্ছে সে। সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়া তাকে স্বাগত জানায়। খেয়াল করলো, চাঁদ মামাটা একদম আকাশের মাঝখানে অবস্থান করছে। চাঁদের আলোয় ড্রপ জোন দেখতে পাচ্ছে। আর একটু গ্লাইড করতে হবে তার, দমকা বাতাশের কারনে কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে প্যারাসুট নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। বাতাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে কয়েক মিনিটের মধ্যে উপকূলের খুব কাজে ল্যান্ড করে সে। চোখের পলকে সব গুছিয়ে নিলো। প্যারাসুটটা লুকিয়ে ফেললো বালির ভেতর।
নাইন এম এম পিস্তলটা আরো একবার চেক করে নিলো রাজ। গুলি, সেফটি ক্যাচ, সাইলেন্সার সব ঠিক আছে। জ্যাকেটের নিচে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো তার প্রিয় এস এম জি টা। জার্মানির তৈরি এমপি-৫, ফুল অটোম্যাট সাব মেশিনগান। আড়াইশো মিটারের মধ্যে আসা শত্রুকে নিমিষেই গুড়িয়ে দিতে সক্ষম। গুলি ভর্তি ছয়টি ম্যাগজিন আটকে নিলো শরীরে, দুইটি উরুর কাছে আর দুটি বুকে। ছয় ইঞ্চি লম্বা কমান্ডো নাইফটা চলান করে দিলো জ্যাকেটের কলারে। ঠোটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি ফুটে উঠলো তার। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অজস্র চিন্তা। একটু আগে আকাশ থেকে গ্লাইড করতে করতে নামলো, গা বেয়ে ঘাম ঝাড়ছে তার। কিন্ত ঠান্ডা মাথায় তা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা আছে রাজের। সে শিখেছে কিভাবে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হয়। আজকের মিশনটা খুবই স্পর্শকাতর। সরাসরি হেড কোয়াটার হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ মিশনটার উপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কয়েক বছর ধরে ঢোকা মাদক দেশের যুবসমাজ ধংশ করে দিচ্ছে, সীমান্তে বিজিবি মাদক আটক করলেও আসল গড ফাদারদের কাছে এখনো পৌঁছোনো যায়নি। তারা বিকল্প কোন পথ বের করে মাদক পাচার অব্যাহত রেখেছে। আগে পরে একাধিক বার মিয়ানমার সরকারের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে মিটিং হয়েছে, মাদক বিরোধী অপারেশন পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্জন্ত কোন অগ্রগতি নেই। কিন্ত এবার হয়তো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কতৃপক্ষ। দেরিতে হলেও আমরা বুঝতে পেরেছি, বানরের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে লাভ হবে না। নিজেদের সমস্যার সবাধান নিজেরাই করতে হবে। হাই কমান্ডের অর্ডার। সেরাদের সেরা কমান্ডোকে নির্বাচন করা হয়। ব্লেক অপস মিশনের জন্য দুই মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় রাজকে। কয়েক ঘন্টা যাবত ব্রিফ করা হয় তার মিশন সম্পর্কে। যদিও রাজ একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো। বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর টপ সিক্রেট ইউনিটের হয়ে কাজ করে। এটি এমন এক ইউনিট যার সদস্যরা অফিশিয়ালি ডেড। পরিবার পরিজনদের সাথে দেখা করার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তারা দেশের জন্য সব বিসর্জন দিয়েছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গুলো আর দেখা হলো না, দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য সবকিছুই সেক্রিফাই করলো।
স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে রাজ ঘুরেছে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। ছুটে বেড়িয়েছে বনে জঙ্গলে, কখনো ডিঙ্গিয়েছে বরফের পাহার আবার কখনো বা কাটিয়েছে উত্তাল সমুদ্রে। দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে প্রতিমুহূর্তেই। বিদেশে নানান সফল মিশনে তার অবদান উল্লেখ করার মত। এই তো বছর দুয়েক আগে ভারতের মুম্বাইয়ে, মুম্বাই পুলিশের নাকের ডগায় থাকা তিনটা টা জঙ্গি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে এলো। উনিশ জনকে সেখানেই খতম করে সে, যারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকা সেনানিবাসে জঙ্গি হামলার। অপারেশন কিল জোন নামের মিশনটা এখনো পর্জন্ত ডিজিএফআই এর টপ সিক্রেট মিশন গুলোর একটা। কিন্ত এবারের মিশনটা ভিন্ন। এশিয়ার ভেতর হলেও স্থান ও ভুখন্ড একদমই আলাদা।…….
.
উত্তেজনায় ঘাম হচ্ছে রাজের। কিন্ত তা সামলে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে। রাজ জানে এধরনের পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়। মিশনের আদ্যপ্রান্ত দেখা শেষ, এবার পরিকল্পনা মোতাবেক নিজের ফিরে যাবার ছক কষছে। সে জানে ফেরার সময় কয়েক কিলোমিটার সাতার কাটতে হবে। কিন্ত সে ভাবছে অন্য কিছু। পরিস্থিতি পালটে যেতে পারে যেকোন সময়। এমন জায়গায় একা একটা মিশন ভয়ংকর রুপ ধারন করতে পারে। শত্রুর পেতে রাখা ফাঁদ কিংবা ল্যান্ড মাইনের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে সে। এছারা শত্রুর হাতে ধরা খাবার ভয়ও আছে। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর কুকুর গুলো কাছেপিঠেই কোথাও থাকতে পারে। যাই হোক, বিপদ যেই রুপেই আসুম সময় মত বিজিপির একটা স্পিড বোট ঝেড়ে দিতে পারলেই হলো।……..
.
রাজ এখন মিয়ানমারের সীমান্তের খুব কাছে অবস্থান করছে। পেছনে সমুদ্র, সমুদ্রের শীতল হাওয়া তাকে আরো উত্তেজিত করে তুলছে। এখান থেকে সামান্য পূর্ব দিকে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গলের মাঝে মিয়ানমারের বিজিপি ক্যাম্প। এর আরেকটু সামনেই মাদকের ডিলারদের বড় আস্তানা। একটা কারখানাও আছে ওখানে। অন্যান্য অঞ্চল থেকে পপি ফুলের রস এখানে এনে কেমিক্যাল মিশিয়ে হেরোইনে পরিণত করা হয়। ইয়াবার মূল চালাটাও এখান থেকে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলোর বেশিরভাগ এমনেতেই অরক্ষিত। বিওপি তো দুরের কথা কোন কাঁটাতারের বেড়া পর্জন্ত নেই। সেই সুযোগে কিছু বিচ্ছিন্যতাবাদী সংঘটন বাংলাদেশের ভূমি ব্যাবহার করছে মাদক উতপাদনে। পাহারি ঝড়ির ফাঁকেফাঁকেই চাষ হচ্ছে পপি ফুলের। কয়েকটা গ্রুপ এক সঙ্গে কাজ করলেও গ্রুপ গুলো পরিচালিত হচ্ছে একজন বড় মাপের ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়ার ইশারায়। তার নাম অংসাংলে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ও সফল ড্রাগ ডিলার। ভারত- বাংলাদেশ- থাইল্যান্ড- মিয়ানমারের ইয়াবা চলানের গড ফাদারও বলা চলে তাকে। রাজের খুব ভাল করেই জানা আছে তাকে। তাকে খুন করতে মাস ছয়েক আগে রাজ ভারতের ‘র’ এর সঙ্গে যৌথ অপারেশনে গিয়েছিল থাইল্যান্ডে। কিন্ত 'র’ এর সিনিয়র এজেন্ট প্রদীপ ঘোষের ছোট একটু ভুলের কারনে মিশনটা মাঝ পথেই বাতিল করতে হয়। অনেকটা তীরে এসে তরী ডুবার অবস্থা। মরতে মরতেও বেঁচে যান তারা। সময়মত ডাইভ দিতে না পারলে গাড়ি সহই সবাই ব্লাস্ট হয়ে যেত। সে যাত্রায় বেঁচে যায় অংসাংলে নিজেও। অল্পের জন্য বেঁচে যায় উভয় পক্ষ। এবার আর রক্ষে নেই। রাজ একা, কোন চাপ নেই, কোন দায়ভার ও নেই। তার কাছে এসাইনমেন্ট এসেছে যা করার তাকেই করতে হবে।…….
.
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাটছে রাজ। হাটছে বলে ভুল হবে, মধ্যগতিতে দৌরোচ্ছে। চিতার মত গুনেগুনে পা ফেলছে। কোন ভাবেই এ মুহুর্তে শত্রুর সামনে পরতে চায়না সে। হাত ঘড়ির দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। এখন রাত প্রায় একটা। নাইট ভিশন গগলস পরায় দেখতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না। বুকে থাকা পকেট থেকে মেপ বের করে শেষবারের মত দেখে নিলো। রাজের প্রধান টার্গেট মাদকের গড ফাদার অংসাংলে, পরে সম্ভব হলে বাকিদেরও খতম করবে। আক্রান্ত হলে নিজের আত্নরক্ষার জন্য পেছনে থাকা ক্যাম্পের বিজিপি নামক একটা প্রেনীকেও জিবিত রাখতে চায়না সে। আপাদত অংসাংলের দিকে মনোনিবেশ করলো রাজ। রিষ্ট ওয়াচে দুরুত্ব দেখলো। ইতিমধ্যেই চার কিলোমিটার হেটেছে, পাহাড়ি জংলি পথ চার কিলোমিটারই চল্লিশ কিলোমিটারের মত মনে হল। সাবধানে এগুচ্ছে রাজ। বিজিপির ক্যাম্প সামনেই। খুব বেশি হলে ৭০-৮০ মিটারের মধ্যে। ক্যাম্পটি পেরিয়ে যেতে হলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে রাজকে। আরো কয়েক কদম হেটে গেল, ক্যাম্পের ফ্লাড লাইটের আলোর দেখলো সামনে কজন বিজিপি সদস্য প্রহরায় দারিয়ে, ঠোটে সিগারেট, বাতাশে ভেসে আসছে গাঁজার তীব্র গন্ধ। মাটিতে শুয়ে ক্রল করতে লাগলো রাজ। মটিতে পরে থাকা শুকনো পাতা গুলো শিশিরে ভিজে গেছে এজন্য পাতা ভাঙ্গার মরমর শব্দ হচ্ছে না, লক্ষন ভাল ভাবলো রাজ। ক্রল করতে করতে খুব সাবধানে ক্যাম্প পার হয়। সাবধানতার খাতিরে পেছনে তাকালো, দেখলো কয়েকটা কুকুর ঝিম মেরে আছে। বাতাশ বিপরীত দিক থেকে বওয়ায় শত্রুর অস্তিত্ব এখনো টের পায়নি কুকুর গুলো। এবার আরো সাবধানে হাটছে। ৫০ মিটার দুরেই সেই ফেক্টরি। চার কোনার ৩ টে ঘর, প্রতিটি ঘরের পাশেই ২ টি করে বাতি। রাজ দুর থেকেই সামনে কয়েক জন সশস্র প্রহরী। কারো পরনে লুঙ্গি আবার কারো জিন্স ল্যান্ট। বুঝায় যাচ্ছে কড়া পাহারায় আছে ফেক্টরিটি।
নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো রাজ। নাইন এম এম পিস্তলটা হাতে নিয়ে একটা ঘরের পাশে দারালো। বাতি গুলো বিপরীতমুখী হওয়ায় আবছা আলোয়ও তাকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। বিড়ালের মত নরম পায়ে আরেকটু এগিয়ে গেল। একজন প্রহরী চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছে। দুজনের দুরুত্ব চার থেকে চয় মিটার। গুলি করলে করা যাবে, কিন্ত একটু রিস্ক হয়ে যায়, সাইলেন্সারের মিষ্টি আওয়াজ ও বিপদ দেকে আনতে পারে। রাজ ভাবলো মশা মারতে কামানের প্রয়োজন নেই। ক্রাভ মাগাতে মাষ্টার সে। লম্বা শ্বাস নিয়ে কমান্ডো নাইফটা বের করলো। চুপিসারে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পরলো তার উপর। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘাড় থেকে মন্ডুটা আলাদা করে দিল রাজ। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে লাসটা খর দিয়ে ঢেকে দিলো সে। কেও কিছু টের পায়নি। এবার বাতির আলোয় আসলো রাজ, নিজের ছায়া নিজেকেই যেন ফলো করছে, চাকু হাতে এগিয়ে চললো বিশালদেহী ছায়া মানবটি। লুঙ্গি পরা ৩ জন প্রহরী মিটার দশেক দুরে অবস্থান করছে, সাইলেন্সার পেঁচানো নাইন এম এমটা কক করলো সে। এক সেকেন্ডের মাঝে ঝেড়ে দিলো তিনটা প্রানীকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম সেরা শার্প শুটার সে। মুচকি হেঁসে নিজের স্কিলের নিজেই প্রশংসা করলো। এবার গড ফাদার অংসাংলে কে খুঁজার পালা। সে জানে অংসাংলে এখানেই আছে। করিম আলী তো তাই বলেছিল। করিম আলী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী, মিয়ানমারের অত্যাচার সইতে না পেরে বউ বাচ্চা নিয়ে এখন টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। বিজিবির বিশ্বস্ত সোর্স সে। ইমরান আলী বলেছিল চারটে ঘরের মধ্যে একটু ছোট ঘরেই গড ফাদার অংসাংলে রাতে থাকে, তার সাথে দুজন বডি গার্ডও। খুব সাবধানে মাঝখানে থাকা ছোট ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো রাজ। বাহিরে কোন প্রহরীকেই অবশিষ্ট রাখলো না বিদায় পেছন থেকে আক্রান্ত হবার চিন্তা নেই আপাদত। দরজা ভেতর থেকে লাগানো। তার বুকের পকেটে রাখা মাল্টি পারপাস নাইফটা ব্যাবহার করে চোরের মত ঘরের লক খুলে নিল। নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করলো, ছোট ড্রিম লাইটের আলোয় ঘরের বেতরটা দেখে নিল। অগোছালো ঘরটার মাঝে একটি খাট পাতা, ওখানেই শুয়ে আছে একজন। এগিয়ে গেল রাজ। মাথা নুয়িয়ে দেখলো, উত্তেজনা তুঙ্গে। যার জন্য এখানে আসা তাকে পেয়ে খুসিতে আত্যহারা সে। কোনমতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। এবার পিঠে লুকিয়ে রাখা তার এমপি-৫ এসএমজিটা টা বের করলো। সাইলেন্সার লাগানো এসএমজিটা তাক করলো অংসাংলের দিকে, ধীর্ঘ একটা শ্বাস নিলো, পরমুহুর্তেই ট্রিগার চেপে ধরলো। কেঁপে উঠলো খাটো-নাদোসনোদোস দেহটা। ঝাজড়া করে দিলো গড ফাদার অংসাংলের মাথা থেকে শুরু করে মুখমণ্ডল। রাজের ঠোটের কোনোয় মৃদু পৈষাচিক হাঁসি ফুটে উঠলো, 'র’ যা পারেনি আজ সে তা করে দেখিয়েছে। ডিজিএফআইয়ের সাফল্যের পাল্লাটা আরো ভারি হলো হা হা হা..... কিন্ত হঠাতই পেছন থেকে দুজন চিৎকার করে তার উপর ঝাপিয়ে পরলো। রাজের ষষ্ঠ ইন্দিয় সজাগ হয়ে উঠলো। পেছনে শুয়ে থাকা গড ফাদারের দুজন বডি গার্ডের কথা ভুলে গিয়েছিল রাজ। সাইলেন্সারের মিষ্টি আওয়াজে হয়তো ঘুম ভেঙ্গে যায় গার্ড গুলোর। তুমুল ধস্তাধস্তি চলছে তাদের মধ্যে। একজন রাজের নাকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে আরেকজন পেছন থেকে তার ঘার গলা চেপে ধরে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে রাজের। এক হাতে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলেও অন্য হাতটা ভিন্ন কিছু করতে যাচ্ছে। বাঁ হাতে কোমর থেকে কমান্ডো নাইফটা বের করে একজনের গলায় আরেক জনের চোখ বরাবর চালান করে দিল। রক্তের ফোয়ারা পাশের দেয়ালে আছড়ে পরলো। সাথে সাথে মাটিতে লটিয়ে পরলো দুজন। মারা গেলেক বডি গার্ড দুটির শরীর এখনো কাঁপছে। চুপচাপ ঘরটা থেকে বেরিয়ে এল রাজ, মিশন কম্পলিট।
এবার ফেরার পথ ধরতে হতে।
কেও কিছু টের পায়নি এটা ভেবে জঙ্গলে ঢুকে গেলো আবারো। ভুতের মত নিঃশব্দে ক্রল করতে লাগলো। ফিরতি পথে সামনেই বিজিপির ক্যাম্পটি। ফ্লাড লাইটের আলোয় সে দেখলো প্রহরী কুকুর ও তাদের মালিক গুলো নেই। খানিকের জন্য অবাক হলো রাজ। কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে তার। রাজ আরো সাবধান হল। কিছুর জন্য চমকে উঠে থেমে গেলো সে। চার জোরা পায়ের নড়াচড়া কানে আসছে। প্রতিটি সেকেন্ড পার হচ্ছে আর মনে হচ্ছে আওয়াজ যেন আরো কাছে চলে আসছে। আচমকা গেছো ব্যাঙের মত ক্ষিপ্র গতিতে ডাইভ দিলো রাজ, আর দেখলো তার বাম কাঁধের পাশ দিয়ে দুইটা চাকু ছুটে গেল। মুহুর্তেই রাজের অভিজ্ঞতা কাজে দিলো। তাকে না মেরে বন্দি করার পরিকল্পনা। এ না হলে হাতে এম-১৬ রেখে চাকু চালাবে কোন দুঃখে!…… কাঁধে রাখা এসএমজি আর কোমরে গোঁজা পিস্তলের চিন্তা বাদ দিয়ে সে আর এক সেকেন্ড সময় ও নষ্ট করলো না। ঝাপিয়ে পরলো দুজনের উপর। হাতে থাকা কমান্ডো নাইফ আর মাল্টি পারপাস নাইফটা বসিয়ে দিলো দুজনের গলায়। আবারো আর্তনাদে কেঁপে উঠলো মিয়ানমারের পাহাড়ি জঙ্গল মাটিতে লটিয়ে পরলো আরো দুজন। পেছন থেকে কেও আসছে বুঝতে পারলো। ঘুরলে গেলে সেকেন্ডের এক ভগ্নাংশ সময় নষ্ট হয়ে যাবেবে। এজন্য রাজ পেছনে না তাকিয়েই হাতে থাকা কমান্ডো নাইফটা সেদিকে ছোঁড়ে মারলো। মাথাটা ঘুরিয়ে দেখতে পেল তৃতীয় জন মাটিতে লটিয়ে পরছে আর দুচোখের মাঝখানে চাকুটা আটকে আছে। একটু নুয়ে চাকুটা নিয়ে নিলো। এরা কারা হতে পারে! বিজিপি নাকি অন্য কোন পক্ষ! এখন এসব ভাবার সময় নেই, পালাতে হবে। কিন্ত এবার পেছনে ঘুরতেই কেও একজন রাইফেলের বাট দিয়ে রাজের মাথায় সজোরে আঘাত করে। প্রচণ্ড আঘাতে চোখ থেকে নাইট ভিশন গগলসটা খুলে পরে যায়। রাজ নেমে আসেসে এক অন্ধকার রাজ্যে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে, পৃথীবিটা তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, দারানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতেই আরো একটা বারি পরলো তার মাথায়। তার কাঁধ থেকে নিয়ে নেয়া হল এসএমজিটা। প্রানপনে চেষ্টা করছে পিস্তলটা বের করতে। ৩য় আঘাতেই জ্ঞান হারালো রাজ। হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মন্ডু শহর থেকে একটু দুরে জঙ্গলের ভেতর থাকা একটা ক্যাম্পের সেলে নিয়ে যাওয়া হল। বন্দি হয় ক্যাপ্টেন হাসিব রাজ।…………
এক দিন পর…….
আরকান- মিয়ানমার। জঙ্গলের ভেতর অবস্থিত অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের বাইরে প্রহরারত গার্ডগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছে কেও একজন। দেখে মনে হচ্ছে কোন অভিশপ্ত ছায়া মানব। যেন ধ্বংসের জন্যই তার জন্ম। চিতার মত শিকারী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে গার্ড গুলোর দিকে। যেন একটি চিতা অজস্র সিকারের মাঝে কোনটাকে আগে সিকার করবে তা ঠিক করছে।
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। সময় পেরিয়া যাচ্ছে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। ক্যাম্পের আশেপাশে থাকা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কুকুরগুলো এদিক ওদিক ঘুরেবেড়াচ্ছে সাথে তাদের মালিক গুলো। তবে গায়ে কাঁদা মাখায় মুক্তাদির শুভকে সনাক্ত করতে ব্যার্থ তারা। মুক্তাদির শুভর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কুকুর গুলোকে ফাঁকি দেওয়া এবং ধরা না পরে সেলের ভেতর ঢুকে পরা। কাজ গুলো এখনই করতে হবে নয়তো অসময়ে মিশন গোল্লায় যেতে পারে। মাথা খাটাচ্ছে সে। মুক্তাদির শুভ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকশ সদস্যদের একজন। পদবিতে একজন মেজর। রাজের মত সেও বাংলাদেশ ১-প্যারা কমান্ডোর অধীনে সে কমান্ডো কোর্স সম্পন্ন করে। এবং ৫ বছর যাবত আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স ও রাশিয়া থেকে বিশেষ ইন্টেলিজেন্স ট্রেনিং নেয়। বর্তমানে ডিজিএফআই এর এজেন্ট হিসেবে কর্মরত। ব্রাজিলে 'র' এজেন্টকে বিষ পান করিয়ে হত্যা ও ইরানে মোসাদ এজেন্টকে হত্যার মত ডজন খানেক রেকর্ড আছে তার। কাজ যত কঠিনই হোক না কেন সে সব কিছু সামলে নেয়। চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালোবাসে শুভ।
সে বিশ্বাস করে লাইটাই একটা চ্যালেঞ্জ। ভাল মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ।
হেড কোয়াটার থেকে খবর আসে মিয়ানমারে বাংলাদেশের একজন স্পাইকে আটক করেছে, এবং গোপন আস্তানায় আটকে রেখেছে। আটক অফিসার ও তার চেনা। মুক্তাদির শুভর দুই বছর জুনিয়র হলেও ফ্রান্সে এক সাথে ট্রেনিং করেছে ও পূর্ব পরিচিত। সে জানতে পারে রাজ মাদক বিরোধী একটা অপারেশনে বিজিপির কাছে ধরা খায় এবং বন্দি হয়। স্পাই হওয়ায় তার উপর কঠোর নির্যাতন চালানো হবে তাই স্বাভাবিক। শুভ জানে মেরে ফেললেও রাজের মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পারবে না বার্মিজরা। যত দ্রুত সম্ভব তাকে উদ্ধার করতে হবে। এ ধরনের অপারেশনে সেরাদের সেরা হিসেবেই তাকে কাজ করতে হয়েছে। হাই রিস্ক মিশনে কোন ফাটল থাকা চাইনা।
ঘড়িতে রাত ১ টা বেজে ৩ মিনিট। ঘন্টা তিনেক হল মুক্তাদির নাফ নদী পারি দিয়ে জঙ্গলে তাদের উপর নজর রাখছে। কিছুক্ষণ আগেই এলাকাটা রেকি করে আসলো সে। ম্যাপ দেখা শেষ, আক্রমন ছকও প্রস্তুত। যা করার বন্দীকে নিয়ে যাওয়ার আগেই করতে হবে।
উঠে বসলো মুক্তাদির শুভ। শেষবারের মতো থারমাল স্কোপটা হাতে তুলে নিলো এবং চারপাশটা ভাল করে দেখে নিলো। জঙ্গলের ধারেই সেলটা। এর মিটার খানেক দুরে দুটা ওয়াচ টাওয়ার। প্রত্যেক টাওয়ারে একজন করে সশস্ত্র প্রহরী প্রহরারত। কাছে কজন দারিয়ে আছে, এর একটু দুরে কুকুর ও তাদের মালিক গুলো পালা করে ত্রিশ সেকেন্ড সময় ব্যবধান রেখে আসছে আর যাচ্ছে। মুক্তাদিরের মুভমেন্টের সময় মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড। এর পরেই কুকুর গুলো আসবে আবারব চলে যাবে। বুকে গুঁজে রাখা কমান্ডো নাইফটা বের করে হাতে নিলো সে। চাঁদের হালকা আলোয় ছইঞ্চি চাকুটা চকচক করছে। পড়নে তার জলপাই রঙের ক্যামোফ্লাজটা আশপাশের সঙ্গে ভালই মানিয়ে নিয়েছে। কাঁদা মাখায় তাকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। সামনে নিজের প্রথম টার্গেটে মনস্থির করলো মুক্তাদির।
নিঃশব্দে ভূতের মতো ক্রল করতে করতে হাজির হলো প্রথম গার্ডের পেছনে। উঠে দাড়ালো মুক্তাদির শুভ। তার বাম হাতে গার্ডের মুখে চেপে ধরলো। মুহুর্তের মাঝে কমান্ডো নাইফের টানে কন্ঠনালী আলাদা হয়ে গেল। লাশটাকে ঝোপের আড়ালে ফেলে তার দ্বিতীয় সিকারের দিকে এগুতে শুরু করলো নিঃশব্দে ভুতের মত। নাইফটা বসিয়ে দিল তার গলা বরাবর, খতম করলো হাতে এম-১৬ থাকা দ্বিতীয় প্রহরীকেও। এরপর ঝোপ থেকে বের হয়ে আসলো মুক্তাদির। বিজিপি ক্যাম্পের ল্যাম্প পোস্টের মৃদু আলোতেই দৌড়োতে লাগলো মুক্তাদির শুভ। পাশের দেয়ালে তার ছায়াটাকেও দৌরতে দেখা যাচ্ছে। এক দৌরে পৌছে গেল যেখানে রাজকে আটকে রাখা হয়েছে। কোন রকমে ওয়াচ টাওয়ারের গার্ড গুলোকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। এবার ছায়ার মত সেলের ভেতরে এগিয়ে যাচ্ছে মুক্তাদির শুভ। প্রহরীরা সবাই মাতাল হয়ে ঘুমুচ্ছে। এক পর্যায়ে ঝনঝন ম আওয়াজ করে খুলে গেল সেলের দরজা। সেলের বেতরে থাকা বন্দী, ক্যাপ্টেন রাজের সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
ঈগল ? ফিসফিস করে ডাকলো রাজকে
হুস দিস! অন্ধকারেই মুক্তাদির শুভর মুখে তার নিজের কোডনেম শুনে অবাক হল রাজ। কন্ঠটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে…..
দিস ইস ব্লেক পেন্থার, আম হেয়ার অনলি ফর ইউ। উড ইউ লাইক টু হ্যাভ আ ওয়াক?“
হেল ইয়াহ!, লেটস গো লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো একমাত্র বন্দী লেফটেন্যান্ট রাজ। অয়েইট, কিপ দিস বলে হাতে থাকা সাইলেন্সার লাগানো একটা নাইন এম এম ধরিয়ে দিলো তার হাতে। এবার বাম কোমরের হোলস্টার থেকে নিজের প্রিয় গ্লক-১৭ বের করে সাইলেন্সার পেঁচিয়ে নিলো মুক্তাদির শুভ। গ্লক-১৭ মুক্তাদিরের প্রিয় হাতিয়ারের একটা। পঞ্চাশ মিটারে থাকা শত্রুর খুলি উড়িয়ে দিতে যথেষ্ট।
তারা সেল থেকে বের হবে এমন সময় স্টপ বলে থামার ইঙ্গিত দিল রাজ। কেও একজন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বললো। ততক্ষনে রাজের হুশ ফেলে। সে সেলে একা ছিল না। একটি মেয়েকেও আটকে রাখা হয় এখানে। মেয়েটির নাম জেনিফার। থাইল্যান্ডের এক অভিজাত পরিবারের মেয়ে। বাবা ব্যবসার কাজে মিয়ানমার আসে। সেই সুবাদে জেনিফার সমগ্র মিয়ানমার ঘুরতে বের হয়। কিন্ত একসময় অংসাংলের লোকেরা তাকে অপহরণ করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। বার বার টাকা দিলেও জেনিফারকে ছারেনি তারা। সপ্তাহ খানেক হল এই ক্যাম্পে নিয়ে আসা হলো তাকে। দুদিন পরেই ভারতে পাচার করে দেবে। সেলের ভেতর রাজের সাথে কথা হওয়ার পর সে তার গল্প গুলো বলতে থাকে। তারা সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটিকে তারা উদ্ধার করবে। এমন জায়গায় মানুষ রূপী এসব হায়েনাদের কাছে এমন একটি মেয়েকে ছেরে যাওয়া যায় না, কোন ভাবেই না। হাই কমান্ডের অর্ডার গ্রাহ্য করে হলেও একটা রিস্ক নেওয়াই যাক।
তারা সেল থেকে বের হবে এমন সময় বেল বেজে উঠলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই ছুটা শুরু করলো ওরা তিনজন। রাস্তা পেরিয়ে আবার চললো ঝোপের বেতর দিয়ে। বন্ধুর পথ, মেয়েটির চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ, আতংকে চুপসে যাচ্ছে তার মুখখানা। ওরা কমান্ডো, ওদের ক্লান্তি নেই ভয় নেই। কিন্ত মেয়েটি ? মেয়েটির জন্য তাদের খুব সাবধানে ও ধীরে চলতে হচ্ছে। শত্রুরা তাদের অবস্থান জেনে ফেলেছে। পেছনে ধাওয়া করে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের সেনারা। সাথে ঘেও ঘেও এগিয়ে আসছে সহস্র কুকুরের ডাক। রাজকে বন্দি করার পরে কয়েক ট্রাক সেনা মোতায়েন করা হয় এখানে যারা কাছের ক্যাম্পে স্টেন্ডবাই ছিল। বিপত্তিটা ঘটে তখনই যখন তারা ক্যাম্প থেকে বের হয়। এর ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরই ৪ টা পিকআপ ও একটা প্রিজার্ভ ভ্যান আসে বন্দি, মানে আটক হওয়া লেফটেন্যান্ট রাজকে নিয়ে যেতে। কিন্ত ওরা এসে দেখে ক্যাম্পে জীবিত প্রাণী বলতে আছে ঘুমন্ত কিছু সৈনিক আর তাদের গর্দভ ক্যাপ্টেন।
ডিউটিরত বেশিরভাগ সৈনিককে মারা হয়েছে পেছন থেকে গলায় ছুরি বসিয়ে, আর কয়েকজনকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল এর গুলিতে, এদের সাথে সম্ভবত বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয়ে যায় দলটির, অনুমান করলো ওরা। এবার পুরো দলবল নিয়ে সাগর পাড়ের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো সেনারা। তখনই মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের কুকুর গুলো শিকারের অবস্থান নির্নয় করে ফেলে। ততক্ষনাত ওয়ারলেসের মাধ্যমে মিয়ানমার নৌবাহিনীকে সতর্ক করে দিলো টাস্ক ফোর্সটি।
নাফ নদীতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স সহ কয়েকটি পেট্রোল বোট অবস্থান করছে।
অবিরত দৌরে চলেছে মুক্তাদির শুভ আর রাজ। সাথের মেয়েটিও তাদের ফলো করছে। উদ্দেশ্য তাদের নাফ নদীতে লুকিয়ে রাখা স্পিড বোট। পেছনে ছুটছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্পেসাল ইউনিট ও কুকুর গুলো। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ৪ কিলোমিটার দৌরে এসেছে। জেনিফারের অনুরোধে একটু দারালো মুক্তাদির শুভ। সবার চোখে মুখেই ক্লান্তির ছাপ। এদিকে কুকুর গুলোর ঘেও ঘেও আওয়াজ আরো কাছে চলে এসেছে। তারা আবারো সামনে পা বাড়ালো, কিন্ত পেছনে থাকা রাজ কিছু একটায় আটকে পরে।