সুপারসনিক এয়ারক্রাফট ২৫ফক্সব্যাট



মিগ ২৫ মূলত সুপারসনিক ইন্টারসেপ্টর এয়ারক্রাফট । পরে এর কিছু রিকন ভার্শনের আ্যরেঞ্জমেন্ট করে এটাকে reconnaissance -বোম্বার রে কনভার্ট করা হয়েছিলো । ১৯৭০ সালে সার্ভিসে যোগ দেবার সময় এটি ছিলো অন্যতম দ্রুতগতির ফাইটার।

১৯৬০ দশকের শেষের দিকে শক্তিশালি রাডার, এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং প্রায় ম্যাক ৩ গতি সম্পন্ন এই বিমান আমেরিকাকে তাদের এফ - ১৬ উদ্ভাবনের দিকে গুরত্ব বাড়াতে বাধ্য করেছিলো। মিগ ২৫ মূলত সোভিয়েত - আমেরিকার কোল্ড ওয়ারের অন্যতম আইকন। এই সময় আমেরিকা সহ পশ্চিমাবিশ্ব সোভিয়েতদের কাজ কর্মের উপর ব্যাপক আগ্রহী ছিলো। কিন্তু স্যাটেলাইটহীন ঐ যুগে আকাশ থেকে স্পাই গিরি চালানো ছিলো কঠিন।

 তারপরেও আমরিকানরা লকহিডমার্টিনকে দিয়ে একটি স্পাই প্লেন ইউ -২ তৈরি করে রিকনের (আকাশ থেকে মাটির কাজ কর্মের ছবি তোলা বা নজর রাখা ) কাজ চালাতে থাকে। ক্যাচাল লাগে ১৯৬০ সালের ১ মে তারিখে যখন একটা হাই অলটিটিড স্পাই প্লেন ইউ - ২ , যা কিনা সোভিয়েত এয়ার স্পেস এ রিকনের কাজ করছিলো তা সোভিয়েত এয়ার ডিফেন্সের দ্বারা ভুপাতিত হয়। সোভিয়েতরা বুজতে পারে তারা বেশ ভালো হুমকির মাঝে আছে।


এছাড়া ঐ সময় আমেরিকানরা বেশ কিছু লং রেঞ্জ সাবসনিক বোম্বার তৈরি করে যেগুলো হাই অলটিটিউডে একই সাথে রিকন এবং নিউক্লিয়ার বোম্বিং ক্যাপাবল ছিলো।এতে সোভিয়েতরা একই সাথে স্পাই এবং নিউক্লিয়ার এট্যাকের হুমকি অনুভব করে এবং শুরু হয় হাই অলটিটিউড এন্টিএয়ার সিষ্টেম এবং ইন্টারসেপ্টর তৈরির কাজ।


মিগ ২৫ এর প্রোজেক্টের কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৫৯ সালে মিগ ২১,২৩ থেকে উন্নত মানের ফাইটার মিগ তৈরির উদ্দেশ্যে। ১৯৬০ এর ইউ -২ ক্যাচালের পরে ১৯৬১ এ সোভিয়েতরা এই প্রজেক্টের আমুল পরিবর্তন করে লক্ষ্য ঠিক করে একটি হাই অলটিটউড ইন্টারসেপ্টরের যা কিনা দ্রুত গতি সম্পন্ন, এয়ার টু এয়ার ফাইটে দক্ষ, অল ওয়েদার ফ্রি এবং যেকোন পরিস্থিতে স্ট্রাইকিং এ ক্যাপাবল। এবং এই বিমান তৈরি দায়িত্ব পায় মিকোয়ান বুর‌্যো।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত মিকোয়ান বুর‌্যো তাদের ৬টি প্রটোটাইপ YE-152,YE-152M, Ye-152, Ye-152A, Ye-152P,Ye-152M টেষ্ট করে । কিন্তু কোনটাই পাসমার্ক পেতে সক্ষম হয় নি। পরে তারা এক ইন্জিন চিন্তা বাদ দিয়ে ডুয়েল টার্বোজেট ইন্জিন নিয়ে ডিজাইন শুরু করে এবং অবশেষে "Ye-155-R1" প্রটোটাইপ রিকন ভার্শন এবং "Ye-155-P1" প্রটোটাইপ ইন্টারসেপ্টর ভার্শন হিসাবে ফাইনাল প্রোডাকশনে যাবার অনুমতি পায়। এবং ১৯৭০ নাগাদ এই বিমান সার্ভিসে যোগ দেয়।

আমেরিকানরা মিগ ২৫ এর প্রজেক্টের ব্যাপারে জানতে পেরেছিলো খুবই অল্প। সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিলো কেজিবির ...।তারা বিভিন্ন ভাবে আমেরিকাকে মিগ ২৫ ইনফো দিয়েছিলো যে মিগ ২৫ একটা লো লেভেল গ্রাউন্ড কাম এয়ার ফাইটার। যার কাউন্টারে আমেরিকা তৈরি করে এফ ১৫ ঈগলকে। আমেরিকানরা মিগ ২৫ কে ন্যাটো কমান্ড নেম দিয়েছিলো "ফক্সব্যাট" । ১৯৭৬ সালে এক সোভিয়েত পাইলটের ভুল ল্যান্ডিং এর আগ পর্যন্ত মিগ ২৫ বাকি দুনিয়ার কাছে অচেনা একটা বিমান হিসাবেই ছিলো।

মিগ ২৫ কে তৈরি করা হয়েছিলো হাই অলটিটিউডে ম্যাক ২ গতির উপরে চলার উপযোগি করে। এর জন্য মিগ ২৫ এর বডি স্ট্রাকচার এবং ফসলেজ এর হাই স্ট্রেনথ নিশ্চিৎ করার ডরকার পড়ে ছিলো। এই কারণে মিগ ২৫ এর ফ্রেম স্ট্রাকচারের ৮০% নিকেল স্টিল ১১% এ্যালুমনিয়াম এবং ৯% ছিলো টাইটানিয়াম। আর স্ট্রাকচারের কম্বিনেশন ছিলো অটো এবং হ্যান্ড ওয়েলডিং এর মিক্সড। তৎকালীন সময়ে মিগ ২৫ এর বডি স্ট্রাকচারই ছিলো একমাত্র হাই অলটিটিউড সুপারসনিক বডি শেপ।


মিগ ২৫ এ ব্যবহার করা হয়েছিলো ২টা Tumansky R-15 টার্বোজেট ইন্জিন। এই ইঞ্জিন এর ড্রাই থ্রাষ্ট ছিলো 33,048 lbf যা এই বিমানকে দিয়েছিলো ম্যাক ২.৮ বা ৩২০০ কি.মি. /ঘন্টা এভ্যারেজ স্পিড। আর এই বিমানের আফটার বার্নিং থ্রাষ্ট ছিলো 44,988 lbf যা এই বিমানকে দিয়েছিলো ম্যাক ৩.২ বা ৩৫০০ কি.মি. /ঘন্টা পর্যন্ত স্পিড লিমিট।

মিগ ২৫ পুরাপরি ডগ ফাইটের উপযোগী ক্ষিপ্ত একটি বিমান। এই বিমানে ছিলো ৬-৮ টি এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং শক্তিশালি রাডার টেকনোলজি। এই বিমানের রাডার রেঞ্জ ছিলো ৭৫ কিলোমিটার এবং এই রেঞ্জের মাঝে রাডার গাইডেড মিসাইল সফল ভাবে ডিপ্লোই করার ভালো পারফরমেন্স ছিলো এই বিমানের।

এই বিমানের সার্ভিস সিলিং রেট ছিলো ৬৫,০০০ ফিট থেকে ৮০,০০০ ফিট .......ঐ সময় আমেরিকার হাতে থাকা বিমানের সর্বোচ্চ সার্ভিস কলিং রেট ছিলো ৭০,০০০ ফিট । ফলে ১০,০০০ ফিট উপর থেকে উড়ে বেড়ানো মিগের পক্ষে যেকোন স্পাই প্লেন ধরা কিংবা আশেপাশের দেশগুলোর রাডার স্সিটেম ফাকি দেয়া কোন ব্যপারই ছিলো নাহ।
এই বিমানে রাডারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিলো ভ্যাকুয়াম টিউব ।  যা কোন নিউক্লিয়ার এট্যাকের সময়ও এই বিমান কে যে কোন ইলেকট্রনিক পালস থেকে বাচাতে করা হয়েছিলো ।


★টোটাল স্পেফিকেশনঃ

পাইলট : ১ জন (ইন্টারসেপ্টর ভার্শন) ২ জন (রিকন ভার্শন)
লেংথ: ৬৪ ফিট ১০ ইঞ্চি।
উইং স্প্যান : ৪৬ ফিট।
শক্তির উৎস: ২টি Tumansky R-15B-300 afterburning turbojets

★পারফরমেন্স -
সর্বচ্চো গতি : হাই অলটিটউডে।
ক্রুজিং : ম্যাক ২.৮ (৩২০০ কি.মি./ঘন্টা )
আফটার বার্নিং : ম্যাক ৩.২ (৩৫০০ কি.মি./ঘন্টা )


★রেঞ্জ :
কমব্যাট: ১৭৩০ কি.মি. বা ১৭৭৫ মাইল।

★ফেরি রেঞ্জ :
* ২০৫৭ কি.মি. বা ১৩১০ মাইল (একটা এক্সটারনাল ফুয়েল ট্যাংক)
*সার্ভিস সিলিং : ৬৫,০০০- ৮০,০০০ + ফিট।

★আর্মামেন্ট :
* ১৫০ রাউন্ড হেভি বুলেট সহ ১টা GSh-30-1 ক্যানন।
* ৬ টা বিভিন্ন রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার মিসাইল।

★মিসাইল:
৪টি আর -৪০ আরডি / টিডি এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল।
২টি আর -২৩ এএমএস।
৪টি আর -৬০ এএএমএস।
৪টি আর -৭৩ এএএমএস।

★ এভিওনিক্স:
মিগ-২৫ পি এর জন্য ভ্যাকুয়াম টিউব ইলেকট্রনিক্সের উপর ভিত্তি করে আরপি -২৫ (স্মারচ এ -৪) রাডার আর -২৫ এমএন (সাফির -২)) রাডারটি সেমিকন্ডাক্টর ইলেক্ট্রনিক্সের উপর ভিত্তি করে পরে মিগ -২৫ পিডির জন্য।
একটি আরভি-ইউএম বা একটি আরভি -৪ রাডার আল্টিমিটার।


★এইবার আসি এই বিমানের সমস্যা গুলোয়:

মিগ ২৫ এর অন্যমত সমস্যা ছিলো এই বিমান লো অলটিটিউডে তার কার্যকারিতা হারাতো। যেখানে হাই অলটিটউডে এই বিমানের ক্রুজিং স্পিড ম্যাক ২.৮ সেখানে লো অলটিটউডে এই বিমানের গতি ১২০০ কি.মি. /ঘন্টায় নেমে আসতো। ম্যানুভারিটি ও কমে যেত প্রায় ৫৪%।

এই বিমানের ফুয়েল কনজিউম রেট অনেক হাই।আর মিগ ২৫ এর ইন্টারনাল ফুয়েল ট্যাংক তুলনামূলক ছোট হওয়ায় এই বিমান এক্সটারনাল ফুয়েল ট্যাংক ছাড়া দীর্ঘক্ষন আকাশে থাকতে পারতোনা।

এই বিমানের আরেকটি গুরুতর সমস্যা ছিলো এর ইঞ্জিনের । এর ইঞ্জিন টানা ম্যাক ৩ স্পিডে চললে অতিরিক্ত গরম হয়ে যেত। যা ফলে ইঞ্জিনে আগুন লাগা কিংবা হঠ্যাৎ করে ইঞ্জিন ফেইলর হবার সম্ভবনা ছিলো।

মিগ ২৫ এর রাডার শুধু সামনের দিকে এন্যালাইসিস করতে পারতো যা মিগ ২৫ কে সামনের ১৮০' ডিগ্রি রাডার সাপোর্ট দিতো। ফলে পিছনের কিংবা বাকি ১৮০' ডিগ্রি রাডার সাপোর্ট এর জন্য মিগ ২৫ কে গ্রাউন্ড রাডার স্টেশন এর উপর নির্ভর করতে হত। আর মেইনটেন্যান্স আর তেল খরচের বেলায় কিছু বলার দরকার নাই আশা করি।

১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক সোভিয়েত পাইলট Viktor Belenko তার মিগ ২৫ নিয়ে জাপানের Hakodate Airport এ ল্যান্ড করে যা কিনা আমেরিকানদের ঘাটি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো। তখন আমরিকানরা ঐ বেইমান পাইলটের কারনে এই বিমানকে ভালোভাবে গুতানের সুযোগ পায়।

সবশেষে এখন পর্যন্ত হাই অলটিটিউডে মিগ ২৫ এর স্পিড রেকর্ড অন্য কোন বিমান ভাঙ্গতে পারেনি। ভাঙ্গতে পারেনি আরও অনেক রেকর্ড। যদিও মিগ ২৫ এর ডেভলপমেন্ট হয়ে মিগ ৩১ এসেছে। তারপরেও স্নায়ু যুদ্ধের কিংবদন্তি মিগ ২৫ এখনও অনেক ক্ষেত্রে অপরাজেয়।
📕এটার ২৫টি ভলিউম আছে।১,১৮৬ টি তৈয়ার।

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- click here
 
Powered by Blogger.