বন্ধু বলে কথা! মেজর জিয়াউর রহমানের খাল খনন প্রসঙ্গ।


আমি শুধু ভাবি, জেনারেল জিয়াউর রহমান যদি খাল কাটা " কর্মসূচি হাতে না নিতো তাহলে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান কীরূপ থাকতো? সেই কথা ভাবলেও তো বুঝা যায় প্রতিবেশী দেশ কতটা প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করছে। ভারত থেকে আসা ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত
নদীর ৪২টিতে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি
প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত।
টিপাইমুখ ও সারির উজানে বাঁধ দিয়ে আরও ৮টি নদীর
পানি প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে তারা। ফলে
শুকনো মৌসুমের শুরুতেই বড় বিপর্যয়ে পড়ছে
বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতের পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে
প্রাকৃতিক বিভিন্ন উত্স থেকে প্রতিবছর ৬ হাজার ৫০০
বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি পাওয়া যায়। আগামী ২০২৫ সাল
পর্যন্ত বছরে গড়ে তাদের সর্বোচ্চ ৯০০
বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন।
অর্থাত্ মোট পানির শতকরা ১৫ ভাগ তাদের পক্ষে
ব্যবহার সম্ভব। এরপরও বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত
করার জন্যই ভারত একতরফা যৌথ নদীগুলোতে বাঁধ
দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ৬০টি নদী ভারত ও মিয়ানমার
থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-
বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে আন্তঃসীমান্ত
নদী ৫৭টি। এরমধ্যে ৫৪টি নদী ভারত থেকে, ৩টি
মিয়ানমার থেকে আসা।
যৌথ নদীগুলোর বড় কয়েকটিতে স্থায়ী বাঁধ;
উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ছোট
নদীগুলোত অস্থায়ী মাটির বাঁধ দিয়ে শুকনো
মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। বর্ষায়
সেগুলো ভেঙে দেয়।
একতরফা পানি আগ্রাসনের ফলে আমাদের
অভ্যন্তরীণ নদী শুকিয়ে যাচ্ছে; দেশে
বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে যেখানে ২৪
হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল বিআইডব্লিউটি’র হিসাবে,
এখন তা বর্ষা মৌসুমে ৬ হাজার ও শুকনো মৌসুমে
২৪০০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।
জানা গেছে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা
ও মহানন্দাসহ হিমালয় অঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও
উপনদীতে ৫০০টি বাঁধ তৈরি করছে ভারত।
ইন্টিগ্রেটেড বিদ্যুত্ প্রকল্পের নামে এসব বাঁধে
অর্থায়ন করছে ভারত সরকার।
এর আওতায় ভারতে ৪৫০টি, নেপালে ৩০টি ও ভুটানে
২০টি বাঁধ তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের
প্রায় ১০০টি বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের পানি
বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান জানান, এ প্রকল্পে
বাংলাদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা
হয়েছিল।
কিন্তু ভারত রাজি হয়নি। এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা
হলে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ সমস্যার স্থায়ীভাবে
সমাধান সম্ভব হতো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-
পশ্চিমাঞ্চলে মাথাভাঙ্গা, বেতনা (সোনামুখী), ভৈরব,
রায়মঙ্গল, ইছামতি—এ ৫টি অভিন্ন নদী রয়েছে।
এসব নদীর প্রবাহের ওপরই নির্ভর করে
সাতক্ষীরা-যশোর এলাকার অন্যান্য নদীতে
মিঠাপানির প্রবাহ।
ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার
গঙ্গারামপুরের ৮ কিলোমিটার ভাটিতে সীমান্তের
প্রায় কাছাকাছি ভৈরব নদের উত্সমুখে একটি ক্রসবাঁধ
নির্মাণ করা হয়েছে। ওই বাঁধের উজানে ভৈরব
নদের উত্সমুখ জলঙ্গী নদীর ওপর নির্মাণ করা
হয়েছে একটি রেগুলেটর।
ওই বাঁধ এবং রেগুলেটর দিয়ে ভারত জলঙ্গী
নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করছে। ফলে
ভাটিতে বাংলাদেশে ভৈরব নদ মরে গেছে। ভৈরব
বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মেহেরপুর সদর ও
গাংনী এলাকা দিয়ে। মিলেছে রূপসা নদীতে। ভৈরব
শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছে না কপোতাক্ষ।
কপোতাক্ষ ভরাট হয়ে পড়ায় দেশের দক্ষিণ-
পশ্চিমাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ মারাত্মক বিপর্যয়
নেমে এসেছে।
রায়মঙ্গল সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়ে বাংলাদেশে
প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত এ নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত
করেছে সুন্দরবনকে। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ
নদীতে নদীশাসনের উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগ
করে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের দখল নিতে চাইছে
ভারত।
আন্তর্জাতিক পানিবিশেষজ্ঞ মরহুম বিএম আব্বাস এটি
তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, ভারত ১৯৭৬ সালে
বাংলাদেশ সীমান্তের আনুমানিক ১০০ থেকে ১২৫
ফুট ভেতরে সুচিয়া গ্রামে নদীর ওপর ৩৬ ইঞ্চি
ব্যাসবিশিষ্ট চার ফোকরের স্লুইসগেট নির্মাণ
করে।
শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে সেচ কাজে ব্যবহার
করে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বাড়লে হঠাত্ পানি
ছেড়ে দেয়। এভাবে পানি আটকে রেখে
প্রত্যাহার করায় পানির অভাবে বাংলাদেশের বেতনা ও
কোদালিয়া নদীর মধ্যবর্তী ৩০ বর্গমাইল এলাকা
শুকিয়ে যায়।
বর্ষায় পানি ছেড়ে দিলে ওই এলাকায় প্লাবন দেখা
দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কালিন্দি রায়মঙ্গল
নদীর স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে ভারত দক্ষিণ
তালপট্টি দ্বীপের দখল নিতে চাইছে।
সীমান্ত নদী মাথাভাঙ্গা গঙ্গার একটি প্রধান শাখা। এ
নদীটি প্রত্যক্ষভাবে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবের
শিকার। ফারাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পর নদীটি দিনে দিনে
মরা গাঙে রূপ নিয়েছে। ফলে এর বিশাল অববাহিকায়
পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের প্রধান নদী গঙ্গা-পদ্মা। এ নদীতে
বর্ষা মৌসুমে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পানি আসে নেপাল
থেকে। শুকনো মৌসুমে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ১০
ভাগ পানি আসে চীন এবং ২০ ভাগ আসে ভারত
থেকে।
অথচ ভারত ফারাক্কা বাঁধ ও এর উজানে আরও বেশ
ক’টি বাঁধ ও রেগুলেটর তৈরি করে একতরফা পুরো
পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন,
ভারতের পানি মাত্র ২০ ভাগ; অথচ তারা শুকনো মৌসুমে
পুরো নদীর মালিক সেজে সম্পূর্ণ পানি প্রত্যাহার
করে নিচ্ছে।
১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু
হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই শুকিয়ে যেতে থাকে
পদ্মা। আর দুর্ভোগ শুরু হয় পদ্মাপাড়ের এসব
মানুষের। শুধু পদ্মার পশ্চিম সীমান্তের চর এলাকার
মানুষই নয়; অভিন্ন নদী গঙ্গার উজানে নির্মিত
ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে পানি প্রত্যাহারে বড় বিপর্যয়
নেমে এসেছে ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তর,
পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও।
বিপদে পড়েছেন পুরো বাংলাদেশের এক-
তৃতীয়াংশ মানুষ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার
যে পানি চুক্তি করেছে তাতে পুরো প্রবাহ হিসাব না
করে ফারাক্কা পয়েন্টে প্রাপ্ত পানির হিসাবে এবং
পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় গঙ্গা শুকিয়ে এর
অববাহিকায় বড় বিপর্যয় তৈরি করেছে।
গুগল আর্থ ম্যাপে দেখা যায়, ফারাক্কার উজানে
গঙ্গার ভরা যৌবন আর ভাটিতে গঙ্গা মৃত। গঙ্গার পানি
কৃত্রিম ক্যানেল হয়ে চলে যাচ্ছে ভাগিরথিতে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান নদী ও অন্যতম সীমান্ত
নদী মহানন্দা বাংলাদেশে দুটি অংশে বিভক্ত।
পঞ্চগড় অংশে মহানন্দা আপার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে
মহানন্দা লোয়ার। মহানন্দার উত্পত্তি ভারতের দার্জিলিং
জেলার মহলড্রিম পর্বত থেকে।
উপরের অংশে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত
থেকে শুরু করে ভাটিতে ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত
বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা নির্ধারণ করেছে মহানন্দা
আপার। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের কাছ দিয়ে নদীটি
আবার ভারতে প্রবেশ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা হয়ে মহানন্দা আবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার গিলাবাড়ি
সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই
অংশ মহানন্দা লোয়ার নামে পরিচিত। ভোলাহাট
থেকে মহানন্দা, গোমস্তাপুর, নবাবগঞ্জ সদর ও
রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলা হয়ে পদ্মায়
মিলেছে।
৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরম
দুর্ভোগে পড়েছে এর ১৩শ’ বর্গকিলোমিটার
এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। ভারত মহানন্দার উজানে
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার অদূরে বাংলাবান্ধা
সীমান্ত ঘেঁষে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে।
১৯৮২-৮৩ সালে ভারতের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হিন্দুস্থান
বিল্ডার্স’ ওই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করে। ফলে
ভাটিতে মহানন্দা শুকিয়ে গেছে। বাঁধে সংযুক্ত করা
হয়েছে ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা-মহানন্দা
সংযোগ চ্যানেল।
এ চ্যানেলের সাহায্যে ভারত মহানন্দা ব্যারাজ
থেকে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত ১৫টি নদীর পানি একতরফা নিয়ন্ত্রণ করছে।
যার পরিণতিতে শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট আর বর্ষায়
বন্যা দেখা দেয়।
সীমান্ত নদী পাগলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ
সীমান্তে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁপাই সদরে
মহানন্দায় মিশেছে। উজানে ভারতের অংশে
স্লুইসগেট করে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার
করায় ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী শুকনো
মৌসুমে থাকে পানিশূন্য। যার কারণে চরম দুর্ভোগে
পাগলার ৪০০ বর্গকিলোমিটার অববাহিকার মানুষ।
নওগাঁর নদ-নদীতে পানি প্রবাহের মূল উত্স ছোট
যমুনা। এর মাতৃনদী ঘুকশি। ভারত জলপাইগুড়ি জেলার
মেকলিগঞ্জ থানার কাশিয়াবাড়িতে বাঙ্গু নদীর ওপর
একটি রেগুলেটর ও বালুর ঘাটের ঝিনাইপোজে
অপর একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে।
ঘুকশি নদী পশ্চিমবঙ্গে বালুরঘাটের মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার ধামইরহাট
থানার ভেতর দিয়ে মথুরাপুর এসে ছোট যমুনার
সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ঘুকশি ও বাঙ্গু নদীতে
বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছোট যমুনায় পানিপ্রবাহ
বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পানি সঙ্কট দেখা দেয় নওগাঁ
জেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে।
আন্তঃসীমান্ত নদী আত্রাইয়ের মাতৃনদী
করতোয়া। দিনাজপুর জেলার খানসামা এলাকায়
করতোয়া নদী থেকে এর উত্পত্তি।
উত্পত্তিস্থল থেকে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে
দিনাজপুর সদর উপজেলায় নদীটি ভারতের
পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
এই অংশটি ‘আত্রাই আপার’ হিসেবে পরিচিত।
পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চল হয়ে নদীটি আবার
সীমান্ত নদী হিসেবে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা
সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই
অংশটি ‘আত্রাই লোয়ার’ হিসেবে পরিচিত।
প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আত্রাই লোয়ার
ধামইরহাট, পত্নীতলা, মহাদেবপুর, মান্দা, আত্রাই,
বাগমারা, সিংড়া, গুরুদাসপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া উপজেলার
ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিরাজগঞ্জের
শাহজাদপুরে এসে হুড়াসাগর নদীতে মিলিত
হয়েছে।
আত্রাইয়ের মাতৃনদী করতোয়ার উজানে ভারতের
জলপাইগুড়ি জেলার আমবাড়ি-ফালাকাটায় একটি ব্যারাজ
নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে
বাংলাদেশে দুটি অংশে ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ
আত্রাই পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকায় বিপর্যয়
নেমে এসেছে।
নদীবিষয়ক প্রকাশনা থেকে এবং স্থানীয়
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ষাটের
দশকের প্রথমদিকে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার
আমবাড়ি-ফালাকাটায় করতোয়া নদীর ওপর একটি
ব্যারাজ নির্মাণ করা হয়।
এরমধ্যে ওই ব্যারাজটি তিস্তার ওপর স্থাপিত
গজলডোবা ব্যারাজের আওতায় আনা হয়েছে।
তিস্তা-মহানন্দা সংযোগ খালের আওতায় একটি ফিডার
ক্যানেল মারফত করতোয়ার ৪২৫ কিউসেক পানি
সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে
শুকিয়ে গেছে করতোয়া ও এর শাখা নদীগুলো।
বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়টা থাকছে মরাগাঙ
হয়ে। শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে মাছের
পরিবর্তে ধান-পাট চাষ হয়।
অভিন্ন নদী নাগর (আপার) পঞ্চগড়ের
অটোয়ারী উপজেলার বর্ষালুপাড়ায় বাংলাদেশে
প্রবেশ করেছে। অটোয়ারী, বালিয়াডাঙ্গী,
রানীশংকৈল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ৫০
কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আবার ঠাকুরগাঁওয়ের
হরিপুর উপজেলা দিয়ে এটি আবার ভারতে প্রবেশ
করেছে।
অটোয়ারীর বাসিন্দারা জানান, বর্ষালুপাড়ার উজানে
সীমান্তের কাছে আরটেইকা নামক স্থানে একটি
স্লুইসগেট নির্মাণ করে নাগরের পানি প্রত্যাহার
করে নিচ্ছে ভারত। ফলে নাগর নদী এখন
পানিশূন্য। কিন্তু বর্ষা আসতেই ভারত স্লুইসগেটটি
খুলে দেয়। ফলে মজে যাওয়া নাগর নদীর দু’কূল
ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়।
ঘোড়ামারা ছোট্ট একটি সীমান্ত নদী। দৈর্ঘ্য মাত্র
১৩ কিলোমিটার। ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে এটি
বাংলাদেশে প্রবেশ করে করতোয়ায় মিশেছে।
এর অববাহিকা ৬৫ বর্গকিলোমিটার। স্লুইসগেট করে
পানি সরিয়ে নেয়ায় শুকনো মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে
যায়।
সীমান্ত নদী কুলিক ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর
রায়পাড়া বিল থেকে উত্পন্ন হয়ে রানীশংকৈল
উপজেলার ভেতর দিয়ে হরিপুরে নাগর নদীতে
মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার, প্রস্থ
মাত্র ১০০ মিটার।
একে আসলে নদী না বলে খাল বলাই শ্রেয়। এ
নদীতে শুকনো মৌসুমে ভারত মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে
পানি সরিয়ে নেয়। বর্ষায় খুলে দেয়।
তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী।
বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দায় তিস্তা
ব্যারাজের ১০০ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত
থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উজানে
পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবার
তিস্তা নদীর ওপর একটি বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ
করেছে ভারত।
১৯৭৫ সালে ওই প্রকল্প শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ
সরকার। এর আওতায় দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদহ,
জলপাইগুড়ি, কুচবিহার জেলা, বিহারের পুর্নিয়া ও
আসামের কিছু এলাকার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে
সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ২২.৫ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত্ উত্পাদন ও
বন্যা নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত। তিস্তা বহুমুখী বাঁধ
থেকে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের বামে তিস্তা-
জলঢাকা প্রধান খাল, ডানে তিস্তা-মহানন্দা খাল, মহানন্দা
প্রধান খাল, ডাউক-নাগর প্রধান খাল ও নাগর-ট্যাঙ্গন
প্রধান খালের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে
নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, তিস্তা উত্পত্তি সিকিমে।
গজলডোবা ছাড়াও তিস্তার উজানে আরও ৩টি বাঁধ
দিয়েছে ভারত। এর ২টি সিকিম রাজ্যে অপরটি সিকিম ও
পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি স্থানে। আর আমাদের বাঁধটি
হলো তিস্তার ৪ নম্বর বাঁধ। বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান
বলেন, এখন যে তিস্তা চুক্তির কথা বলা হচ্ছে,
সেটি যদি গজলডোবায় প্রাপ্ত পানির ওপর হিসাব করে
হয় এর পরিণতিও হবে ফারাক্কার মতো। চুক্তি করতে
হবে তিস্তায় মোট প্রাপ্ত পানিপ্রবাহের হিসাব করে।
তা নাহলে আগেই পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায়
গজলডোবায় পুরো পানি বাংলাদেশকে দেয়ার কথা
বলা হলেও ওই চুক্তি হবে অর্থহীন।
তিস্তা-মহানন্দা বহুমুখী বাঁধের আওতায় ভারত অভিন্ন
নদী মহানন্দা, নাগর, তিস্তা, বুড়িতিস্তা, চড়াকাটা-
যমুনেশ্বরী, করতোয়ার পানি একতরফাভাবে
প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উজানে এসব নদীর পানি
সীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে সর্ববৃহত্ নদী
ব্রহ্মপুত্র। চীন শাসিত তিব্বতের কৈলাস শৃঙ্গে
জন্ম নিয়ে ভারতের অরুণাচল, আসাম ও পরে
বাংলাদেশে এসেছে ২৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ
নদীটি। এ নদীর ৪০ ভাগ পানি চীন থেকে, ৪০
ভাগ ভুটান থেকে, বাকি ৪০ ভাগ ভারত এবং বাংলাদেশ
থেকে আসে। চীন ইয়ারলুং সাংপো প্রকল্পের
আওতায় ‘ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে গোবি
মরুভূমিকে সবুজ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। পরে
‘ইয়ারলুং সাংপো হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট’ ও ইয়ারলুং
সাংপো ওয়াটার ডাইভার্ট প্রজেক্ট সম্পর্কে নানা
খবর শোনা যায়। এতে তিব্বত থেকে যেখানে
দক্ষিণে মোড় নিয়ে অরুণাচলে ঢুকেছে নদীটি
সেখান থেকে পানি প্রত্যাহার করে ৩৮ হাজার
মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুেকন্দ্র করার পরিকল্পনার
কথা ছিল। গত ১২ অক্টোবর চীনের পানিসম্পদ
মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জিয়াও ইয়ং বেইজিংয়ে
এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, ‘এমন
কোনো পরিকল্পনা চীনের নেই। কারিগরি
সমস্যা, পরিবেশগত ঝুঁঁকি ও অন্য দেশের সঙ্গে
সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে এমন পরিকল্পনা
চূড়ান্ত করা হয়নি।
ব্রহ্মপুত্রের উপনদী ও অভিন্ন সীমান্ত নদী
ধরলা ও দুধকুমার। ভুটান থেকে আসা ব্রহ্মপুত্রের
এ দুটি উপনদীতে ব্যারাজ তৈরি করে পানি প্রত্যাহার
করে নিচ্ছে ভারত ও ভুটান। ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার
প্রজেক্টসহ অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় দুটি
নদীরই উজানে একাধিক বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার
করে নিচ্ছে ভুটান ও ভারত। বিশেষজ্ঞরা জানান,
দুধকুমার ও ধরলার উত্পত্তি ভুটানে। ৩টি দেশের
ওপর দিয়ে এগুলো প্রবাহিত। অথচ ভারত
একতরফাভাবেই নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহার
করে নিচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক নদী আইনের চরম
লঙ্ঘন।
সীমান্ত নদী জিনজিরাম, চিতলখালী, ভোগাই-কংস,
নিতাই, সোমেশ্বরী, জাদুকাঠা-রক্তি, জালুখালী,
নায়াগাঙ ও উমিয়াম নামে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রংপুর
অঞ্চলের নদীগুলোর উত্পত্তি মূলত
মেঘালয়ের গারো পাহাড় ও খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়ে।
শুকনো মৌসুমে অস্থায়ী মাটির বাঁধ ও রেগুলেটর
করে নদীগুলোর পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ফলে মরা গাঙ হয়ে পড়েছে এগলো। মরে
যাচ্ছে ময়মনসিংহ-জামালপুরের প্রধান নদ পুরাতন
ব্রহ্মপুত্র। শুকনো মৌসুমে উজান থেকে পানি না
আসায় নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের
হাওরগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ছোট ছোট কয়েকটি
আন্তঃসীমান্ত নদী ধলা, পিয়াইন, সারী গোয়াইন,
সোনাইবরদল, মনু, ধলাই, জুরি, লংলা, খোয়াই, সুতাং ও
সোনাই। এরই মধ্যে ধনু, মনু, ধলা, পিয়াইন, খোয়াই
ও ধলাই নদীতে বাঁধ ও স্লুইসগেট করে শুকনো
মৌসুমে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।
বহু আগেই মনু নদীর উজানে ত্রিপুরা রাজ্যের
কেলা শহরের কাছে কাঞ্চনবাড়িতে একটি বাঁধ
নির্মাণ করেছে ভারত। ওই বাঁধ থেকে তারা মনু
নদীর পানি একতরফা নিয়ন্ত্রণ করছে। ধলা উজানে
ত্রিপুরার কুলাইয়ে একটি বাঁধ নির্মাণের ফলে মনু ও
ধলা শুকনো মৌসুমে থাকে পানিশূন্য। পিয়াইন নদীর
মাতৃনদী ডাউকি নদীর পশ্চিম তীরে ভারত ৪৩ মিটার
লম্বা, ৯ মিটার চওড়া ও ৯ মিটার উঁচু গ্রোয়েন নির্মাণ
করেছে। এ গ্রোয়েনের কারণে জাফলং
কোয়ারিতে পাথর আসার পরিমাণ কমে গেছে।
খোয়াই নদীর উজানে ত্রিপুরা রাজ্যের চাকমাঘাটে
ও কল্যাণপুরে দুটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার
করে নেয়া হচ্ছে। খোয়াইর ভারতীয় অংশে
শহর প্রতিরক্ষার নামে স্পার নির্মাণ করে নদীকে
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দিকে ঠেলে দেয়া
হয়েছে। কুশিয়ারায় গ্রোয়েন নির্মাণ করে এর
স্রোত ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশের দিকে।
সীমান্ত নদী সারি বা সারিগোয়াইনের মাইনটডু ও
লিমরিয়াং। মাইনটডু এবং লিমরিয়াং নদীর মিলিত স্রোত সারি
গোয়াইন নদীর নাম নিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুরের
লালাখাল নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ
করেছে। মাইনটডু-লেসকা ড্যামটি ওমশাকিন, মাইনটডু
এবং লামু নদীর সংযোগস্থল লেসকার ১শ’ মিটার
উজানে অবস্থিত। এটি জৈন্তিয়া হিলস জেলার
আমলারেম ব্লকের দেংশাকাপ গ্রামের কাছে তৈরি
হয়েছে। মেঘালয় রাজ্য বিদ্যুত্ বোর্ড এ
প্রকল্পের ৩টি ইউনিট থেকে ৪২ মেগাওয়াট করে
মোট ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ করার জন্য বাঁধ দিচ্ছে।
ড্যামটির উচ্চতা ৫৯ মিটার। ড্যামের স্থাপনার মধ্যে
রয়েছে লেসকা পয়েন্টে জলাধার এবং এর
সঙ্গে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কন্ডাক্টর সিস্টেম।
যাতে আছে প্রেসার টানেল এবং পেনস্টেক
পাইপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাঁধের জলাধারে
তারা ইচ্ছামত পানি ধরে রাখতে পারবে এবং
প্রয়োজনে ছেড়ে দিতেও পারবে। ফলে
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের সারি নদীতে
শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেবে এবং
বর্ষাকালে ভাটির দেশ বাংলাদেশ অতিপ্লাবনের মুখে
পড়বে। এ বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করায় নেতিবাচক
প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। চলতি বর্ষা
মৌসুমে সারি নদীতে উজানের ঢল নামেনি। ফলে
সীমান্তবর্তী হরিপুর হাওরসহ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট
ও কোম্পানীগঞ্জের হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল ও
খালে পর্যাপ্ত পানি হয়নি।
সীমান্ত নদীর সুরমা ও কুশিয়ারা মাতৃনদী বরাক।
ভারতের মণিপুর রাজ্যের তুইভাই ও তুইরয়ং নদী দুটির
মিলিত স্রোতধারার নাম বরাক। নদী দুটির সঙ্গমস্থল
থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিমে মনিপুর রাজ্যের
চুরাচাঁদপুর জেলার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল টিপাইমুখে
হাইড্রো ইলেকট্রিক বাঁধ নির্মাণের জন্য চুক্তি
করছে ভারত। এর অবস্থান জকিগঞ্জের অমলসিদ
সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বে
সংকীর্ণ গিরিখাতে। মাটি ও পাথরের কাঠামোতে
নির্মিত বাঁধটি সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট বা
১৮০ মিটার উঁচু এবং ১৫০০ ফুট বা ৫০০ মিটার দীর্ঘ।
টিপাইমুখ বাঁধের ৯৫ কিলোমিটার ভাটিতে ফুলেরতল
নামক স্থানে আরও ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা
রয়েছে তাদের। এর মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে
সেচের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে বরাকের পানি।
টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের গত ২২ অক্টোবর
চুক্তিটি সই হয়েছে দিল্লিতে। এ ধরনের চুক্তি
করার আগে বাংলাদেশকে জানানোর প্রতিশ্রুতি
দেয়া হলেও তা মানেনি ভারত।
হাইড্রোওয়ার্ল্ডডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট
বলেছে, যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে জাতীয়
জলবিদ্যুত্ নিগমের (এনএইচপিসি) ৬৯, রাষ্ট্রায়ত্ত
জলবিদ্যুত্ সংস্থার (এসজেভিএন) ২৬ এবং মণিপুর রাজ্য
সরকারের ৫ শতাংশ মালিকানা থাকবে। এই প্রকল্প
বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদী
সুরমা-কুশিয়ারা মরে যাবে। বৃহত্তর সিলেট,
কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার প্রায় ৪ কোটি মানুষ
প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
অভিন্ন নদী গোমতীতে বাংলাদেশ সীমান্ত
থেকে ১০ কিলোমিটার উজানে দক্ষিণ ত্রিপুরার
মহারানী নামক স্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এর ফলে শুকনো মৌসুমে গোমতীর পানির প্রবাহ
একেবারেই কমে যায়। নদীতে তখন তলানি ছাড়া
কিছুই থাকে না। গোমতীর পানির ওপর নির্ভরশীল
কুমিল্লার সোনাইছড়ি সেচ প্রকল্পসহ ছোট
ছোট অনেকগুলো সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে
গেছে।
সীমান্ত নদী সিলোনিয়া ভারতের ত্রিপুরা এলাকা
থেকে ফেনীর পরশুরাম সীমান্ত দিয়ে
বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ত্রিপুরায় পাম্প
বসিয়ে ও অস্থায়ী মাটির বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে
সিলোনিয়ার পানি সরিয়ে নেয়া হয়। সীমান্ত নদী
মুহুরী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা
থেকে উত্পত্তি হয়ে ফেনীর পরশুরাম
উপজেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
শুকনো মৌসুমে অস্থায়ী মাটির বাঁধ দিয়ে ফেনী
নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হয় বলে
সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।
ফেনীর প্রধান নদী ও বাংলাদেশের অন্যতম
সীমান্ত নদী ফেনী খাগড়াছড়ি জেলার পার্বত্য
এলাকা ও ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন ছড়া থেকে।
ভারত সম্প্রতি ফেনী নদীর পানি দাবি করছে এবং
ফেনী নদীর পানি নিয়ে চুক্তি করতে চাইছে।
এছাড়া ফেনী নদীতে বেশ কয়েকটি বড় বড়
পাম্প বসিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।
সীমান্ত নদীর উজানে বাঁধ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের
পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এস আই খান আমার
দেশকে বলেন, ভারত থেকে আসা ৫৪টি
আন্তঃসীমান্ত নদীর মধ্যে আগেই ৪২টিতে
স্থায়ী ও অস্থায়ী বাঁধ দিয়েছে ভারত। এখন সারি
নদীতে বাঁধ দিচ্ছে ও টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির চুক্তি
করেছে। ভারতে বার্ষিক যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তার
মাত্র ১৫ ভাগ ভারতের প্রয়োজন। এরপরও
বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যই আন্তর্জাতিক
নদী আইনসহ সব রীতিনীতি উপেক্ষা করে তারা
একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। তিনি বলেন,
জেআরসি নির্ধারিত ৫৪টি নদীর মধ্যে প্রধান
কয়েকটি ছাড়া অন্য নদীগুলো খুবই ছোট।
এগুলোর বেশিরভাগের উত্পত্তি সীমান্তবর্তী
বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া থেকে। শুকনো মৌসুম এলেই
ভারত এগুলোতে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে সেচ কাজে
পানি ব্যবহার করে আর বর্ষায় খুলে দেয়। ফলে
আমাদের হাওর-বাঁওড় শুকিয়ে যায়। আমরা
প্রয়োজনে পানি পাই না। আমাদের পানি পাওয়ার
নিশ্চয়তার জন্য প্রয়োজন মেকং রিভার কমিশনের
মতো নদীর অববাহিকা ভিত্তিক আঞ্চলিক কমিশন
গঠন করা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি কৌশল
বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান আমার
দেশকে বলেন, টিপাইমুখ ও হিমালয় অঞ্চলের
নদীগুলোতে বাঁধ দেয়ার পাশাপাশি আমাদের জন্য
সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো ভারতের
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে
আমরা বর্ষা মৌসুমে যে পানি পাই তাও পাব না। ফলে
ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণ কমে যাবে। পানির স্তর
নিচে নেমে যাবে। দেশের জন্য বড় বিপর্যয়
তৈরি করবে। তিনি আরও বলেন, ভারত বড় বড় বাঁধ
নির্মাণ করছে আদিবাসী জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকায়।
সেখানে এ বাঁধ নির্মাণের ফলে মানবাধিকারের
লঙ্ঘন হচ্ছে। মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের
দেশেও এসব বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু
হয়েছে।
Powered by Blogger.