বাংলাদেশের স্বপ্নের সাবমেরিন

বাংলাদেশের সাবমেরিন
বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ২০৩ মিলিয়ন ডলারে চীন থেকে দুইটি মিং ক্লাস সাবমেরিন কিনেছে। মিং ক্লাস সাবমেরিন তৈরির ইতিহাস, ওভারভিউ ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে এর সম্ভাব্য কার্যকারীতা নিয়েই আজকের এই পোস্ট। আসুন বন্ধুরা শুরু করা যাক।
 
-মিং ক্লাস সাবমেরিন তৈরির ইতিহাসঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে সামরিক, বেসামরিক সবরকম বড় বড় অর্জনগুলোর পেছনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ার অবদান লক্ষ্য করা যায়। আজ বাংলাদেশ নেভী যে সাবমেরিন কিনছে, তার পিছনেও কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ার পরোক্ষ একটা ভূমিকা আছে। কারণ মিং ক্লাস সাবমেরিনের প্রয়োজনীয় ডিজাইন ও ডিটেইলস চীনকে সোভিয়েত রাশিয়াই দিয়েছিল ১৯৬৩ সালে। সিনো-সোভিয়েত ফ্রেন্ডশীপ এন্ড মিউচুয়াল এসিস্টেন্স প্যাক্টের অধীনে রাশিয়া চীনকে সাবমেরিনের ডিটেইলড ডিজাইন সরবরাহ করে।
রাশিয়ার সহযোগিতায় চীন ১৯৬৩-১৯৮৪ সালের মধ্যে সর্বমোট ৮৪ টি সাবমেরিন তৈরি করে।এই সাবমেরিন গুলো ছিল টাইপ 033, রোমিও ক্লাস। এখানে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে রাখা দরকার, রোমিও ক্লাস সাবমেরিন হল মিং ক্লাস সাবমেরিনের পূর্বপুরুষ সোজা বাংলায় দাদা। রোমিও ক্লাস থেকে নানা পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাঝ দিয়ে সবশেষে মিং ক্লাস সাবমেরিন তৈরি করতে সক্ষম হয় চীনা নৌবাহিনী।
১৯৭০ সালে চীন সরকার উওচান শীপ ডেভলপমেন্ট ও ডিজাইন ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রতিষ্ঠানটিই ১৯৭৪ সালে টাইপ 033 রোমিও ক্লাস এর ডিজাইন ও কার্যকারীতার উন্নতি ঘটিয়ে টাইপ 035 মিং ক্লাস সাবমেরিন এর ডিজাইন তৈরি করে। কিন্তু নতুন ডিজাইনটিতে অনেক সমস্যা ধরা পড়ে। এ সমস্যাগুলো শুধরিয়ে মিং ক্লাস সাবমেরিনের পরবর্তী ভার্সন টাইপ 035A সার্ভিসে আসে ১৯৮২ সালে। মিং ক্লাস সাবমেরিনের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত টাইপ 035G সার্ভিসে আসে ১৯৯০সালে। আগের ভার্সনটির চেয়ে এই ভার্সনটি ঊইপন, সেন্সর, ডিজাইন সবদিকে থেকেই অনেক এগিয়ে ছিল। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চীন সর্বমোট ১২ টি টাইপ 035G মিং ক্লাস সাব তৈরি করে। বাংলাদেশ নৈবাহিনী টাইপ 035G মিং ক্লাস সাবমেরিনই কিনেছে চীন থেকে।
 
#মিং_ক্লাস_সাবমেরিনের_জেনারেল_ওভারভিউঃ
টাইপঃ এটাক সাবমেরিন
ডিসপ্লেসমেন্টঃ ২১১০ টন (নিমজ্জিত অবস্থায়)
দৈর্ঘ্যঃ ৭৬ মিটার
প্রস্থঃ ৭.৬ মিটার
ড্রাফটঃ ৫.১ মিটার
ডেপথঃ ৭.৬ মিটার
ইঞ্জিনঃ E390ZC ডিজেল ইঞ্জিন, ৫২০০ হর্সপাওয়ার
গতিবেগঃ ১৮ নট/ঘন্টা
ক্রুঃ ৫৭ জন
আর্মানেন্টঃ ৫৩৩ মি.মি. টর্পেডো টিউব।
#বাংলাদেশ_নৌ_বাহিনীতে_সাবমেরিনের_প্রয়োজনীয়তা_ও_কার্যকারীতাঃ
ভৌগলিক অবস্থান ও প্বার্শবর্তী রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসী সমরনীতির কারণে বাংলাদেশের জন্যও সামরিক সক্ষমতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরী। প্বার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারত ইতোমধ্যেই সামরিক দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে গেছে। আরেক প্রতিবেশি মিয়ানমারও সামরিক বাহিনীর দ্রুত আধুনিকায়ন করছে।
মিয়ানমারের অসভ্য ও বর্বর সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের শত্রুতা বহু পুরনো। অন্যদিকে ভারতকে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র বলা হলেও বাস্তবে তা কতটা সত্য, সেটি প্রশবিদ্ধ ব্যপার। আর এসব কারণেই বাংলাদেশের জন্য সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দুটো পুরনো সাবমেরিন কেনা হয়েছে, ভারতের নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলোর সাথে এগুলো পাত্তাও পাবেনা এমন অনেক কথাই শুনছি। কেউ কেউ আবার সব ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে “ভাঙ্গারী মাল” বলেও গালি দিচ্ছেন সাবদুটোকে। তবে সবারই মনে রাখা উচিত যে, বাংলাদেশ আমেরিকা, রাশিয়া নয়। আরো একটা ব্যপার হল আমাদের জন্য এটা কেবলই শুরু। মার্ক মাই ওয়ার্ড। আর দশ বছর পর এরচেয়ে ভাল মানের সাবমেরিন বাংলাদেশ নিজস্ব শীপইয়ার্ডেই তৈরি করবে। তাই কতটুকু ভাল বা খারাপ সে হিসেবে না গিয়ে “নবযাত্রা” ও “জয়যাত্রা” সাবমেরিন দুটোকে সাদরে বরণ করে নেয়া উচিত।
Powered by Blogger.