ঐতিহাসিক 'অপারেশন কটেজ'। জাপানিদের বুদ্ধি দেখলে হতবাক হবেন!!
১৯৪২ সালের ৭ জুন ক্যাপ্টেন 'তাকেজি ওনো'-র নেতৃত্বে ৫০০ জাপানি মেরিন সেনা গভীর রাতে হামলা চালায় আলাস্কার 'কিসকা (Kiska)' নামক দ্বীপে। সেখানে আমেরিকান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে দুই জনকে হত্যা এবং বাকি আটজনকে বন্দী করে তারা। পরে আরো ২০০০ জাপানি মেরিন সেনা এসে ঘাঁটি গাড়ে দ্বীপে। দ্বীপের ক্ষমতা নেন জাপানিজ ইম্পেরিয়াল আর্মির লেফট্যানেন্ট জেনারেল 'কিচিরো হাগুচি'।
.
মিত্রবাহিনীর ভূমির এতো কাছে জাপান এসে ঘাঁটি গেড়েছে দেখে প্রমাদ গুনলো আমেরিকা এবং কানাডা। ঐ দ্বীপে বসে যাতে জাপানি আর্মি আশেপাশের অঞ্চলে অভিযান চালাতে না পারে, তাই এই দুই দেশ যৌথভাবে অপারেশন চালিয়ে দ্বীপটা পুনর্দখল করার সিদ্ধান্ত নিলো। আক্রমণ অভিযানটার নাম দেয়া হলো 'অপারেশন কটেজ'।
.
জাপান দ্বীপটা দখল করার এক বছর দুই মাস পরে ১৯৪৩ সালের ১৫ আগস্ট আমেরিকার ৭ম ডিভিশন এবং কানাডার ১৩তম পদাতিক ব্রিগেড গোপনে ল্যান্ড করলো কিসকা দ্বীপের যে অবস্থানে জাপানিরা আছে, তার উল্টো পাশের এক সৈকতে। সাথে ছিলো ৯৫টা জাহাজ এবং ১৬৮টা বিমান। এগুলো সমানে বোমাবর্ষণ করে চললো দ্বীপে। এর পরপরই দ্বীপের ভিতরে ঢুকে হামলা চালালো পদাতিক বাহিনী। ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে দ্বীপটা দখলে নিতে সক্ষম হলো মিত্রবাহিনী।
তারা এবারে হাই ফাইভ করে হাত মিলিয়ে হতাহতের সংখ্যা হিসাব করতে বসলো। হিসাবে পাওয়া গেলো মিত্রবাহিনীর পক্ষে মারা গেছে ৩০০'রও বেশি সৈন্য। আর জাপানি ইম্পেরিয়াল বাহিনীর পক্ষে মারা গেছে শূন্য (০) জন!
-মানে কী?!
ঘটনা হলো - জাপান এই আক্রমণ চালানোর দুই সপ্তাহ আগেই দ্বীপটা পরিত্যাগ করেছিলো। এতোই গোপনে তারা দ্বীপটা ছেড়ে চলে যায় যে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কিছুই টের পায়নি। সেই ইন্টেলিজেন্সের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাপানিরা দ্বীপটা পরিত্যাগ করার দুই সপ্তাহ পরে মিত্রবাহিনী দ্বীপে আক্রমণ চালায় এবং "ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর" দ্বীপটা দখল করে।
.
কিন্তু উপরের বাক্যের "ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ" অংশটারই তো হিসেব মিলছে না! আসলে কানাডিয়ান এবং আমেরিকান বাহিনী দ্বীপের ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় একে অপরকে শত্রুপক্ষ ভেবে ভুল করেছিলো। ফ্রেন্ডলি ফায়ারে মারা গিয়েছিলো ২৮ জন আমেরিকান এবং ৪ জন কানাডিয়ান। জাপানিরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যাবার আগে পুঁতে গিয়েছিলো একগাদা মাইন। সেই মাইনে বিস্ফোরিত হয়ে ডুবে গিয়েছিলো একটা জাহাজ, যাতে সলিল সমাধি ঘটে ৭১ জনের, আহত হয় আরো ৪৭ জন। এছাড়াও জাপানিদের পুঁতে যাওয়া বুবি ট্র্যাপে মারা যায় বহু সৈন্য। বাকিরা স্রেফ ঐ দ্বীপের পাহাড়, বন এবং আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চলে হারিয়ে যায়।