ইউরোফাইটার টাইফুন : সামরিক বিষয়



বাংলাদেশের ডিফেন্স লাভারদের মনে এখন শুধু রাফাল আর ইউরোফাইটারের উড়োউড়ি। কিন্তু আমরা কি এই দুই মহারথীর শক্তিমত্তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখি? আজকের পোস্ট তাই ইউরোফাইটারকে নিয়ে৷ অতপর পর্যায়ক্রমে রাফাল এবং বাংলার আকাশের প্রেক্ষিতে এই দুটির তূলনামূলক বিশ্লেষণ দিয়ে শেষ করবো।
ইউরোফাইটারের জন্মের পেছনের ইতিহাসটা খুব মসৃণ নয় ।প্রথমে এর পেছনে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইটালি থাকলেও মাঝপথে ফ্রান্স প্রজেক্ট থেকে বেরিয়ে যেয়ে নিজেদের ড্যাসল্ট রাফাল তৈরির কাজে হাত দেয়৷ প্রায় ৪-৫ টি ভিন্ন নামের প্রজেক্ট ভাংগা গড়ার মধ্যে দিয়ে সবশেষে ১৯৯৪ সালে এটি আলোর মুখ দেখে। সার্ভিসে আসে ২০০৩ সালে। দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতার গ্যাড়াকল বাদ দিয়ে চলুন জানা যাক এর আসল সক্ষমতা গুলো সম্পর্কে।


ইউরোফাইটারে রয়েছে ইউরোজেট২০০০ ইঞ্জিন যা একে সুপারক্রুজ স্পিডে কোন ধরনের হিটিং ইস্যু ছাড়া দীর্ঘক্ষণ ওড়াতে পারে। এছাড়া ইউরোজেট২০০০ ইঞ্জিন ১০০০ ঘন্টা ফ্লাই করলেও এর কোন মেইন্টেনেন্স লাগে না যা খুবই আর্শ্চযজনক৷ এমনকি ১৪০০ ঘন্টা ফ্লাই করার পরেও এই ইঞ্জিন একদম নতুন ইঞ্জিনের মত সার্ভিস দেয়।
এর ডিজাইন মূলত করা হয়েছে একটি এয়ার সুপিরিয়র ফাইটার হিসেবে। ডাবল ইঞ্জিনের এই বিমানটির এয়ারফ্রেমে আছে ৭০% কার্বন ফাইবার ও ১২% গ্লাস ফাইবার। এয়ারফ্রেমের লাইফস্প্যান হচ্ছে ৬০০০ ঘন্টা। খুবই উন্নত বিল্ড কোয়ালিটির এই ফ্রেম স্টিলথ না হলেও এর সামনের অংশের দুটি এয়ার ইনলেটকে আকারে বেশ বড় করা হয়েছে যাতে সামনে থেকে ইঞ্জিন রাডারে ধরা না পরে। (এটিই রাডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট)। এছাড়াও অন্যান্য টার্গেট যেমন ফিন, উইং, ক্যানার্ড যাতে রাডার রশ্মি রিফ্লেক্ট করে তার ব্যবস্থা রয়েছে।

ইউরোফাইটারের রয়েছে পাইরেট ইনফ্রারেড সেন্সর। এর সাহায্যে এটি এর সীমার মাঝে খুব সামান্য তাপের তারতাম্য ও ধরতে পারে। ফলে এটির কাছে সহজেই শত্রুবিমানের হিট সিগনেচার ধরা পরে। এটি একইসাথে ২০০ টি টার্গেট ট্র‍্যাক করতে পারে এবং মূল রাডারের সাহায্য ছাড়াই চলতে পারে। অর্থাৎ রাডার অফ করেও প্রয়োজনে সার্চ করা সম্ভব। আবার টাইফুনের রাডার কিংবা AWACS এর রাডার থেকেও তথ্য নিয়ে ট্র‍্যাক করতে পারে। প্রধান রাডারের সাথে এর সমন্বয়ের মাঝে কোন বিমান একবার ধরা পড়লে তার নিস্তার নেই৷ এই পাইরেট সেন্সরের পাশাপাশি মূল রাডার হিসেবে কাজ করে ক্যাপটর-ই AESA রাডার।. যা অন্যান্য AESA রাডারের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ সাধারণ রাডারের মত এটি শুধু সামনেই নয় বরং ৯০ ডিগ্রী কোণে পাশাপাশিও সার্চ এন্ড ট্র‍্যাক করতে পারে।



ইউরোফাইটার টাইফুনের ককপিটে আছে মোট ছয় ধরনের ডিসপ্লে যা একে যেকোনো পরিস্থিতিতে এয়ারক্রাফটের ভেতরের বাইরের যেকোনো তথ্য সাথেই সাথেই প্রদর্শন করে। শুধু তাই না, টাইফুনের পাইলট চাইলেই হেলমেটের কাচেই বিমানের সমস্ত অস্ত্রের ডিটেইলস দেখতে পারবেন। দিনে রাতে যেকোনো সময় পাইলট শুধুমাত্র শত্রু বিমানের দিকে তাকিয়েই মিসাইল লক করতে পারবেন।
টাইফুনের এয়ারফ্রেমের যে ডিজাইন তাতে করে শুধু মাত্র পাইলটের নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে একে ওড়ানো বেশ কঠিন। আর তাই একে আকাশে ভাসিয়ে রাখতেই সবসময় 'কেয়ারফ্রি' কোয়াড্রোপ্লেক্স ফ্লাই বাই ওয়্যার কাজ করে। আপাতদৃষ্টিতে এটা খারাপ মনে হলেও এই ডিজানই টাইফুনকে করে তুলেছে এত বেশি ম্যান্যুভারেল। শুধু তাই নয়, কোন কারণে যদি পাইলট বেহুশ হয়ে যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ হয় তাহলে ফ্লাইট কন্ট্রোল সাথে সাথে নিজে থেকে বিমানের দায়িত্ব নিয়ে নেবে৷ এবং ৩০০ নট গতিবেগে খুবই স্টেবল ভাবে বিমানকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এছাড়াও পাইলটের কাজ সহজ করার জন্য এর ফ্লাইট কন্ট্রোলে আছে ভয়েস ইনপুট সিস্টেম। ছোটখাটো অনেক কাজই পাইলটের মুখের কথায় ফ্লাইট কন্ট্রোল নিজে থেকে করে থাকে যাতে পাইলট আসল কাজে মনোযোগ দিতে পারে।

এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে আছে প্রিটোরিয়ান ডিফেন্সিভ এইড সাব-সিস্টেম। এই সিস্টেমে আছে রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার, লেসার ওয়ার্নিং রিসিভার, মিসাইল ওয়ার্নিং সিস্টেম,। আর এই প্রত্যেকটি থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে প্রয়োজনে AWACS থেকে পাওয়া তথ্য সম্বনয় করে পাইলটকে উপস্থাপন করা হয়। ফলে পাইলট সার্বিক সিধান্ত নিতে পারে। এছাড়াও রয়েছে চ্যাফ, ফ্লেয়ার এবং ইলেকট্রনিক কাউন্টার মেজার সিস্টেম।

উপরের এই দীর্ঘ বর্ণনা আসলে শুধুনাত্র টাইফুনের নিজের সক্ষমতার বর্ণনা। এর সাথে যখন মিটিওর, ব্রিমস্টোন, আইরিস টি, র্স্টম শ্যাডোর মত ভয়াবহ কিছু অস্ত্রের সংযুক্তি ঘটবে তখন এর সক্ষমতা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেটা আরেক পর্বের জন্য তোলা থাকুক না হয়। পোস্টের শেষ মার্কিন এয়ারফীর্সের প্রাক্তন চীফ অফ স্টাফ জেনারেল জন পি জাম্পার এর বক্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই  "The Eurofighter is certainly, as far as smoothness of control and ability to pull. Veryy Impressive. All absolutely top notch."
Powered by Blogger.