জার্মান ব্যাটলশীপের নয়মাসের যুদ্ধজাহাজের গল্প


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ব্যাটলশীপ বিসমার্কে ক্ষমতা ছিল সেই আমলের একটি সম্মিলিত ব্যাটল গ্রুপের সমান।আমাদের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের সেরা উদ্ভাবিত সেরা অস্ত্র। এটি যেমন ছিল হিংস্র তেমনি ছিল গতিশীল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানীর তৈরী সবচেয়ে বড়[৫১ হাজার টন] ও অন্যতম শক্তিশালী জাহাজ হচ্ছে ব্যাটলশিপ বিসমার্ক।

এই জাহাজটি মাত্র ৯ মাস সার্ভিসে থাকলেও এই সময়টুকুতে মিত্র শক্তির নৌবাহিনীর অন্যতম মাথা ব্যাথার কারণ ছিল। এই ছোট্ট সার্ভিস জীবনে,এটির সবচেয়ে বড় কৃতীত্ব হচ্ছে ব্রিটিশ ক্যারিয়ার ফ্লিট ফোর্স-এইচ এর ক্যারিয়ার ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপ ৪৭ হাজার টনের এইচ এম এস হুডকে ডুবিয়ে দেয়া।

 এই এইচ এম এস হুড ছিল এক কথায় রয়্যাল নেভি তথা মিত্র শক্তির গর্ব এবং এর সম্পর্কে মিত্র শক্তির এত উচ্চ ধারণা ছিল যে একে "দ্যা মাইটি হুড" নামেও ডাকা হতো। তো এই হুডকে ডুবিয়ে দেয়ার ফলে মিত্র পক্ষের আত্মসম্মান এককথায় ধূলোয় মিশে যায় এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে যেকোনো মূল্যে এই বিসমার্ককে ধ্বংস করতেই হবে। এইচ এম এস হুডকে ডুবানোর পরে ব্রিটিশরা বুঝতে পারে বিসমার্ক কি জিনিস। তারা ভাবতে থাকে এই বিসমার্ককে ডুবাতে না পারলে তাদের পুরো নৌ ফ্লিট হুমকির সম্মুখিন হবে।এবং বাস্তবিক ক্ষেত্রেই হয়েছিলো তাই।

এই বিসমার্ক একাই পুরো ক্যারিয়ার ফ্লিটকে ড্যামেজ করেছিলো। তো তারা সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে অতি দ্রুত একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, তিনটি ব্যাটেলশিপ, তিনটি ক্রুজার ও ছয়টি ডেস্ট্রয়ারকে নিয়ে একটি ব্যাটল গ্রুপ তৈরী করে বিসমার্ককে ধ্বংস করতে পাঠানো হয়। যাতে এরা আহত বিসমার্কে আক্রমণ করে একে ডুবিয়ে দিতে পারে এবং এরা ২৭ মার্চ ১৯৪১ সালে উত্তর আটলান্টিকে বিসমার্ককে আক্রমণ করে। 

এসময় এইচ.এম.এস. হুডের সাথে যুদ্ধের সময় বিসমার্কে হওয়া ক্ষতিগুলো ঠিক করানো জন্য এবং যুদ্ধে বেশির ভাগ শেল খরচ হয়ে যাওয়ায় রিফুয়েলিংয়ের জন্য এটি ফ্রান্সের দিকে যাচ্ছিল। অর্থাৎ যখন এর উপর আক্রমণ করা হয় তখন এর যুদ্ধ করার ক্ষমতা খুব কমই অবশিষ্ট ছিল। ফলে ফলাফল কি হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। 

বিসমার্কের পক্ষথেকে শেষবার যে রেডিও সিগন্যাল পাঠানো হয়েছিল তার বাংলা করলে অনেকটা এরকম হয় "আমাদের জাহাজ ভারি শেলিংয়ের কারণে ধ্বংসপ্রায় এবং আমাদের সবগুলো ব্রয়লারও ধ্বংস হয়ে গেছে ফলে আমরা নড়তেও পারছি না। তবুও আমরা আমাদের সর্বশেষ শেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করে যাব...ফিউরার দীর্ঘজীবি হউন"।

-লেখাঃ আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে সোহেল আদনান।
Powered by Blogger.