বায়ু বিদ্যুৎ এবং বাংলাদেশ উজ্জ্বল সম্ভাবনা


বিদুৎ মানুষের এক অপরিহার্য জিনিস।আমাদের বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বৈদ্যুৎতিক বাল্ব জ্বালানো হয় ১৯০১ সালে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র রেন্টাল।এই রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেননা এইসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ২০-৩০ বছর। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের দরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইতোমধ্যে আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানাধীন।নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলতে বোঝায় পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।বর্তমান বিশ্বের উন্নতরাষ্ট্র গুলো এই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বেশি ঝুঁকছে।বিশেষ করে ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র গুলো বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প খুবই জনপ্রিয়।কেননা এইসব প্ল্যান্টে ঝুঁকি কম এবং নিরাপদে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।এবং কোন পরিবেশ দুষণ নাই ।এবং এসব প্ল্যান্টের আয়ুষ্কালও বেশি। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?.
আপনারা হয়ত কোন মুভি বা টিভিতে সমুদ্র বা বড় কোন খোলা স্থানে তিন পাখাওয়ালা খাম্বার ন্যায় একটি বস্তু দেখেছেন।এগুলোকে বলে টারবাইন।প্রতিটি টারবাইনে তিনটা করে পাখা থাকে।এগুলোর উচ্চতা একশো ফুট থেকে ৪১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং পাখার আয়তন ৫০ থেকে ১১০ ফুট হয়ে থাকে।মূলত বায়ুর গতিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইনের জেনারেটর ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বায়ু যখন টারবাইনের ব্লেডের মধ্যে দিয়ে যায় তখন বায়ুর গতিশক্তি ঐ ব্লেডগুলোকে ঘুরায়। আর ঐ ব্লেডগুলোর সাথে রোটর সংযুক্ত থাকে যা ব্লেডগুলোর ঘূর্ণনের ফলে সক্রিয় হয়। এই রোটর জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে যার ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
সাধারণত যেসব জায়গায় বাতাসের গতিবেগ ২.৩ থেকে ২. ৫ মিটার/ সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/ সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুত উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব।আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৭ মিটারের চেয়েও বেশি।যার ফলে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এখন আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত একটি টারবাইন দিয়ে ৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।নরমালি আমাদের দেশের উপকূলীয় এলাকায় দশ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে টারবাইনের পরিমাণ উপকূলে বাড়িয়ে এটিকে বিশ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল সহ মোট ১২০০ কিলোমিটার এলাকা থাকা সত্ত্বেও এখন এই উৎসের ব্যবহার আমরা ততটা করতে পারেনি৷ তবে ২০১৫ সালে ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি চুক্তি সই হয়েছে৷কিন্তু সেটারও তেমন অগ্রগতি দেখা যায় নি।

বর্তমান বাংলাদেশে কুতুবদিয়া ও ফেনীতে বায়ু বিদ্যুতের দুটি প্রকল্প চালু আছে। কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কেন্দ্র এবং ফেনীতে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্র রয়েছে। তবে এগুলোর প্রযুক্তির অনেক আগের এবং বেশ পুরনো ।বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশ উপযুক্ত জায়গার অভাবে সাগরের ২০ কিলোমিটার মধ্যেও টারবাইন বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেছে।

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে খুবই আন্তরিক।এনআরইএলের মতে দেশের ৯টি স্থান বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে খুবই উপযোগী।তারা এসব অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতার টাওয়ার স্থাপন করে বায়ুপ্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এক বছর থেকে টানা ৪৩ মাস পর্যন্ত তারা তথ্য সংগ্রহ করে। বর্তমানে ডেনমার্কের সহয়তায় মহেশখালী নদীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত কক্সবাজারের কুরুশকুলে বঙ্গোপসাগরের তীরে প্রতিটি দুই মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩০-৩৫টি উইন্ড টারবাইন স্থাপন করা হচ্ছে।চট্টগ্রাম পারকির চর এলাকায়ও ৬০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।এছাড়াও কক্সবাজারের ইনানি এবং বাগেরহাটের মংলায় তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রর ক্ষমতা হবে সমান ৫০ মেগাওয়াট।

লেখাঃ আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে সোহেল আদনান।
Powered by Blogger.