আল-আকসা সংঘর্ষের সর্বশেষ আপডেট ও এই ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের অবস্থান



ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যেকার রক্তাক্ত ইতিহাস আশা করি আপনাদের অজানা নয়। সেই ইতিহাসেই নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়েছে আবারো। গত কিছুদিন যাবত দুই পক্ষের আক্রমণ, পালটা আক্রমণে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। ইজরায়েলিদের আক্রমণে মারা গেছে অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি। যার মাঝে ছিল ১২ জন শিশু। অপরদিকে ৫ জন ইজরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছে৷ দুই পক্ষ মিলিয়ে আহত হয়েছে ৭০০ এর অধিক।

তবে ইজরায়েলের হতাহতের সংখ্যা এত কম হওয়ার কারণ আর কিছু নয় বরং তাদের বিশ্বসেরা প্রযুক্তি। ইজরায়েলের ভূমিতে আঘাত হানতে ছুটে গিয়েছিল অগণিত মিসাইল। তবে এর সঠিক সংখ্যা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। কিন্তু তার বেশিরভাগই প্রতিহত করেছে আয়রন ডোম, ডেভিড'স স্লিং এর মত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যদিও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, নিহত হয়েছেন দুইজন ইজরায়েলি নাগরিক, ধংস্ব হয়েছে তেলের শোধনাগার, স্কুলবাস সহ কিছু সম্পদ।
কিন্তু বৈশ্বিক অবস্থান কি এই বিষয়ে? বিশ্বনেতারা কি বলছেন এবং কিই বা করছেন এই বিষয়ে?
উত্তর হল, কিছুই করছেন না। বরাবরের মত এবারো সব পদক্ষেপ বিবৃতি অবধিই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গতানুগতিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ব্যাপারে 'গভীর উদ্দেগ' প্রকাশ করেছে। ইজরায়েলের উপর করা মিসাইল আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাদের ভাষ্যমতে তারা জেরুজালেমে 'শান্তি ফিরিয়ে আনতে' সদা তৎপর থাকবে। এদিকে আমাদের প্রতিবেশী ভারতীয়রা ইজরায়েলকে সমর্থন করে দেদারসে টুইট করছে। কোন ভারতীয় দ্বিমত পোষণ করলেও তাদের যে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে তাও বেশ কিছু ভাইরাল স্ক্রিনশটের বদৌলতে পরিষ্কার।

অপরদিকে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রেই এ নিয়ে ঝড় চলছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি রাজপথে নেমে এসেছে লেবানন, তুরুষ্ক ও কুয়েতের নাগরিকেরা। লেবাননে ফিলিস্তিনে পক্ষে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, তুরষ্কে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে শতাধিক লোক জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছে, অপরদিকে শতাধিক কুয়েতী তাদের দেশের সংসদ ভবনের সামনে জমা হয়েছে৷ এছাড়াও টুইটার ফেসবুক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও চলছে হ্যাশটাগ, পোস্ট কমেন্টের জোয়ার৷ এর পাশাপাশি ওআইসি, আরব লীগ, মুসলিম লীগ এর মত সংগঠন গুলোও এ ইস্যুতে "তীব্র নিন্দা" প্রকাশ করেছে।

প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের অবস্থান এতে কী?
বরাবরের মতই বাংলাদেশ তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে প্যালেস্টাইনের পক্ষে দাড়িয়েছে। গত শনিবারই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন। এবং আজ আবারো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে সকল সন্ত্রাসমূলক আক্রমণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের মত একটি দেশের বরাবর এমন শক্ত অবস্থান অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ তার জন্মকাল থেকেই এই বিষয়ে কঠোর নীতি অবলম্বন করে আসছে৷ ইজরায়েল নামক দেশটির সাথে বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এদেশের পাসপোর্টে লেখা থাকে "THIS PASSPORT IS VALID FOR ALL COUNTRIES EXCEPT ISRAEL". সেই নব্বই এর দশকে প্যালেস্টাইকে উৎসর্গ করে বাংলাদেশ ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের সভাতে প্যালেস্টাইনের পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার কন্ঠগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ৷ ফিলিস্তিনি ক্যাডেটদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সবসময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে দেশটির সঙ্গে৷ প্যালেস্টাইন ইস্যুতে অস্বাভাবিক কঠোরতা যেন এদেশের পররাষ্ট্রনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ আমরা বাংলাদেশের এ অবস্থানের জন্য গর্ববোধ করি।
Powered by Blogger.