কোয়াড এশিয়ার চারদেশের একটি জোট
কোয়াড কি?
কোয়াড বা QUAD এশিয়ার চারদেশের একটি জোট।যার পুরো নাম কোয়াড্রল্যাটারাল সিকিওরিটি ডায়ালগ। মূলত এশিয়ার চীনের ক্ষমতা এবং অগ্রাসন রোধ করার জন্যে ২০০৭ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবের নেতৃত্বে পথ চলা শুরু চারটি দেশের।এদের সদস্য হলো ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা।ইউরোপে যেমন আমেরিকা রাশিয়াকে দমন করার জন্যে ন্যাটো প্রতিষ্টা করে তেমনি এশিয়ারও চীনকে দমন করার জন্যে আমেরিকা কোয়াড প্রতিষ্টা করে।তাই এটিকে আপনি এশিয়ার ন্যাটো বলতে পারেন।তবে এটি ন্যাটোর মতো কোন সামরিক সংঘটন না।দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে রুখে দেওয়া কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য।অনেকেই কোয়াডকে সামরিক সংগঠন মনে করেন।
বিশেষ করে কিছুদিন আগে যখন চীন বাংলাদেশকে কোয়াড সম্পর্কে সতর্ক করেছিল তখন অনেকেই কোয়াডকে সামরিক সংগঠন বলেছিল। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি সামরিক সংগঠন না।অনেক বিশ্লেষক একে ভবিষ্যতের এশিয়ান ন্যাটো বলে।কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ন্যাটোর গুরুত্ব কমে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেরও ন্যাটোর প্রতি তেমন কোন আগ্ৰহ নেই। কিন্তু এশিয়ায় চীনের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চল সামরিক জোট গড়ে তুলতে ব্যাপক আগ্ৰহী।হয়তো তাদের পরিকল্পনা কোয়াডকে নিয়েই।
*কোয়াড এবং বাংলাদেশ:
বাস্তবিক অর্থে চীন বিষয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে, আমেরিকা সরাসরি আমাদের ইস্যু গুলোর উপর হস্তেক্ষেপ না করে ভারত বা কোয়াড রাস্ট্র গুলোর মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করে থাকে।সম্প্রতি চীনা রাস্ট্রদূত বলেছেন বাংলাদেশের যদি কোয়াডে অংশগ্রহণ করে তাহলে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ হবে।তার মতে চীন সব সময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চীনবিরোধী একটি ছোট গ্রুপ।
আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চাই, অর্থনৈতিক প্রস্তাবের কথা বললেও এতে নিরাপত্তার উপাদান আছে। এছাড়াও গতমাসে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকা সফর করার সময় কোয়াড, আইপিএস বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন। তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশ কী বলেছে তা জানায় নি চীনের রাষ্ট্রদূত।দক্ষিণ এশিয়ায় এখন চীন বনাম ভারত একধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। ভারত মহাসাগরে ভারতের একটা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সমর্থন রয়েছে। তাই ইন্দো-প্যাসিফিকে যোগ দেওয়া কতটা ঠিক হবে, তা ভাবনার বিষয়।
এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয় জড়িত, একটু ভুল হলে চরম মাশুল গুনতে হবে। ২০১৮ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে সবাইকে বেনিফিট করার কথা বলা হয়।আসলে আমাদের উচিত হবে আমেরিকা, চীন ও ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি সমন্বয় করা।
শক্তিশালী তিনটি দেশকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশকে তার স্বার্থ উদ্ধার করতে হবে।এই বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিকে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে আমরা চাই যে, এই কৌশলে যদি ইফেক্টিভিটি বাড়াতে হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। এই ইস্যুতে টাকা খরচ করতে হবে, শুধু মুখে বললেই হবে না, তাদের বিনিয়োগ করতে হবে।’
আমাদের উচিত এসব কোয়াড রাস্ট্র গুলোর রেষারেষি থেকে দূরে থাকা।এবং চক্ষুশূল না হওয়া। অবশ্য এই বিষয়ে আমাদের বিজ্ঞ সরকার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের চেয়েও ভালো বুঝেন।