স্টক্সনেট ভাইরাস ইরানের সাইবার হামলার মূল হাতিয়ার

স্টক্সনেট ভাইরাস


♦বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে স্মার্ট ওয়েপন হচ্ছে সাইবার হামলা। এটি যেমন বেসামরিক সেক্টরে করা যায় তেমনি সামরিক ক্ষেত্রে আরো ভয়াবহ।

আজকাল বিভিন্ন জায়গায় কারণে অকারনে বিভিন্ন সাইবার আক্রমণ চলছে । গত কয়েক বছর বিশ্বও অনেকবার সাইবার আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছে।সম্প্রতিককালে ইরানে নাতাঞ্জের কাছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতামূলক সাইবার হামলা হয়েছে। হামলার ফলে অজ্ঞাত সংখ্যক অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সেন্ট্রিফিউজ হলো সেই যন্ত্র যেগুলো দিয়ে ইউরেনিয়াম পরিশোধন করে তা পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। এই ঘটনায় কেন্দ্রটি বর্তমানে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।তবে হামলা যে ইসরায়েল করেছে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

♦ইজরায়েল কিভাবে করবে ইরানে পারমাণবিক কেন্দ্রে সাইবার হামলা করেছে?
আমরা বেশিরভাগ মানুষজন সাইবার আর্মস সম্পর্কে খুবই কম জানি।আজকে আমরা কথা বলবো বিশ্বের অফিশিয়ালি প্রথম এমন একটি অস্ত্রের নাম যেটি বন্ধ করে দিয়েছে ইরানের নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ।এটি হলো একটি ভাইরাস।যেটির নাম Stuxnet-স্টক্সনেট ভাইরাস।এটি একটি কম্পিউটার ওয়ার্ম(worm) যেটি কিনা আপনাদের অজান্তেই কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং তাড়াতাড়ি অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে যাবে।স্টাকসনেট ভাইরাস মূলত একটি কম্পিউটার কৃমি।আমেরিকা আর ইসরায়েলের যৌথভাবে এটি তৈরী করেছে।এটি প্রেসিডেন্ট বুশের এর সময়কাল থাকতে তৈরি করা হয়েছিলো।এবং বারাক ওবামার সময়কালে এর ব্যাপ্তি ঘটে ।এরকমও বলা হয় আমেরিকা আর ইসরায়েলের সবচেয়ে সফল প্রজেক্ট এর মধ্যে একটি হলো এটি।যদিও এর আগেও অনেক Worm বিভিন্ন সময় ডেভেলফ করা হয়েছিল , তবে একে আলাদাভাবে রাখার কারণ হচ্ছে এটি শুধু নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ বিকল করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে ধরানা করা হয় ।


♦কিভাবে কাজ করে Stuxnet ভাইরাস?
প্রথমত আপনাদেরকে কম্পিউটার সম্পর্কে কিছু ধরনা থাকতে হবে। যেমন PLC। এটি হলো একটি ডিজিটাল কম্পিউটার যেটি কিনা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে মেশিন কন্ট্রোল বা অপারেটের কাজে ব্যাবহার হয় । এই PLC বা Programmable logic controller দ্বারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মেশিনকে বা তাদের সাপ্লাই চেইন কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এই PLC আবার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করা হয়। এই পুরো দুনিয়ায় বিশেষ করে আমাদের এশিয়া মহাদেশে কম্পিউটার গুলো মাইক্রোসফট অপারেটিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে "Stuxnet" এর কাজ আরও সহজ করে দেয় ।

Worm এর একটি ভয়ংকর দিক হচ্ছে এটি সহজেই কোন পেনড্রাইভ বা ফাইলের মাধ্যমে অন্য কোন কম্পিউটারে ছড়িয়ে দেওয়া যায় । এটি ভাইরাসের মত তৎক্ষণাৎ আক্রমণ শুরু করে না । বরং এটি মূলত সবচেয়ে বেশী ব্যাবহার করা হয় ইউজারদের ইনফরমেশন কালেক্ট করার জন্য । মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমে একটি Siemens Step7 নামক একটি সফটওয়্যার থাকে ।

"Stuxnet" যখন কোন কম্পিউটারে প্রবেশ করে তখন সে সর্বপ্রথম এই সফটওয়্যার টি খুঁজে বের করে এর মধ্যে থেকে সে ইউজারদের ইনফরমেশন বের করা শুরু করে । তারপর সে কম্পিউটারকে উল্টাপাল্টা কমান্ড দিতে থাকে, এবং খুব দ্রতই নিউক্লিয়ার সেন্ত্রিফিউজকে বাধ্য করে খুব দ্রুত স্পিন খাওয়ার জন্য যাতে তারা নিজেদের পৃথক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সহজ করে বললে সেন্ট্রিফিউজগুলিকে আরও দ্রুত এবং দ্রুত এগিয়ে যেতে এটি সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কমান্ড করে।

সর্বোপরি,সেন্ট্রিফিউজ গুলোর ঘূর্ণনগুলি এত দ্রুতভাবে বেড়ে যায় যে মেশিনগুলি শারীরিকভাবে ভেঙে যায়।। ইরানের ৫ ভাগের ১ ভাগ নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ এই ভাবে অকেজো হয়ে পড়ে এবং ইরানের নিউক্লিয়ার কেন্দ্র গুলোতে কর্মরত প্রায় ৬০% কম্পিউটার এটি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
২০০৫ সাল থেকে এই worm এর ডেভেলপ শুরু হইলেও জনসমক্ষে প্রথম ২০১০ সালে আসে যখন ইরানের এইরকম পরিস্থিতি শিকার হয় । এই দুর্যোগ থেকে প্রতিরক্ষা রক্ষা করার জন্য ইরান তাৎক্ষণিক একটি টিম গঠন করে । ততদিনে প্রায় ৩০,০০০ আইপি অ্যাড্রেস এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

এবং পরে সেই টিম বের করে যে যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার তারা তাদের নিক্লিউওয়ার রিঅ্যাকটর কম্পিউটারে ব্যাবহার করা হচ্ছে (Siemens SCADA অ্যান্টিভাইরাস ) তার মধ্যে একটি এম্বেডেড কোড আছে যেটি ওই ভাইরাসকে নির্মূল করার বদলে ওই worm ভাইরাসকে আপডেট করছে । পরে ইরানকে নিজেদের একটি সিস্টেম তৈরি করতে হয় যেটি সব গুলা কম্পিউটারকে চেক করে।

অনেক মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে এই আক্রমনের পিছনে ইসরায়লেরে ইউনিট ৮২০০ এর হাত রয়েছে এবং ২ দেশ (আমেরিকা আর ইসরায়েল ) এর সম্পর্কে অফিশিয়ালি কোন কিছু বলেনি । তবে জুলাই ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেন প্রথমবারের মত বলেন এটি বানানোর পিছনে এই ২ টি দেশের হাত রয়েছে ।

এর আরও অনেকগুলা ভার্সন উপস্থিতি আভাস পাওয়া যাচ্ছে তবে অফিশিয়ালি এর কোন প্রচার হয়নি ।বর্তমানে ইরানে যে সাইবার হামলা গুলো হচ্ছে, তা মূলত এটি আপডেড ভার্সনের মধ্যেমে করা হচ্ছে। এই সাইবার হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম আরো ১০ বছর পিছিয়ে গেছে।


নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের  ইউটিউব চ‌্যানেল Shohan MonsteR
Powered by Blogger.