মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা। বিশ্লেষনমূলক পোষ্ট।

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা।

লিখাটা আমি কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না।আমার লিখার প্রধান ইস্যু মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা আমাদের সবার জানা।বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে লাশের স্তুপ এবং অস্ত্র পরীক্ষার স্থান হয়ে গেছে।শুধু আমেরিকার গোলামি করা কয়েকটি রাষ্ট্র ছাড়া।আফগানিস্থান,সিরিয়া,লিবিয়া, ইরাক,ইয়েমেন,গাজা,মিসরের এমন কোন স্থান নেয়,যেখানের মাঠি থেকে বারুদের গন্ধ উঠবেনা।মধ্যপ্রচ্যের প্রত্যেকটি দেশ আজ গৃহ যুদ্ধে জর্জরিত। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটা নগরী আজ ধব্বংস স্তুপে পরিনত।এ সব কিছুর মূলে রয়েছে আমেরিকা এবং ন্যাটো। কিন্তু মধ্যপ্রচ্যে কি চাই আমেরিকা???। উত্তরটা খুব সহজ।অধিপত্য,অস্ত্র ব্যাবসা,তেল এবং খনিজ সম্পদ। আমেরিকান ইউরেনিয়ামের গোলায়
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক এলাকা দূষণগ্রস্ত। তৎকালিন আমলে যেসব রোগব্যাধির অস্তিত্ব ছিল না তা আবার ফিরে এসেছে।ইরাক যুদ্ধে ১১+ লাখ এবং অন্য দেশ গুলোতে প্রায় ৭.৫ লাখ লোক নিহত হয়। যুদ্ধের লক্ষ্য একটাই,মধ্যপ্রচ্যে বিশাল তেলের আধার গ্রাস করা এবং ইসরাইলের ঘোরতর শত্রুকে শেষ করে দেয়া। সেজন্যই ইরাকের ধ্বংসদশা দেখে ইসরাইলী নেতা এরিয়াল শ্যারণ তখন সদম্ভে বলেছিলেন: ‘তেহরান যাওয়ার পথটা বাগদাদের মধ্য দিয়ে গেছে।’ । যুদ্ধ শুরু করা ও দীর্ঘস্থায়ী করার মধ্য দিয়েই মার্কিন
অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। যুদ্ধের সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যুদ্ধ যদি শুরু না
হয়, তাহলে মার্কিন অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব আসবে না। কেননা মার্কিনি তৈরি কোনো পণ্য এখন আর বিশ্ববাজারে দাঁড়াতে পারে না শুধু দালালি আর অস্ত্র ব্যাবসা ছাড়া। সহজলভ্য চীনা পণ্যে খোদ মার্কিন
বাজার এখন সয়লাব। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল সারা বিশ্ব কর্তৃত্ব করত। এখন চীন , ভিয়েতনাম , বাংলাদেশ আর ল্যাতিন আমেরিকার তৈরি পোশাকের সহজলভ্যতার
কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই নিজেদের তৈরি পোশাক পাওয়া যায় না।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে চাই যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা এবং গঠনতন্ত্রের চাদর দিয়ে সম্পদ লুন্টন করা। যেমনটি
আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ইরাকে। ইরাক যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনের নামে আমেরিকান কোম্পানিগুলো
সেখানে এককভাবে কাজ পেয়েছে। আর ইরাকের মালিকি সরকার তেল বিক্রি করে মার্কিনি কোম্পানিগুলোর
দেনা পরিশোধ করেছে। এতে করে একদিকে মার্কিনি কোম্পানিগুলোর অর্জিত অর্থ মার্কিন বাজারে
প্রবেশ করেছে, যা অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেছিল। এখন ইরাকের পুনর্গঠন এক রকম শেষ। সেনাবাহিনী সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে
অনেক আগেই। এমনকি ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকেও সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। তাহলে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল হবে কীভাবে? তাই যুদ্ধ চাই।অস্ত্র ব্যাবসা চাই।
যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার বারাক ওবামা সরকার জেদ ধরেছে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার
অনেকটা ইরাক, লিবিয়া এবং আফগানিস্তানের সরকার প্রধানদের মতোই। পাশাপাশি, তাদের চাটুকার সৌদি আরবকে দিয়ে ইয়েমেনের সরকার প্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সামরিক আক্রমন অব্যাহত
রেখেছে। অথচ বাশার আল আসাদ সিরিয়ার বৈধ সরকার। কর্নেল গাদ্দাফিও ছিলেন লিবিয়ার বৈধ সরকার। সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ইরাকের বৈধ সরকার। বিরোধীদের আন্দোলন তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আন্দোলনের জন্য
আমেরিকা একটা দেশকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আক্রমণ করে তার সরকার প্রধানকে হত্যা করতে পারে না। প্রসঙ্গত, ব্রিটেন-ফ্রান্স-তুরস্ক-জার্মানী-সৌদি আবর এবং কাতারকে নিয়ে জোট গঠন করেছিল আমেরিকা।
এ জোটের মুখ্য উদ্দেশ্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ইসলামিক
স্টেট বা আইএস তথা আইএসআইএস-কে প্রতিরোধ করা ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ এখনও অব্যাহত আছে
সিরিয়ায়। এক কোটি ৮০ লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত সিরিয়ার
এখন এক কোটি ১০ লাখই উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ায় বাশারবিরোধী একটি রাজনৈতিক মোর্চা তথা প্রবাসী সরকার গঠন করা, বিদ্রোহী সেনাবাহিনী গঠন ও তাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র স্বয়ং। এটা কোনো রাখঢাকের বিষয় ছিল না। কিন্তু এই যুদ্ধ সিরিয়ার
অর্থনীতিকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। যে সিরিয়া ছিল খাদ্যে ও উৎপাদিত পণ্যে স্বয়ংসম্পন্ন একটা
দেশ, সেই দেশটি এখন খাদ্য ও পণ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বেকার সমস্যা যেখানে যুদ্ধের আগে তেমন একটা ছিল না , এখন তা শতকরা ৬০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। যেখানে যুদ্ধের আগে তেল উৎপাদিত হতো দৈনিক ৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল প্রতি দিন, সেখানে এখন উৎপাদিত হয় মাত্র ২০ হাজার ব্যারেল।
শুধু তেল উৎপাদনেই ক্ষতির পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলার।
পূর্বে আমেরিকা ন্যাটো বাহিনী দিয়ে লিবিয়া আক্রমণ করে এবং এর প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যা করে। এখন সরকারবিহীন রাষ্ট্র হচ্ছে লিবিয়া। কয়েক ডজন উপজাতির নিবাস হচ্ছে দেশটি। সেখানে কেউ কাউকে মানে না। আইন-কানুন নেই
বললেই চলে। একনায়ক হলেও তারাই ছিলেন লিবিয়ার উপযুক্ত শাসক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে দেশটিকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে বিদ্রোহীদের দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ফলে লিবিয়ায় যে শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমারা তা পূরণ করতে পারেনি। তারা চেষ্টাও করেনি। ফলে মিলিশিয়ারা সেখানে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। লিবিয়ার অরক্ষিত বিরাট এক অস্ত্র ভাণ্ডার গিয়ে পড়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। এখন লিবিয়া থেকে টনকে টন অস্ত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে আইএস-এর হাতে।
আমি শুধু দুইটা দেশ নিয়ে আলোচনা করেছি।আমেরিকার অর্থনীতি উঠা নামা করে তেল এবং অস্ত্র ব্যানিজ্যের উপর।তাছাড়া সৌদিআরবের সাথে আমেরিকার তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা এরকম একটি চুক্তি আছে।আমেরিকা কৌশলে সৌদিকে দিয়ে ইয়ামেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এখানেও আমেরিকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যাবসা হচ্ছে।আমেরিকানরা কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যে তেল ব্যাবসা করে??।আসুন ফিরে যায় ইরাক যুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্র কেন ইরাক আক্রমণ করেছিল? বর্তমান
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সাত বছর আগের মার্কিন সিনেটর চাক হ্যাগেল ইরাক দখল সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘লোকজন বলে আমরা তেলের জন্য যুদ্ধ
করছি না। অবশ্যই আমরা (তেলের জন্যই) যুদ্ধ করছি। তারা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের কথা বলে। তারা কী সব বকছে, সেটাকে আমরা পাত্তা দেই না। আমরা অযথা সেখানেই যাইনি।’ অযথা যাওয়ার কথাও নয়। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম প্রমাণিত তেল মজুত। বর্তমানে পাশ্চাত্যের কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা তেল চুক্তিগুলো অন্যদের হাতে চলে যাবে তেমনটা মেনে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা ওয়াশিংটন এবং এর মিত্রদের নেই। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে তেল ও গ্যাসের বাধাহীন সরবরাহ অব্যাহত থাকুক। যুক্তরাষ্ট্র এটাও যাচ্ছে, তারাই
নির্ধারণ করে দেবে, অন্য দেশগুলো, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জ্বালানি সম্পদের কতটুকু পাবে। ২০০৩ সালের যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর মার্কিন তেল কর্মকর্তারা ইরাকের তেল শিল্প
পরিচালনা করছে। তারা ইরাকি তেলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারায় পাশ্চাত্যের কোম্পানিগুলোর জন্য বেশ সহজ শর্তে দরজা খুলে দিয়েছিল। তাদের ওপর তেল
রফতানির কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি বা মুনাফার ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি ইরাকি শ্রমিক নেওয়া বা স্থানীয়
অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করার কোনো শর্তও যোগ করা হয়নি। বর্তমানে বিপি, এক্সন-মবিল, শেল, শেভরন, ফরাসি কোম্পানি টোটাল ইরাকে তেল শিল্পে জড়িত রয়েছে ।ঠিক এই সিস্টেম কাজে লাগাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অন্য দেশ গুলোতেও। বর্তমান আমেরিকা মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল হাতিয়ে নিয়েছে।কিন্তু বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার তেল ব্যাবসা সম্পুর্ন ভিন্ন। বর্তমান তারা আইএস কে লেলিয়ে দিয়ে তেন ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
জঙ্গীরা সিরিয়া ও ইরাকের তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করছে। এতে তারা দৈনিক ১০ লাখ ডলার আয় করছে।তেল গুলো তুরস্ক হয়ে আমেরিকা এবং তুরস্ক যায়।ধিক্ষার জানাই যুদ্ধ ব্যাবসায়ি আমেরিকা কে।যারা মানবাতার দোহাই দিয়ে শুধু সার্থ খুজে।অথচ তাদের কাছে কোন মানবতার কোন দামই নেই।যেমনটা দেখেছি আমরা ৭০এর দশকে।৭০এর দশকে ইরান ছিল আমেরিকার ঘনিষ্টতম মিত্র। ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরান হয় আমেরিকার সেরা শত্রুর একটি।তখন ঘনিষ্ট মিত্র হয় ইরাক।তখন ইরাক আর ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।আমেরিকা তখন ইরাককে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে ইরানের উপর ব্যাবহারের জন্য।সেই সাদ্দাম হোসেন আবার আমেরিকার শত্রুতে পরিনত হয়।এবং ফল সরুপ তাকে ফাসি দেওয়া হয়।আবার ৮০এর দশকে সিরিয়াও আমেরিকার ঘনিষ্ট মিত্র ছিল।কিন্তু বর্তমান দৃশ্য একেবারই ভিন্ন রকম।আমার মতে তুরস্ক কেও ইরাকের মত ফল ভোগ করতে হবে।ইরাক থেকে তুরস্ক কে শিক্ষা নেওয়া দরকার। সৌদি আরবে আমেরিকার সামরিক ঘাটি রয়েছে। বর্তমান জেদ্দায় ২০ হাজার আমেরিকান সৈন্য রয়েছে।তাছাড়া তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা, আমেরিকার সাথে তাদের এরকম একটি চুক্তি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি শক্তিশালী ও তেল সম্বৃদ্ধ দেশ ইরান।ইরান কিন্তু আগে আমেরিকার বন্ধু ছিল।পরে আবার শত্রু হয়া গেছে।ইরানের উপর দফায় দফায় অবরোধ দেয়ার পরেও ইরানের অর্থনীতি সচ্ছল। তার উপর অপবাদ দেয়া হয় তারা নাকি পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে। অবশ্য তারা ইরাক থেকে শিক্ষা নিয়েছে।


-আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে,সোহেল আদনান।
Powered by Blogger.