আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের লুটপাটের ইতিবৃত্ত,ইতিহাসের আলোকে সত্যের নিরিখে পর্যালচনা।


Bangladesh Vs India


 ইতিমধ্যে অনলাইনে একটি বিষয় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তা হোলও আমাদের বিজয় দিবস কে চৌর্যবৃত্তিতে পারদর্শী ভারতের নিজেদের বলে প্রচারনা।
আমার মত মানুষ পর্যন্ত ভারতের এই নগ্ন অপপ্রচার দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছে। এর আগেও তারা "গুন্ডে" সিনেমার মাধ্যমে আমাদের এই অর্জন কে হরন করার চেস্টা করেছিল।
আসুন ইতিহাসের আলোকে সত্যের নিরিখে পর্যালচনা করে দেখি আসলেই ভারত কেন এবং কীজন্য সাহায্য করেছিল ? কি ছিল সেই সময়ের কাহিনী ?
পাঠকবৃন্দ এই দীর্ঘ পোস্ট পড়ার জন্য সিট বেল্ট বেঁধে নিন।
.................................................................................

আমাদের দেশের ভাদা'রা সব সময় এই বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলে ভারত না হলে তারা স্বাধীন ই করতে পারত না দেশকে। প্রথমেই বলে রাখি আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং আমি বাবাকেও এই বিসয়টা সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা মুখের উপর নাকচ করে দিয়েছিলেন কথাটা।
কিছু প্রশ্ন যা বয়ে বেরাচ্ছি অনেকদিন ধরে----------------
> কেন ভারত আমাদের ২৬ শে মার্চ এর পর পরই সাহায্য করল না, যদি সত্যই তারা আমাদের সাহায্য করতে চাইত ?
> রেসকোর্স ময়দানে আমাদের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি অসমানী সাহেব ছিলেন না কেন ? তাকে কি আসতে বাঁধা দেয়া হয়েছিল ?
> কেন আমরা ৯০ভাগ অঞ্চল মুক্ত করার পর ভারত ডিসেম্বরের ৩তারিখ আক্রমণ করল ?
> আপনাদের মনে আছে জর্জ হ্যারিসনের "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" এই ধরনের অনুষ্ঠান গুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থ সহ বিশাল পরিমাণ ফান্ডের টাকা গুলো কোথায় গেল? ভারত কি হিসেব দিয়েছিল ?
> কেন রাশিয়ার দেয়া অস্র গুলো ভারত নিজেদের দেয়া বলে চালিয়ে নিয়েছিল ?
> 'ইটস মিলিনিয়াম ইয়ার অপরচুনিটি টু ডিভাইট পাকিস্থান ইন্টু টু পিস'। - এই কথাটি কে বলেছিল ?
.................................................................................
মজার ব্যাপার হোলও আমাদের জয় নিশ্চিত হবার পর ভারত ডিসেম্বরের ৩তারিখের পর আক্রমণ করে এবং ভুটান স্বীকৃতি দেয়ার পর!
আসুন এক নজরে দেখে নিই ভারতীয় লুটেরা বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে লুটপাটের ইতিহাসঃ
১// ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ- যার মূল্য ওই সময় ছিলো ২৭ হাজার কোটি টাকা, তার সবই ভারতীয় আরদালী বাহিনী ১৫টি বিশাল জাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যায়। অথচ সেই অস্ত্রের মালিকানা ছিলো পুরোপুরি বাংলাদেশের।
২// শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের শত শত মিল কারখানার যন্ত্রপাতি, ব্যাংক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যাল, ঘর বাড়ির গৃহস্থালী জিনিসপত্র পর্যন্ত বাদ যায়নি লোভী ভারতীয় লুটেরাদের হাত থেকে। এসব সম্পদ ও দ্রব্যাদির তখনকার মূল্য ছিলো আনুমানিক ৯০ হাজার কোটি টাকা।
৩/// শৌচাগারের বদনাগুলোও বাদ দেয়নি ভারতীয় লুটেরার দল। এছাড়াও যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অন্যান্য সাহায্যও লুট করে নিয়ে যায় আমাদের পরম মিত্র (!!!) ভারত।
৪// বাংলাদেশে ভারতীয় আরদালীদের লুন্ঠনের ব্যাপারে আজিজুল করিম ""হোয়াই সাচ এন্টি-ইন্ডিয়ান ফিলিংস এমং বাংলাদেশী?"" শিরোনামে এক নিবন্ধে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ভারতীয় মাসিক ‘অনিক’-এর রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, “ভারতীয় সৈন্যদের লুণ্ঠিত মালামালের মূল্য ছিল প্রায় ১শ’ কোটি মার্কিন ডলার।”
৫// বাংলাদেশে ভারতীয় আরদালীদের লুণ্ঠনের ব্যাপারে ""বাংলাদেশ পাস্ট এন্ড প্রেজেন্ট""
পুস্তকে সালাহউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, “যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর ভারতীয় সৈন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিক সময় অবস্থান করতে থাকায় ভারত সমালোচিত হতে থাকে। অভিযোগ করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ট্রাক বহরে করে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম সরিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ভারত বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশালী রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এমন একটি আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও সংশয় সৃষ্টি হয়।”
৬// মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক জয়নাল আবেদীনের "র এন্ড বাংলাদেশ" বইয়ে আছে - "লুটতরাজ সহজতর করার জন্য তারা আমাদের শহর, শিল্প স্থাপনা, বন্দর, সেনানিবাস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র এমনকি আবাসিক এলাকায় কারফিউ জারি করে। তারা সিলিং ফ্যান থেকে শুরু করে সামরিক সাজসরঞ্জাম, তৈজষপত্র ও পানির টেপ পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে যায়। লুণ্ঠিত মালামাল ভারতে পরিবহনের জন্য হাজার হাজার সামরিক যান ব্যবহার করা হয়।”
৭// “সীমান্ত খোলা পেয়ে ভারতীয় মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং স্থানীয় বাজার ও দোকানপাট থেকে সব বিদেশী মালামাল বিশেষ করে রেডিও, টেলিভিশন, খুচরা যন্ত্রাংশ, বিদেশী ওষুধপত্র অর্থাৎ যা কিছু বিদেশী সব কিনে নিচ্ছিল। এমনকি পাকিস্তানি ধাতবমুদ্রাও।
এটা আমাদের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এসময় সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুর আমাদের এলাকায় এলেন। আমরা তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি জানালেন যশোরেও একই অবস্থা।
সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুর ভারতীয় মাড়োয়ারীদের এ ব্যবসার ব্যাপারে ভারতের চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ব্রারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভারতীয় জেনারেল ব্রার সে সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মঞ্জুরকে জানায় যে, এদের নিয়ে সবাই অতিষ্ঠ।”

তথ্যসমুহঃ
১, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক জয়নাল আবেদীনের "র এন্ড বাংলাদেশ"
২, "বাংলাদেশ পাস্ট এন্ড প্রেজেন্ট" পুস্তকে সালাহউদ্দিন আহমদ
৩, আজিজুল করিম ""হোয়াই সাচ এন্টি-ইন্ডিয়ান ফিলিংস এমং বাংলাদেশী?""
৪, ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে সেক্টর; লিখক- আট নম্বর সেক্টরের সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে অংশগ্রহণকারী মেজর জেনারেল খোন্দকার মুহম্মদ নূরন্নবী (অব.)
পৃষ্ঠা: ১৬৪/১৬৫
৫, ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ’লিখক- সাহাদত হোসেন খান
পৃষ্ঠা: ৩০২-৩০৪
(বই দুটি রকমারি থেকে কিনতে পারবেন, http://www.rokomari.com/book/76916,
http://www.rokomari.com/book/48389)
..............................................................................
এবার আসুন দেখি মুক্তিযুদ্ধে "তথাকথিত" সাহায্যের কারণ এবং বর্তমানের লুটপাট
১// পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল করার লক্ষ্যে দুই টুকরো করতে পারলে ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা, ভারতও ভালভাবেই জানত পূর্ব পাকিস্তানের আয় (বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের পাট, চা, চামড়া, নিউজপ্রিন্ট ও আরো অন্যান্য পন্য রপ্তানী বাবত বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন ) দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অর্থনীতির চাকা সচল রাখা হত।
২// পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সামরিক দিক দিয়েও লাভবান হবে ভারত, ভারতকে আর তার পূর্রাঞ্চলে (ইস্টার্ন সেক্টরে) সামরিক শক্তি মোতায়েন রাখতে হবেনা, পুরো সামরিক শক্তিই তখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে (ওয়েস্টার্ন সেক্টরে) পাকিস্তানের বিপরীতে প্রস্তুত রাখা যাবে। আরেকটা ব্যাপার ছিল ৬৫ সালের পাক-ভারত পুর্ব পাকিস্তানী(বাংলাদেশী) সৈন্য দের ব্যাপক বীরোচিত আক্রমন।
৩// ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে এমনভাবে ভারত নির্ভরশীল করে তুলবে এবং বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনীতি ও অর্থনীতির মূল শক্তিগুলোকে এমনভাবে ধ্বংশ করে দিবে যাতে বাংলাদেশ অনেকাংশে ভারতের উপর নির্ভর শীল হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পাট ও চা শিল্প আরো অনেক আগেই ধ্বংশ হয়ে এখন এই বাজার একচেটিয়া ভারতের দখলে চলে গেছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানী খাতও ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিনত হয়েছে।
আর উজানে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের নদ-নদীকে মরুভূমি বানিয়ে বাংলাদেশের কৃষি, জলবায়ূ ও প্রকৃতিকে ইতমধ্যেই ধ্বংশের শেষ সীমায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ভারতের জন্য কোন হুমকী হবেনা, বরং ভারতের লাভই হবে এবং কার্যত ভারতই বাংলাদেশের জন্য হুমকী হয়ে থাকতে পারবে। এসব হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে করেই ভারত ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে পৃথক তথা স্বাধীন বাংলাদেশ হতে সাহায্য করেছিল।
৪// বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসেই প্রথমে ভারতীয় সৈন্য দের প্রত্যাহারের বিষয়ে কাজ শুরু করেন এবং ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি ভারত সফর করে প্রথমেই বলেন কবে আপনার সৈন্য প্রত্ত্যাহার করবেন ??
..............................................................................
এবং আমাদের প্রাপ্তি
>> ভারতের প্রায় সব টিভি চ্যানেলই বাংলাদেশে অবাধে চলছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্যাবল আপারেটরা শত চেষ্টা ও তদবির করেও বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল ভারতে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে বা দেখাতে সুযোগ পাচ্ছেনা।
>> প্রতি ঈদে পাখি, কিরণমালা এবং কিছু লাশ
>> প্রায় ১০ লাখ লোক বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত আছে যাদের আয় ভারতের অন্যান্য খাতে বৈদেশিক আয়ের হিসাবে পঞ্চম স্থানে আছে।
>> করিডোর !
>> রামপাল কয়লা খনি !
>> বিদ্যুৎ আমদানী !
>> থ্রিজি তরংগ রপ্তানি !
>> সীমান্ত হত্যা
>> গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা
এবং দীর্ঘ দিনের হাহাকার "তিস্তা চুক্তি" ।
বস্তুত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারত অর্থনৈতিক, সামরিক, কৌশলগত ও
আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। এ কারণে দেশটি তার নিজের স্বার্থে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়, আমাদের স্বার্থে নয়।”
আজ এরাই গলা লম্বা করে বলে তারা নাকি
বাংলাদেশকে সাহায্য না করলে দেশ স্বাধীন
হতনা !!!
এই জনই বলে চোরের মার বড় গলা !
সবাইকে মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Powered by Blogger.