সিরিয়া এখন আন্তর্জাতিক শক্তি সমূহের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।

সিরিয়া এখন আন্তর্জাতিক শক্তি সমূহের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। কেউ তাদের নতুন আবিষ্কৃত অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় নতুবা কেউ তাদের শক্তি সামর্থ্যের প্রদর্শন করে। সিরিয়ায় প্রকৃতপক্ষে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানি না কারণ আন্তর্জাতিক শক্তি সমূহ তাদের অসভ্যতা, নির্লজ্জ হানাহানির চিত্র ও উদ্দেশ্য মিডিয়াতে আসতে দিচ্ছে না। তারা শুধু IS, FSA ও SAA এর মত সন্ত্রাসীদের কথা বলে প্রকৃত সত্য ঢেকে রাখতে চাচ্ছে। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে চাইলে সিরিয়ার ইতিহাস জানতে হবে, সিরিয়ায় কাদের স্বার্থ আছে এবং কি তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তা জানতে হবে। আমরা সিরিয়া সংকট বিশ্লেষণে যাবো না কারণ এটা অত্যন্ত জটিল হয়ে গেছে। আমর শুধু সিরিয়া সংকটের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অতি সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব।
সিরিয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
সিরিয়ার গুরুত্ব শুধু ভৌগলিক কারণে নয়,রাজনৈতিক,আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় কারণেও। সিরিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অতি সমৃদ্ধ । আরবদের কাছে সিরিয়ার এলাকা “বালাদে শাম” বলে পরিচিত। পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের সেই “ফি আদনাল আরদি” বা নিকটতর নিম্ন এলাকার দেশ হল সিরিয়া। সিরিয়াতে মানব ইতিহাসের প্রধান প্রধান সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাতগুলি হয়েছে। সেটি যেমন ইরানীদের সাথে গ্রীক ও রোমানদের, তেমনি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের। সিরিয়ার ভূমিতেই মুসলমানগণ তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের পরাজিত করে প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। মুসলিম বীর সালাউদ্দিন আয়ুবী এ ভূমিতেই ইউরোপীয় ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিমদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছিলেন। বলা যায় বিশ্বশক্তির পটপরিবর্তন কেন্দ্র হিসেবেও সিরিয়া ব্যবহৃত হয়েছে।
কেন সারাবিশ্ব সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে?
সবাই সবার ভিন্ন স্বার্থ ও ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে। তবে সব উদ্দেশ্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা, কারণ সিরিয়া বিশ্বশক্তির পটপরিবর্তন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সিরিয়া যুদ্ধের উদ্দেশ্যকে আমরা প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করব।
১) ইজরাইল (আমেরিকা)। এই যুদ্ধের অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে ইসরাইল। তারা সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও মদীনাসহ মিসরের নীল নদ থেকে শুরু করে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বিশাল মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইজরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে।
২) ইরান (রাশিয়া)। এই যুদ্ধে ইরান সরাসরি ভূমিকা পালন করছে। তারা মক্কা সহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশ নিয়ে একটি শিয়া(পারশিয়ান) সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
৩) ইসলামিক বিদ্রোহী। এই যুদ্ধে ইসলামিক বিদ্রহীরা একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। এরা চাই মক্কা, মদীনা,সিরিয়া ও ফিলিস্তিনসহ খোলাফায়ে রাশেদীনের মত করে একটি ইসলামিক খোলাফত পূনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।
অনেকে মনে করে রাশিয়ার কারণে আমেরিকা সিরিয়াতে পিছিয়ে গেছে। আসলে তা নয়, আমেরিকা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে ইসলামিক বিদ্রোহীদের কারণে। আমেরিকা রাশিয়ার ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামিক বিদ্রোহীরা তাই মিডিয়াতে এদের খবর এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইসলামিক বিদ্রোহীদের উত্থান আমেরিকা, রাশিয়া, ইজরাইলের সকল গেমপ্লেন চেঞ্জ করে দিচ্ছে।
কিভাবে সিরিয়া যুদ্ধের সূচনা হল?
সিরিয়া যুদ্ধের সূচনা ২০১১ সালে নয়, এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকেই। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর সিরিয়াকে যখন ফ্রান্স উপনিবেশিক বানায়, তখন সিরিয়ার সুন্নীরা ফ্রান্সের বিরুদ্বে সশস্র যুদ্ব চালিয়ে যেতে থাকে। হামাসের সামরিক সংগঠন ইজ্জাদিন আল কাশেম নাম করন করা হয় ঐ সিরিয়ার সশ্স্র সুন্নী গেরিলা লিডারের নাম দিয়ে। এই সুন্নিদের ঠেকাতে চতুর ফ্রান্স সরকারও ব্রিটিসদের মতো ডিভাইড এন্ড রুলে যায়। ফ্রান্স সরকার তখন সিরিয়ার জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন করে যাদের ৮০% এর ও বেশী আলাওয়ী। এই আলাওয়ীরা তখন থেকেই সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফ্রান্স সিরিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এদের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে যায়। এরাই সিরিয়া ১৯৬০ হতে শাসন ও শোষণ করে আসছে। তারপর এলো হাফেজ আল আসাদ, তার মৃত্যুর পর এলো বাশার আল আল আসাদ। এরা জাতি গত ভাবে ৯০% সুন্নী দের থেকে আলাদা ছিলো। তাই ২০১১ সালে বিক্ষোভের সময় সেনাবাহিনী জনগণের উপর গুলি চালাতে পেরেছিলো। তারা তুরস্কের সেনাবাহিনীর মত ছিলো না যে নিজ জনগণের উপর গুলি চালাবে না।
আলাওয়ীদের পরিচয়?
আলাওয়ীদের প্রধান আবাসস্থল হচ্ছে লাটাকিয়াতে (সিরিয়া)। এরা মোট জনসংখ্যার ১০%-১২% হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩-১৩২৮) আলাওয়ীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন, তারপর থেকে তারা মামলূকদের (১২৫০-১৫১৭) কাছ থেকে প্রচুর অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলো। এরপর ওসমানিয়দের সময়েও (১৫১৭-১৯১৮) আলাওয়ীরা মুসলিম হিসেবে স্বীকৃত ছিলো না এমনকি ইরানি শিয়ারাও এদেরকে কাফের মনে করে। আলাওয়ীরা বিশ্বাস করে যে খোদা যে কারো ভিতর রূপ ধরে আসতে পারে। তেমনি খোদা এখন বাশার আল-আসাদের রূপ ধরে আছে। আসাদের সমর্থকরা বলে তারা আল্লাহর আগে আসাদের ইবাদত করে।
সিরিয়ায় কি গনহত্যা হচ্ছে?
আমেরিকা রাশিয়া ইরান পরিকল্পিত ভাবে মুসলিমদের হত্যা করছে। তারা মুসলিমদের নিশ্চিন্হ করার জন্য মহিলা আর শিশুদের কে হত্যা করছে। আজকে সিরিয়ানরদের ব্যারেল বোম্ব, রাসায়নিক বোম্ব মেরে হত্যা করা হচ্ছ। তারা অবরোধের কারণে ক্ষুদায় নাহলে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। শহরের পর শহর বিমান হামলা করে এমন ভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে যেটা দেখা মনে হবে না যে সেখানে আগে কখনো মানুষের আবাসস্থল ছিলো আথবা বাচ্চাদের খেলার জায়গা ছিলো। তাদের মধ্যে অনেকের কতই না স্বপ্ন ছিলো আর আজকে তাদে সবকিছু দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে।
মুসলিমদের শত্রু কারা?
ইহুদিদের চক্রান্তে মুসলিমরা আজ দিশেহারা বিভ্রান্ত। তাই আমরা আমাদের শত্রুদেরকে চিন্তে পারছি না। অনেকেই আমেরিকার বিরোধিতা করতে গিয়ে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে নেই। এই রাশিয়া তাদের ট্যাংকের নিচে মুসলিমদের পিষে হত্যা করেছিলো, এই আমেরিকা বরযাত্রী দের বোমা মেরে হত্যা করেছিলো। আমরা এখানে মুসলিমদের শত্রুদেরকে চার ভাগে ভাগ করব।
১) আমেরিকা। এরা মুসলিমদের প্রধান শত্রু। এরা সমগ্র বিশ্বে মুসলিমদের হত্যা করছে। এরা ইহুদিদের অভিভাবক হিসেবে তাদের রক্ষা করছে।
২) ইজরাইল, ইন্ডিয়া। এই দুই সম্প্রদায়ের মুসলিম বিদ্বেষ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সতর্ক করা হয়েছে। এরা সমগ্র বিশ্ব থেকে ইসলাম এবং মুসলিমদের নিশ্চিন্হ করে দিতে চাই। বর্তমানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা, বিদ্বেষ, হত্যা এরাই করছে।
৩) ইরান, রাশিয়া। এরা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের হত্যা করছে। এদেরকে ইজরাইলের অবৈধ সন্তান বলা যায় কারণ এরা ইজরাইলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরাও বিশ্ব নিয়ন্ত্রক হতে চাই।
৪) দালাল সরকারসমূহ যেমনঃ সৌদি আরব, ইজিপ্ট, বাংলা সহ আরো অনেকে। এরা সবাই নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লোভে আমেরিকা, রাশিয়ার দালালি করছে। এরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। মুসলিমদের জীবনের থেকে এদের ক্ষমতার মূল্য অনেক বেশি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে সবাই মুসলিমদের শত্রু! প্রকৃতপক্ষে মুসলিমদের আল্লাহ ছাড়া কোনও শক্তিশালী বন্ধু নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যেমন বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কেউ নাই ঠিক তেমনি মুসলিমদের রক্ষা করার মতও কেউ নাই।
আল্লাহ সুবহানা তাআলা বলেন,
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (Al-Baqara: 155)
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (Yunus: 64)
Powered by Blogger.