একটি কম্যুনিকেশন টাওয়ার, একটি পোর্টে সাবমেরিন ভাতৃদ্বয় ও একটি রাজার পতনের গল্প





আপনারা জানেন শ্রীলঙ্কা প্রায় ২৪ বছরের গৃহযুদ্ধে অনেক পিছিয়ে গিয়েছিল। এর কারন বন্ধু প্রতিম একটি দেশ লাগাতার তামিল দের কে সকল আন্তরজাতিক নীতি ভঙ্গ করে অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য ও রসদ সরবরাহ করে আসছিলো। আরও ভয়ানক ব্যাপার ছিল যে বন্ধু প্রতিম দেশ টি শ্রীলঙ্কার পলিটিকেল সিস্টেমে অসুখ বানিয়ে রেখেছিল। আশ্চর্য হবেন যে শ্রীলঙ্কার সরকারের মাঝেও অনেক চাইতেন যে তামিলদের সাথে চুক্তি হোক। কারন যুগে যুগে মিরজাফর আসতেই থাকবে।
যা হোক, রাজা পাকশে এমন একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যার আমলেই শ্রীলঙ্কার প্রকৃত তামীল বিরোধী যুদ্ধটা শুরু হয়। তিনি পৃথিবী তথা কোন বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রের প্রভাব তোয়াক্কা করেন নি এবং সরকারের মাঝের মীরজাফর গুলোকে ক্লিন করতে পেরেছিলেন। শীঘ্রই ফল এলো। পৃথিবীর ইতিহাস এ একটি সাকসেসফুল কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের সমাপ্তি হল। এবার দেশ গড়ার পালা। আপনি শ্রীলঙ্কার রাস্তা ঘাটে যে কোন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কে জিজ্ঞেস করলে বুঝবেন তারা এই রাজা পাকশে কে কতটা ভক্তি করেন, ভালবাসেন। যেমন আমরা করি আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু কে। মাত্র পাচ বছরে রাজা পাকশে পুরো দেশ কে বদলে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেচে থাকলে আমরাও পারতাম। কিন্তু ৪৫ বছরেও আমরা পারিনি। রাজা পাকশের বদৌলতে শ্রীলঙ্কার কিছু কিছু জায়গায় আপনি সুইজারল্যান্ড দেখতে পাবেন। কিছু কিছু হাইওয়ে জার্মানীর অটোবান এর মতো, কিছু কিছু শহর আর উপশহর ছিলো ইউরোপ বা মালয়শিয়ার মতো বা কাছা কাছি। সারা দেশটি অত্যন্ত শৃঙ্খল আর পরিস্কার। লক্ষ লক্ষ পশ্চীমা টুরিষ্ট প্রতিবছর ট্রাভেল করে এ দেশ টা তে কারন আইন শৃঙ্খলা এবং লাইফ স্টাইল এতই ওয়েলকামিং। এই পূনর্গঠনের পেছনের মূল চালিকা শক্তি ছিলো চায়না। তারা অতি দ্রুত সকল রাস্তা ঘাট বানিয়ে দিয়েছে, প্রচুর ইনভেষ্ট করেছে, পোর্ট, হারবার, ট্যুরিজম, হোটেল, হেভী ইন্ডাস্ট্রি সবকিছু তে। কয়েকবছর আগের রাজা পাকশে চায়নার সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন চুক্তি করেন।
যা হোক, ছবিতে যে কম্যুনিকেশন টাওয়ার টা দেখছেন তা কলম্বো তে নির্মান হচ্ছে। Highest in South Asia. পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কিন্তু বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের তা পছন্দ হয় নি। কারন তাদের ধারণা চায়না ওই উচু টাওয়ারে (১২০ তলা বিল্ডিং এর সমান উচু, টাওয়ার বাড টাই ১১ তলার সমান) বসে বসে হাজার হাজার মাইল থেকে দূরবীন দিয়ে তাদের ভেতরে কে কি করছে সব দেখে ফেলবে। হতেও পারে। হাই পাওয়ার রেডার, ইভেসড্রপার দিয়ে তা সম্ভব। এছাড়াও হঠাত বলা নেই কওয়া নেই, চায়না যে পোর্ট বানাচ্ছে, সেখানে একটি চাইনিজ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন সাথে আরেক ছোট ভাই ডিজেল সাবমেরিন এসে হাজির। আমার ধারণা চায়না ওই দুই ভাই কে পাঠিয়েছিল দেখার জন্য, ওদের জন্য যে শ্রীলঙ্কাতে যে ডেড়া বানানো হচ্ছিলো, তাতে তাদের ঢুকতে কোন আসুবিধা হবে কিনা বা তাদের পছন্দ হয়েছে কিনা। এরপরের ঘটনা হজম করা কঠিন।
যে রাজা পাকশে দেশটা কে স্বাধীনতার পূর্নাঙ্গ স্বাদ দিলেন, তড়িথ উন্নতি সাধন করলেন, ওই রাজা পাকশে কেই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে করাপ্ট রাজা, ব্যর্থ রাজা হিসেবে অপবাদ নিয়ে ইলেকশনে হারতে হয়। এবং যিনি নির্বাচিত হন, তিনি সকল চাইনিজ প্রকল্পের মাঝে গুড় লাগিয়ে আজ শ্রীলঙ্কার দ্রুত চলমান উন্নয়নের বারোটা বাজিয়েছেন বা বাজাচ্ছেন। ওনেক চাইনিজ কোম্পানী কে বাড়ীও পাঠিয়েছেন। সে সাথে আবার শুরু হয়েছে সেই পুর্বেকার পলিটিকেল অসুখ, মীরজাফরের আনাগোনা। আহ শ্রীলঙ্কা, আহ...।
- জাদু মুটু
Powered by Blogger.