এইচকিউ -৯দূরপাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম


স‌্যাম সিস্টেম
বিশ্ব অস্ত্র বাজারে উত্তাপের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন। জার্মানিকে পেছনে ফেলে এই দেশটিই এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক। অবশ্য তৃতীয় হলেও বাজারে মোট বিক্রিত অস্ত্রে তাদের রফতানির পরিমাণ খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যেখানে সম্মিলিতভাবে ৫৮ শতাংশ অস্ত্র রফতানি করে, সেখানে চীন করে মাত্র পাঁচ শতাংশ।

অতি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা আলট্রা লং রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে শুরু করে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান- এসবের উদ্ভাবন চীনের অগ্রগতি এবং অসাধারণ প্রযুক্তিগত ক্ষমতারই প্রকাশ। 

🌺এবার আসি আজকের মূল বিষয় এইচ কিউ -৯ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে ।
এইচকিউ-৯ হলো চীন নির্মিত একটি দূরপাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বা স্যাম। এটি মূলত আমেরিকান প্যাট্রিয়ট ও রাশিয়ান এস-৩০০ সারফেস টু এয়ার সিস্টেমের আদলে তৈরি করা হয়েছে। 

আইসিবিএম ব্যাতীত যেকোনো ধরনের মিসাইল এবং এয়ারক্রাফটের বিরুদ্ধে এইচকিউ-৯ স্যামটি বেশ কার্যকর। এইচকিউ-৯ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি ম্যানুফেকচার করেছে চায়না প্রিসিসিয়ন ইমপোর্ট-
এক্সপোর্ট কর্পোরেশন' সংক্ষেপে সিপিমিক। 


এই স্যামটি মূলত একটি ৮চাকার টিএ-৫৮০ মডেলের শক্তিশালী ট্যাকটিকেল কার্গো ট্রাকের চেসিসের ওপর নির্মিত। ট্রাকটিতে রয়েছে চারটি বিশাল আকৃতির মিসাইল লাঞ্চিং টিউব,একটি কন্ট্রোল রুম ও কিছু সেন্সর সিস্টেম। এইচকিউ-৯ স্যামে ব্যবহৃত মিসাইলের ওজন ১,৩০০ কেজি, দৈর্ঘ্য ৬.৮ মিটার, ওয়ারহেডের ওজন ১৮০ কেজি। মিসাইল গুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে দুই স্তরের সলিড প্রোপলেন্ট রকেট ইঞ্জিন। এইচকিউ-৯ স্যামের মিসাইলের রেঞ্জ ২০০ কিঃমিঃ ও গতি ৪.২ ম্যাক এবং এটির মিসাইলগুলো ভূমি থেকে ২৭ ওপরের আকাশে যেকোনো
থ্রেটকে কভার করতে পারবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানার স্যামটিতে রয়েছে ইনারটিয়াল ও একটিভ রাডার হোমিং গাইডেন্স ব্যবস্থা। 

এই স্যামটির ট্রাকটিতে রয়েছে ৫১৭ হর্সপাওয়ারের একটি
ডেটজ টার্বোচার্জড ডিজেল ইঞ্জিন, এটির গতি প্রতিঘন্টায় ৮০
কিঃমিঃ ও পাল্লা ৮০০ কিঃমিঃ। ট্রাক চেসিস ব্যাসড হলেও চাইনিজ টাইপ-০৫২ ডেস্ট্রয়ারেও এইচকিউ-৯ স্যাম ব্যবহার করা হয়েছে।

প্যাট্রিয়ট অথবা এস-৩০০ স্যাম গুলোতে 'পেসিভ ইলেকট্রনিক্যাল
স্ক্যান্ড অ্যারি' (PESA) রাডার ইউজ করা হলেও এইচকিউ-৯ তে চীন
নিজস্ব তৈরিকৃত লং রেঞ্জের একটিভ ইলেকট্রনিক্যাল স্ক্যান্ড
অ্যারি' (AESA) রাডার সংযোজন করেছে। এছাড়াও রয়েছে ফায়ার
কন্ট্রোল রাডার, পেসিভ সেন্সর, অ্যান্টি স্টিলথ রাডার। 

মূল দেশ ➡️চীন
সার্ভিস ➡️১৯৯৭ ইং।
মিসাইল দৈর্ঘ্য ➡️৬.৮ মি।
মিসাইল ব্যাস ➡️0.৭ মি।
মিসাইল ওজন ➡️১,৩০০ কেজি।
ওয়ারহেড ওজন ➡️১৮০ কেজি।
ওয়ারহেড টাইপ ➡️এইচ ই-ফ্রাগ ।
সর্বাধিক পরিসীমা ➡️১২৫ কিমি।
ফ্লাইট সিলিং ➡️২৭ কিলোমিটার (৮৮,৫৮২ ফুট)
প্রস্তুতকারক ➡️প্র্রিসিশান ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট মেশিনারি কর্পোরেশন।

১৯৮০ সাল থেকে এইচকিউ-৯ এর উৎপাদন শুরু হলেও পরবর্তিতে আর ও উন্নয়ন সাধন করার পর ১৯৯৭ সালে এটি অপারেশনাল সার্ভিসে আসে। বর্তমানে পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ারফোর্স এবং পিপলস লিবারেশন আর্মি এইচকিউ-৮ স্যামটি ব্যবহার করছে।

➡️সেন্সর কি ? এতে কি কি সেন্সর আছেঃ
সেন্সর হলো একধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা পরিবেশের কোন পরিস্থিতি (শব্দ, তাপ, আলো) ইত্যাদি প্রতি সাড়া দিতে পারে।

সেন্সর হচ্ছে এক ধরনের কনভার্টার যা পরিবেশগত কোন পরিবর্তনকে সিগন্যালে পরিণত করে। মানুষ তার চোখ, কান, নাক দিয়ে পরিবেশ থেকে বিভিন্ন অনুভূতি নিতে পারে কিন্তু যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যন্ত্রপাতি পরিবেশের কোন ঘটনাকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করতে পারে।
অর্থাৎ সেন্সর এমন একটি ডিভাইস যা ফিজিক্যাল প্রপারটিকে (তাপ, শব্দ, আলো ইত্যাদি) কে সনাক্ত করে এবং তথ্যগুলোকে সিগন্যালে রূপান্তরিত করে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে প্রেরন করে থাকে। Sensor ফিজিক্যাল প্যারামিটার(তাপ, শব্দ, আলো ইত্যাদি) কে কনভার্ট করে সিগন্যালে যা ইলেক্ট্রিক্যালি মেজার করা করা যায়।
১) ১টি এইচ টি-২২৩ মাল্টিফাংশন রাড়ার for ইলুমিনেটিং এবং হোমিং ।
২) ১টি এক্স ব্র্যান্ড রাড়ার ।
৩) ১টি ১২০ কিমি টার্গেট সনাক্তকরণ রাড়ার ।
৪) ১টি ৯০ কিমি টারগেট ট্র্যাকিং রাড়ার ।
৫) সনাক্ত করেঃ
নিম্ন-উড়ন্ত বিমান, ক্রুজ মিসাইল, এয়ার টু স্থল মিসাইল, ও কৌশলী ব্যালিস্টিক মিসাইল সমূহ ।
৬) স্থিতি / এক্সপোর্ট অপারেশনঃ
আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, এবং তুর্কমেনিস্তানে রপ্তানি ।
৭) ডিজাইনার / প্রডিউসারঃ চীন এয়ারস্পেস বিজ্ঞান ও ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (CASIC) .
৮) অন্য ভার্সনঃ

এইচ কিউ -9এ, এইচ কিউ-9 বি, এইচ কিউ-9 সি, এইচ কিউ -9, এইচএইচ কিউ-9 এ, এফডি -2000, এফটি -২০০০ ।
🤭এগুলোর ভেতর এফ টি -২০০০ হল এন্টি-রেড়িয়েশন সিস্টেম; ১০০ কিমি পর্যন্ত পরিসীমা।
চীন কাজ করছে এমন একটি বিমানবাহী রণতরী নিয়ে, যা কিনা সবধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে যুগ্ম সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অস্ত্রশস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে পদাতিক আক্রমণের সবধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে তাতে, ঠিক যেমনটি যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত সামরিক প্রযুক্তি পেয়েছিল। সেটি তাদের সহায়তা করে নৌ আর বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে।

এখন বেশি আলোচনায় আছে চীনের ফিফথ জেনারেশন ফাইটার বা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। যাতে কিনা রয়েছে 'স্টেলথ প্রযুক্তি', যার ফলে এটির সুপারসনিক বা শব্দের চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন এবং অতি সূক্ষ্ম বিমান প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত। 

দূর পাল্লার বিমান হামলা ও নৌ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে চীন, যা কিনা মার্কিন রণতরীকে প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী স্থানেই প্রতিহত করতে পারে।চীন কেবলমাত্র সমরাস্ত্রের উন্নতি ঘটিয়েই প্রবল পরাশক্তি হচ্ছে না। অস্ত্র রপ্তানির বাজারেও চীনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা তাৎপর্যপূর্ণ।

মানববিহীন যুদ্ধবিমান যা ড্রোন নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছে তার বাজারের হিসেবই যদি করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র যদিও সবার আগে একে বিশ্বে পরিচিত করে তোলে।
নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- click here
 

Powered by Blogger.