ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান কিভাবে কাজ করে?

এফ-১৮ সুপার হরনেটের ছোটভাই ই/এ-১৮জি গ্রাউলার যুদ্ধবিমানটি মূলত ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান।এটি মূলত শত্রুর যাবতীয় রাডার এবং ডিফেন্সিভ কাউন্টারমেজার সিস্টেমকে অচল করে দিয়ে শত্রুকে স্রেফ অন্ধ করে দিতে পারে!!

ই/এ-১৮জি গ্রাউলারকে বর্তমান যুগের সবচেয়ে সেরা ডেডিকেটেড ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান বললেও ভুল হবেনা।বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এর জ্যামিং সক্ষমতা আছে বিধায় একটি বিমান দিয়ে পুরো স্ট্রাইক গ্রূপকে সাপোর্ট দেয়া সম্ভব।

আপনারা নিশ্চই জানেন রাডার কিভাবে কাজ করে।RADAR এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Radio Detection And Ranging।
রাডারের প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যমে চারপাশে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করা হয় যা কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে এসে রিসিভারে ধরা পড়ে।রেডিও ওয়েভ আকাশে কোনো কঠিন বস্তুতে আঘাত করে তখন প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে।এই প্রত্যাবর্তনকারী ওয়েভ বা তরঙ্গই ধরা পড়ে রাডারের রিসিভারে।

ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমানের কার্যপ্রণালী বেশ জটিল।যতটুকু সম্ভব সহজভাবে সাইন্স-কমার্স-আর্টস সব ব্যাকগ্রাউন্ড এর বুঝার উপযোগী ভাষায় লিখতে চাচ্ছি।(দয়া করে ফিজিক্স নিয়ে আজাইরা পন্ডিতি দেখায়েন না আবার,
জিনিসটা সবাইকে একদম সহজে বুঝাতে চাই)

গ্রাউলার শত্রুর রাডারজোনে ঢোকার সময় বিমানের উইংটিপ হার্ডপয়েন্টে থাকা দুইটি AN/ALQ-218 নামের প্যাসিভ রিসিভার সিস্টেম অন করে ঢুকে যা শত্রুর রাডার থেকে আসা ওয়েভ বা তরঙ্গকে রিসিভ করে।সাথে সাথে সেই ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি ডাটা কপি করে আন্ডার উইং ফিউজলাজের নিচে থাকা ২টি হাই ব্যান্ড এবং সেন্টারলাইন ফিউজলাজের নিচে থাকা ১টি লো-ব্যান্ড "AN/ALQ-99" নামের জ্যামার পড থেকে পাল্টা ইলেকট্রনিক সিগনাল প্রেরণ করে।ফলে দুটো ওয়েভের সুপার পজিশন (উপরিপাতন) হয়ে স্ট্যাটিক ওয়েভের সৃষ্টি হয় এবং ঐ চ্যানেলটি ওভারলোডেড হয়ে যায়।অর্থাৎ রাডারে তখন অসংখ্য ভুয়া টার্গেট দেখানো হবে যা দেখে রাডার অপারেটর অজ্ঞান 😆

আবার রাডারের প্রেরণকৃত সিগন্যাল ডাটা যদি কারেকশন করে জ্যামিং সিগন্যাল ওয়েভকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয় তবে সেখানে ফেজ ডিফারেন্স বেড়ে গিয়ে ওয়েভের মাঝে খালি জায়গা বেড়ে যাবে।এতে বিরাট এলাকা(রাডারের হিসেবে বিরাট এলাকা) কম রাডার ক্রস সেকশন(RCS) যুক্ত বিমানকে ডিটেক্ট করতে পারবেনা।অর্থাৎ সেমি স্টেলথ ও তখন জ্যামার বাবা 'হযরত গ্রাউলারপুরী' এর জাদুকরী কেরামতিতে পুরোপুরি স্টেলথ হয়ে যাবে 😜

মোট কথা আপনার চোখ আছে ঠিকই,কিন্তু চোখ বরাবর টর্চলাইট মেরে কেউ আপনাকে সাময়িক অন্ধ করে দিলো।এবার পুরোপুরি অন্ধ করার জন্য রেঞ্জে আসা মাত্রই এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল(এজিএম-৮৮ HARM) মেরে পুরো রাডার উড়িয়ে দিতে পারবে গ্রাউলার বা তার সাথের অন্য বিমান।এর অকেজো স্যাম সাইটের উপর আনন্দের সাথে লো-এলটিটিউডে উড়ে উড়ে বোমা হামলা সম্ভব (আহা! কি আনন্দ আকাশে ধুতি উড়ে বাতাসে 😂)

এছাড়া এই বিমানে থাকা AN/ALQ-227 কমিউনিকেশন কাউন্টারমিজার সিস্টেম দিয়ে শত্রুর রেডিও কমিউনিকেশন জ্যাম করা বা সাময়িক আড়িপাতার কাজও করা যায়।ফলে আক্রমণের তথ্য অন্যের কাছে জানানোরও সুযোগ নেই বেচারাদের 😋
ইন্টারসেপ্টর পাঠানোর ও সুযোগ নেই।এটি কিন্তু আবার এরিয়াল টার্গেট মানে শত্রু বিমান,ড্রোনকে জ্যাম করতে কাজে লাগে।একটি এক্সারসাইজে ই/এ-১৮জি গ্রাউলারের সমন্বিত জ্যামিং সিস্টেম মার্কিনিদের আরেক গর্ব এফ-২২ স্টেলথ যুদ্ধবিমানকে পুরোপুরি জ্যাম করে দিতে পেরেছে!! 😵 বুঝেছেন তো...কিএক্টাবস্থা😁
আশা করি ১০২+ মিলিয়ন ডলার দামের এই বিমানের সক্ষমতা কেমন বুঝাতে পেরেছি 😊

ওহ! আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
যুদ্ধবিমানে মিসাইল না থাকলে ঐটা আপনাদের অনেকের কাছেই 'কালা ফারেনা' টাইপের বিমান 😆
এটি দুটো এজিএম-৮৮ HARM এন্টি রেডিয়েশন মিসাইলের পাশাপাশি দুটো এআইএম-১২০ বিভিআর মিসাইল নেয় মূলত নিজের নিরাপত্তার জন্য।কমিউনিকেশন কাউন্টারমেজারের যন্ত্রপাতি বসাতে গিয়ে এর খানিকটা পরিবর্তন করতে হয়েছে।ফলে এর কোনো এয়ার-টু-এয়ার ক্যানন নেই।

সাধারণ কনফিগারেশনে এর মূল জ্যামিং অস্ত্র AN/ALQ-99 পড ৩টি নেয়।তবে আরো দুটো পড সহ মোট ৫টি জ্যামিং পড অথবা বাড়তি ৪৮০ গ্যালনের ফুয়েল ট্যাংক নিতে পারে।

লেখাঃ আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে এমআরনাইন।

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

Powered by Blogger.