দূদ্ধর্ষ সিরকস্কি বোয়িং আরএএইচ-৬৬ স্টেলথ হেলিকপ্টার

কোমাঞ্চি হল আমেরিকান আদিবাসি গোত্র। এরা তাদের অশ্বারোহী বাহিনির জন্য বিখ্যাত। যুগের পরিক্রমায় অশ্বারোহী বাহিনি আর যুদ্ধে দরকার হয় না, কিন্তু হেলিকপ্টার কে মডার্ন ডে ক্যাভালারি (অশ্বারোহী) বলা হয়। আরএএইচ-৬৬ কোমাচি হেলিকপ্টারের জন্য নামকরণটা তাই সর্বাঙ্গ সুন্দর বলা চলে।

কোল্ড ওয়ারের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের সময় পরিকল্পনা করা হয় কোমাঞ্চি। আমেরিকান আর্মি যুদ্ধক্ষেত্রের সামগ্রিক ধারনা পাওয়ার জন্য একটি রিকনেসেন্স হেলিকপ্টার ডিজাইন করতে টেন্ডার দেয়।বোয়িং – সিরকস্কি কোম্পানিদ্বয় এই হেলিকপ্টার ডিজাইনের দায়িত্ব পায়।

এক নজরে সিরকস্কি-বোয়িং আরএএইচ-৬৬ কোমাঞ্চি:
দুটি ১৫৬৩ অশ্বশক্তির LHTEC T800-LHT-801 টার্বোশ্যাফট এঞ্জিন ১৪.৩ মিটার কপ্টারটিকে ৩২৪ কিমি/ঘন্টা গতিবেগে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম। এর কম্ব্যাট রেডিয়াস ১৭৮ কিমি এবং ফেরি রেঞ্জ ২২০০ কিমি। এটির শরীরের ডিজাইন এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে এরা সহজেই রাডারকে ফাকি দিতে পারে। এর রয়েছে ইন্টারনাল ওয়েপন বে।

প্রথমেই মনে হতে পারে এত নিচুতে হেলিকপ্টারের মত জিনিস কিভাবে স্টেলথ হয়?
হেলিকপ্টারের পাখার ওয়েক সিগ্নেচার, শব্দ এবং রাডার এবং হিট সিগ্নেচার একে শত্রুর কাছে এর অবস্থান পরিস্কার করে। রাডার সিগ্নেচার কমানো হয়েছে এর ইন্টারনাল ওয়েপন বে এবং বাইরের ডিজাইন দ্বারা। ওয়েক সিগ্নেচার কমানো হয়েছে লেজের রোটরের ডিজাইনের দ্বারা। শব্দ কমাতে তৈরি করা হয়েছে 5 পাখার অত্যাধুনিক মেইন রোটর যা সাধারন হেলিকপ্টারের থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে কম এবং প্রায় বোঝাই যায় না। আর হিট সিগ্নেচার কমানোর জন্য এক্সহস্ট গ্যাস টেইল রোটরের পাশ থেকে বের হয় ফলে টেইল রোটরের ঠান্ডা বাতাসে তা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। একারনে এর হিট সিগনেচারও অনেক কম।

এর ইন্টারনাল ওয়েপন বে তে ছয়টি হেলফায়ার বা বারোটি স্টিঙ্গার মিসাইল থাকতে পারে। এবং এর একটি ৩০ মিমি এক্সপ্লোসিভ ক্যানন আছে যার ধারন ক্ষমতা ৫০০ রাউন্ড।

কোমাচি মুলত ডিজাইন করা হয়েছে রিকনসেন্স রোলের জন্য, কিন্তু এর কিছু অসাধারন ক্ষমতা রয়েছে। এর মুল কাজ শত্রুর অবস্থান জেনে সেটা আরমর ডিভিসন, Apache ও CAS বিমানকে জানানো। এই কপ্টারটি অসাধারন ম্যানুভারিং ক্ষমতা সম্পন্ন এবং পাচ সেকেন্ডে ১৮০ ডিগ্রি টার্ন নিতে পারে। এছাড়া এটির ব্যাকআপ কম্পিউটার সিস্টেম আছে এবং ডাটা লিঙ্ক ইউজ করতে পারে। সুতারং একটি F-22, F-35 কোমাঞ্চি ডাটা ব্যাবহার করে মিসাইল লক করতে পারবে বা মিসাইল ছুঁড়তে পারবে। এবং কোমাচি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মিশন সম্পন্ন করতে পারবে। এর আরো একটি আশ্চর্য দিক হল এটি অন্য বিমানের ছোড়া মিসাইল নিজের অধিনে করে নিয়ে নিজের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা সক্ষম। এটি এক সাথে পাচটি ড্রোনকে পরিচালনা করতে পারে।

কিন্তু ২০০৪ সালে বাজেট ঘাটতির কারনে এবং রাজনৈতিক ও স্ট্রাটেজিক কারনে ও ড্রোনে বেশি বিনিয়োগ করার কারনে এ প্রজেক্ট বাতিল করে দেয় আর্মি। এপর্যন্ত এ কপ্টারের দুটি প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল।

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

Powered by Blogger.