নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোমা হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে কারনে
গত ৯ আগস্ট ছিল নাগাসাকি নিউক্লিয়ার বোমা হামলা দিবস। জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পারমাণবিক বোমার আঘাতে মারা যায় সোয়া দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ। এর মাঝে নাগাসাকিতে মৃতের সংখ্যা ছিলো আশি হাজারের কাছাকাছি।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো নাগাসাকিতে নারকীয় এই বোমা হামলা হবার কয়েক সপ্তাহ আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বানানো বোমা ফেলবার খসরা তালিকায় কোনো নাম-গন্ধই ছিলো না নাগাসাকির। বরং সেখানে নাম ছিলো জাপানের এককালের রাজধানী কিয়োটোর।
পারমাণবিক বোমা হামলার সম্ভাব্য স্থানগুলোর এ লিস্ট তৈরির কমিটিতে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি জেনারেল, আর্মি অফিসার ও বিজ্ঞানীগণ। প্রায় ২,০০০ বৌদ্ধ মন্দির, ১৭টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, অনেকগুলো শিল্প কারখানা সহ প্রায় ১,০০,০০০ অধিবাসীর এ শহরটিকেই সবচেয়ে উপযুক্ত টার্গেট মনে করেছিলো সেই কমিটি। কারণ বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কিয়োটোতে তখন পর্যন্ত কোনো বোমা হামলা করা হয় নি। ফলে অনেকগুলো শিল্প কারখানাই তাদের ব্যবসা জাপানের অন্যান্য স্থান থেকে সেখানে স্থানান্তরিত করেছিলো। পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেখানে আগে থেকেই ছিলো। সেই সাথে কিয়োটোতে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিলো। কমিটির বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন কিয়োটোর মানুষজন বুঝুক পারমাণবিক বোমার সাথে বিশ্বের অন্য কোনো বোমার তুলনা হয় না, এর ভয়াবহতা আজীবন মনে রাখবার মতোই একটি ঘটনা।
সবকিছু যখন চূড়ান্ত, তখনই বেঁকে বসলেন দেশটির যুদ্ধ বিষয়ক সচিব হেনরি স্টিমসন। জুনের শুরুর দিকে তিনি জোর দাবি জানালেন শহরটির নাম সেই তালিকা থেকে বাদ দিতে। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারাও নাছোড়বান্দা। তারাও সেই নাম কোনোভাবেই লিস্ট থেকে বাদ দিতে রাজি নন। এভাবে চলে আসলো জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ। কোনোভাবেই তাদের দমানো যাচ্ছে না দেখে স্টিমসন সরাসরি তদবির করতে চলে গেলেন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের কাছে। অনেক চেষ্টার পর তিনি তাঁকে কিয়োটো বাদ দেয়ার ব্যাপারে রাজি করতে সক্ষম হলেন।কিয়োটো ছিলো পারমাণবিক বোমা হামলার ব্যাপারে সেই কমিটির পছন্দের শীর্ষে। কারণ অক্ষত বাণিজ্যিক, শিক্ষাদীক্ষা, পর্যটন শিল্প ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে হামলা চালালে তা পুরো জাপানবাসীর কাছে অন্যরকম এক বার্তা পৌঁছে দিতে পারতো। তবে যখন কিয়োটো বাদ গেলো, তখনই সেখানে স্থান পেলো নাগাসাকি। এরপরই এলো আগস্টের ৯ তারিখ, দ্বিতীয়বারের মতো মানবজাতির ইতিহাসে ঘটলো সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
কিন্তু কেন স্টিমসন কিয়োটোকে বাদ দিতে এত জোরাজুরি করলেন? এর পেছনেও আছে ভালোবাসা! এ ভালোবাসা যেমন নববধূর জন্য, তেমনি এ ভালোবাসা একটি শহরের জন্যও। ১৯২০ সালের কথা। স্টিমসন তখন ফিলিপাইনের গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখনই শুভ বিবাহের মতো আবশ্যকীয় কাজটি সেরে ফেলেন তিনি। এরপর জামাই-বউ মিলে হানিমুন করতে কোথায় গিয়েছিল অনুমান করতে পারেন? তাদের হানিমুন স্পট ছিলো এই কিয়োটোই!
এ শহরে এসে এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শহরটিকে ভালোবেসে ফেলেন স্টিমসন। নিজের জীবনের চমৎকার স্মৃতি বিজড়িত এই শহরটির এমন পরিণতি কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। আর তাই তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করে কিয়োটোকে বাদ দেন সেই তালিকা থেকে। © আধুনিক সমরাস্ত্রনিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে- Click here
সাবস্ক্রাইব করুন এডমিন ইউটিউব চ্যানেল ► Shohan MonsteR |