মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক গবেষণা সংস্থায় চোরের উপর বাটপারি
গল্পে বা মুভিতে আমারা দেখেছি চোর কিভাবে ডাকাতের উপর বাটপারি করে।চলুন দেখে নেওয়া যাক তা কিভাবে বাস্তবে সম্ভব।নিউমেক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পারমাণবিক গবেষণা সংস্থা । এটির পুরো নাম নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়েলস আ্যন্ড ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন যা আমরা NUMEC বা নিউমেক নামেই পরিচিত। স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভিনিয়াতে নিউমেকের একটি গবেষণাগার ছিল । সেখানে বিভিন্ন দুর্লভ ধরণের পরমাণু পদার্থের গবেষণা চালানো হতো। এবং সেখানে ইউরেনিয়ামের মজুদ ছিল। পরবর্তীতে এই ল্যাবটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ল্যাবটি ছিল একটি সুরক্ষিত স্থান। এর সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল খুব কঠোর।
১৯৬০ সালের দিকে এই ল্যাব থেকে আশেপাশের এলাকায় বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষজন দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিউমেক তাদের ল্যাবে গ্যাস পাইপে একটি ছিদ্র খুঁজে পায়। সেটি মেরামত করা হয় খুব দ্রুতই। কিন্তু তারা দেখে যে তাদের ইউরেনিয়াম চুরি হয়ে গেছে।চুরি হওয়া ইউরেনিয়াম গুলো ছিল বোম্ব গ্রেড বা অত্যান্ত হাই এনরিচ।এবং উল্লেখিত নতিতে বলা হয়, যে ইউরেনিয়াম গুলো চুরি হয়েছে, এগুলো থেকে ১০ থেকে ২০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম দিয়েই একটি বোমা বানানে সম্ভব।চুরি হওয়া ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ছিল ২৮৭ কেজি।
এদিকে চারদিকে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে নিউমেক নিজেদের পারমাণবিক বিক্রিয়ার ফলে রাস্তায় নানারকম ক্ষতিকারক রেডিয়েশন ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ইউরেনিয়াম গুলো চারপাশের নানা স্থানে পুঁতে রাখা হয়েছে। ফলে এসব কারণে নিউমেক বন্ধ করে দেওয়া হয়।এবং ঐ সময় এরকমও গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, সাথে নিউক্লিয়ার ওয়েপনও চুরি হয়ে গেছে। এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে কোনো সময় বোমা গুলো বিস্ফোরিত হতে পারে। ভয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় জনসাধারণ।এবং কিছু জনগন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু নিউমেকের সবাই এটা নিশ্চিত জানত যে, এসব গুজব কেবলই গুজব। এবং এ গুজবগুলো যে ছড়িয়েছে তার নাম পরে বলছি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ল্যাব থেকে ইউরেনিয়াম চুরি করবে কে? ইউরেনিয়ামের মতো মুল্যবান ধাতু কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে পড়লে সর্বনাশ।। পরে এই চুরির তদন্ত ভার দেয়া হয় সিআইএ কে।সিআইএ তাদের তদন্তের পর সন্দেহের আঙ্গুল তুলে ইসরায়েলের দিকে। কেননা ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা নিউক্লিয়ার গবেষণা সংক্রান্ত সবকিছু সংগ্রহ করে আসছে। তারা সন্দেহ করে যে এই কাজ মোসাদের।
পরে সিআইএ এর সাহায্যে নিউমেকের প্রতিষ্ঠাতা জালমান শাপিরো ইসরায়েলি ডিফেন্সে ব্যুরোতে গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন।[চোরের উপর বাটপারি😃]। কিছুদিন পর সিআইএ এর কাছে খবর আসে, ইসরায়েলের নিউক্লিয়ার রিআ্যক্টরে একটি দুর্লভ ধরণের ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে।কিন্তু সেই ধরণের ইউরেনিয়াম শুধু নিউমেকই ছিল। ঐ যে গুজবে কথা বলছিলাম,সেটাও করছিল কিন্তু এই মোসাদ।মোসাদই এই গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিল।
পরবর্তীতে শাপিরো তার সকল তথ্যপ্রমাণাদি ইসরায়েল সরকারের কাছে প্রেরণ করে। আমেরিকা সরকারের হস্তক্ষেপে নিউমেক তাদের চুরি হওয়া ইউরেনিয়াম উদ্ধারে সফল হয়। কিন্তু মাত্র ৯৪ কেজি ইউরেনিয়াম ফেরত পেয়েছিল নিউমেক। প্রশ্ন হচ্ছে, বাকি ইউরেনিয়াম কোথায়?।কিছু নতির মাধ্যমে জানা যায়,বাকি ইউরেনিয়ামের বিনিময়ে ইজরাইল কিছু অর্থ পরিশোধ করে।পুরো না কিন্তু😃😃।
নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে- Click here
সাবস্ক্রাইব করুন এডমিন ইউটিউব চ্যানেল ► Shohan MonsteR |