পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক

 

চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক

চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংককে মজা করে বলা হয় 'বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত চায়ের দোকান'! 😅
ব্রিটিশরা কোন লেভেলের চা-খোর টা জানেন নিশ্চয়ই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই প্রতিটি ব্রিটিশ ট্যাংক-আর্মার্ড ভেহিকেলে চা বানানোর ব্যবস্থা থাকতো যেন খাবারের জন্য ট্যাংকের বাইরে বের না হতে হয়। এই পদ্ধতিতে ক্রুদের ঝুঁকি কমতো, সময় বাঁচতো। চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংকে boiling vessel (BV) নামক একটি যন্ত্রাংশ থাকে যা ট্যাংকের ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম ব্যবহার করে চা-কফি তৈরি সহ অন্যান্য খাবার গরম করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় ১৪ টি আরপিজি ও মিলান এন্টিট্যাংক মিসাইল একটি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক কে আঘাত করে!!!
 

এতে ট্যাংকটির সামান্যই ক্ষতি হয় এবং মেরামত করে মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যেই মেরামত করে আবারও যুদ্ধে পাঠানো হয়!
আরেকটি ঘটনায় ইরাকের বসরা শহরের কাছে এক যুদ্ধে সময় একটি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংককে লক্ষ্য করে ৭০ টি আরপিজি ফায়ার করা হয়।এসময় ট্যাংকটির ড্রাইভার সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কমান্ডারের মুখের কথার উপর ভিত্তি করে ট্যাংকটি পশ্চাদপদসরণ করে।কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার সাইট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্রুরা সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হয়ে পড়েন।কারণ শত্রুর তীব্র ফায়ারিং এর মুখে ট্যাংকের হ্যাচ খুলে মাথা বের করা একেবারে অসম্ভব।
 
এসময় ট্যাংকের গানার সাইট (যেটা দূরের টার্গেট দেখার জন্য ডিজাইনকৃত, কাছের কিংবা আশেপাশের দৃশ্য দেখার জন্য নয়) প্রায় অন্ধের মত ট্যাংক চালিয়ে তারা পিছিয়ে আসেন।এত আঘাতের পরও ট্যাংকটি ক্রুদের অক্ষত রেখে নিজেদের বেজে ফেরত আসে।
২০০৬ সালে দক্ষিন ইরাকে একটি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংককে লক্ষ্য করে ট্যান্ডেম ওয়ারহেডযুক্ত RPG-29 এন্টি ট্যাংক রকেট ট্যাংকটির বেলি আর্মারে আঘাত করে।এতে ড্রাইভারের পায়ের পাতা উড়ে যায়।তারপরও ট্যাংকটিকে রিভার্সে (পিছনদিকে) ২.৪ কিঃমিঃ চালিয়ে নিয়ে আসেন।পরে একে মেরামত করে পুনরায় সার্ভিসে আনা হয়।অথচ একই ভ্যারিয়েন্টের আরপিজির আঘাতে ইসরাইলি মারকাভা ট্যাংক পাঁপড়ভাজা হয়েছিল!
অর্থাৎ যুদ্ধে চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক এমন সব আঘাত সহ্য করেও টিকে ছিল যেগুলো সমসাময়িক অন্যান্য ট্যাংক হজম করলে একেবারে বিকল/ধ্বংস হয়ে যেত।
 
এখন পর্যন্ত মাত্র দুটো চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক একেবারে বিকল বা মেরামতের অযোগ্য হয়েছে।তার মধ্যে একটি হয়েছে রাস্তার পাশে পেতে রাখা IED (ইম্প্রভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) এর বিস্ফোরণে।আরেকটি হয়েছে ফ্রেন্ডলি ফায়ারে, অর্থাৎ নিজেদের পক্ষের গুলিতে!
(কানাসোদা গানার আর বলদাসোদা কমান্ডার এক ট্যাংকে থাকলে যা আরকি 😑🙈)
 
২০০৩ সালে থার্মাল ক্যামেরায় নিজেদের একটি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংককে শত্রুপক্ষের ট্যাংক মনে করে আরেকটি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক এন্টিট্যাংক শেল ফায়ার করলে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়।এতে দুজন ক্রু নিহত হয়।
অর্থাৎ আজ পর্যন্ত শত্রুর হাতে মুখোমুখি যুদ্ধে হারেনি চ্যালেঞ্জার-২। ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংককে পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ট্যাংক হিসেবে গন্য করা হয়।
 
 লেখাঃ আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে  এম_আর_নাইন
 

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here


সাবস্ক্রাইব করুন এডমিন ইউটিউব চ‌্যানেল ►  Shohan MonsteR
 
Powered by Blogger.