আমি একজন স্নাইপার, যুদ্ধ করার জন্য আমার এক চোখই যথেষ্ট!
সার্জেন্ট লিঁও |
D-Day এর পরের দিন সার্জেন্ট লিঁও মেজরকে আরেকটি রিকনসিস মিশনে জার্মান অধিকৃত অঞ্চলে গোপনে পর্যবেক্ষণ করতে পাঠানো হয়। সেদিন হঠাৎ করেই চারজনের জার্মান SS পেট্রোল দলের মুখোমুখি হয়ে যান তিনি। লিঁও তৎক্ষণাৎ গুলি শুরু করেন এবং টহল দলের চারজনকেই হত্যা করেন। শেষেরজন মারা যাওয়ার আগে একটি ফসফরাস গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এটি মেজরের একদম সামনে বিস্ফোরিত হয় এবং এই আঘাতেই তার বাম চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনোরকমে এবার তিনি ঘাঁটিতে ফিরে আসেন এবং চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। তিনি জলদস্যুদের মতো বাম চোখে কালো পট্টি পরতে শুরু করেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণে তাকে সেনাবাহিনী থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে অব্যাহতিপত্র দেয়া হয়। কিন্তু লিঁও মেজর অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ। তিনি কমান্ডিং অফিসারের কাছে অব্যাহতি পত্রের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ সময় তিনি বলেন
"I'm a scout sniper. I only need one eye"
লিঁওর হার না মনোভাব ও তার দক্ষতা বিবেচনা করে তাকে নীতিবিরুদ্ধভাবে আবারও যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এরপর তিনি যা ঘটান তা ছিল কল্পনাতীত।
দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতালে থেকে লিঁও চিকিৎসা নেন। সুস্থ হয়ে ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে অ্যাক্টিভ সার্ভিসে ফিরে আসেন। মিত্রবাহিনীর ততদিনে নেদারল্যান্ডে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। Battle of the Scheldt সময় আবারও তার ডাক পড়ে রিকনসিস মিশনের জন্য। পুরো ব্যাটালিয়নে স্কাউটিংয়ের কাজে তিনি ছিলেন সবার সেরা। কমান্ডার তাকে শত্রুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি নিখোঁজ ৫০ জন 'জোম্বি'কে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। কানাডিয়ান আর্মিতে জোম্বি বলে গালি দিয়ে তরুণ, অনভিজ্ঞ, বোকা সৈনিকদের বোঝানো হতো।
সম্প্রতি টহল দিতে গিয়ে নিখোঁজ সৈনিকদের খুঁজে বের করতে শত্রু এলাকায় ঢুকে পড়েন লিঁও মেজর। এ সময় তিনি পরিখা খননের পর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া ট্রেঞ্চ গ্যারিসনের একদল জার্মান সৈনিক দেখতে পান। পাহারারত গার্ডদের চোখ এড়িয়ে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তাঁবুর ভিতর চেয়ারে বসে নাক ডেকে ঘুমানো কমান্ডিং অফিসারকে স্টেন গান দিয়ে গুঁতো মেরে (আরেক বর্ণনামতে ঠাটিয়ে চড় মেরে) জাগিয়ে নিঃশব্দে গ্রেফতার করেন। তিনি চেয়েছিলেন তাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে অন্যদের গ্রেফতার করবেন। তাই মিত্রবাহিনী তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে- এই মিথ্যা কথা তাকে শুনিয়ে ভয় দেখান। এ সময় এক জার্মান গার্ড তাকে দেখে ফেলে অস্ত্র তোলার চেষ্টা করতেই তিনি তাকে হত্যা করেন এবং বাকিদের আত্মসমর্পণ করার জন্য জার্মান ভাষায় নির্দেশ দেন।
এ সময় চালাকির চেষ্টা করে আরো তিন জার্মান সেনা তার হাতে নিহত হন। লিঁও মেজরের এই রুদ্রমূর্তি দেখে ট্রেঞ্চ গ্যারিসনের সবাই (৯৩ জন) তার কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়!!
জার্মান বন্দি সেনাদের হাঁটিয়ে নিজেদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিঁও মেজর। একটু দূরে থাকা একটি আর্টিলারি ব্যাটারি (৬টি কামানের সেট) একদল এসএস সৈনিক দূর থেকে তাদের দেখতে পান। তারা ঘটনা কী সেটা বুঝতে না পেরে গুলি চালায় এবং সাত জার্মান বন্দি নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। মেজর বন্দীদের নিয়ে মার্চ করা অব্যাহত রাখেন। ভাগ্য ভালো থাকায় এ সময় রাস্তায় তিনি কানাডিয়ান শেরম্যান ট্যাংক বহরের দেখা পান। তাদেরকে উক্ত এসএস সৈনিকদের উপর কামান দাগানোর নির্দেশ দেন।
লিঁও মেজর যখন তার কমান্ডিং অফিসারের কাছে বন্দীদের হস্তান্তর করেন তখন তার চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। মাত্র একজন সৈনিক শত্রুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে সবাইকে আত্মসমর্পণ করিয়ে ফেলবে- এটা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। এই বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাকে Distinguished Conduct Medal (DCM) এর জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু ফিল্ড মার্শাল মন্টেগোমারির হাত থেকে পদক নিতে হবে শুনে পদক নিতে অস্বীকৃতি জানান! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত এই ব্রিটিশ জেনারেলের প্রতি লিঁও কেন রাগান্বিত ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে তিনি তাকে 'অপদার্থ' বলে সম্বোধন করেছিলেন!
লেখা: আধুনিক সমরাস্ত্র অবলম্বনে এম আর নাইন
নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে- Click here
সাবস্ক্রাইব করুন এডমিন ইউটিউব চ্যানেল ► Shohan MonsteR |