ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-২)

 


 প্রথম পর্ব: ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-১)


ব্যাটল অফ মিডওয়ে প্রথম পর্বের পরঃ ......পাল্টা হামলার দায়িত্ব দেয়া হয় এডমিরাল চেস্টার ডব্লিউ নিমিটজকে। এছাড়াও আরো ছিলেন অ্যাডমিরাল হ্যালসি, জোসেফ ফ্লেচার ও রেমন্ড স্প্রুয়েন্স। কিন্তু মার্কিনীদের হাতে পাল্টা আক্রমণের জন্য মাত্র এন্টারপ্রাইজ ও হরনেট নামে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ছিল। ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ও ইউএসএস হরনেট নামের মাত্র দুটো যুদ্ধজাহাজকে দ্রুততার সাথে প্রস্তুত করা হয়। কিছুদিন আগেই হওয়া 'ব্যাটল অব কোরাল সি' এর যুদ্ধে ইউএসএস ইয়র্কটাউন খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জাপানি বোমার আঘাতে এর ফ্লাইট ডেকে কয়েক ফুট ব্যাসের বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণভাবে মেরামত করার জন্য প্রায় ৩ সপ্তাহ সময় লাগতো। কিন্তু অ্যাডমিরাল নিমিটজ ইয়র্কটাউনকে মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে পানিতে ভাসানোর নির্দেশ দেন।

১,৪০০ শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজটি সময়মতো করা সম্ভব হয়। মার্কিন নাবিকরা ইয়র্কটাউনকে এত তাড়াতাড়ি ফ্লিটে যোগ হতে দেখে একেবারে অবাক হয়ে যান। সব মিলিয়ে তিনটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অ্যাডমিরাল নিমিটজের ফ্লিটে যোগ দেয়। ইউএসএস সারাটোগা নামের আরেকটি ক্যারিয়ার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হলেও সেটি সময়মতো ফ্লিটে যোগদান করতে পারেনি। ইম্পেরিয়াল জাপানী নেভির এই আক্রমণের কমান্ডার ছিলেন অ্যাডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোতো, চুইচি নাগুমো এবং নাবুটাকে কন্ডোর নেতৃত্বাধীন জাপানী কম্বাইন্ড ফোর্স।

ব্যাটল অফ মিডওয়ে

☆ 
চলুন দেখে নেয়া যাক কার শক্তিমত্তা কেমন ছিল
মার্কিন নৌবাহিনীর মূল শক্তি ছিল ৩টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। পার্ল হারবার আক্রমণের পরপরই প্রচলিত নৌ-যুদ্ধের ধরণ বদলে যায়। ব্যাটলশিপের বদলে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে কেন্দ্র করে নৌবহর সাজানোর কৌশল গড়ে উঠে। ক্যারিয়ার গ্রূপে ছিল ২৩৩টি বিমান। এছাড়া আরো ১২৭টি বিমান নিকটস্থ মিডওয়ে এয়ারবেজ থেকে এই অপারেশনে অংশ নেয়। ক্যারিয়ার গ্রূপ শত্রু যুদ্ধজাহাজ ও বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য ৭টি হেভি ক্রুজার, ১টি লাইট ক্রুজার, ১৫টি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ এই বহরে যোগ দেয়। এছাড়া ১৬টি সাবমেরিন জাপানি নৌবাহিনীর জাহাজের উপর পানির নিচ থেকে আক্রমণের জন্য বহরে যোগ করা হয়।


ইম্পেরিয়াল জাপানিজ নেভি তাদের প্রায় সর্বশক্তি নিয়ে এই যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতোর ফ্লিটে ছিল প্রায় ২০০ যুদ্ধজাহাজ! দুটো ক্যারিয়ার ডোবানোর জন্য তিনি অল-আউট ব্যাটলের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। অপারেশন প্ল্যান মোতাবেক তিনি মার্কিনীদের ধোঁকা দিতে এলিউশন দ্বীপে হামলা করার নির্দেশ দেন যেন অ্যাডমিরাল নিমিটজ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে হনলুলু, হাওয়াই এর মার্কিন ঘাঁটিকে রক্ষা করার জন্য ফোর্স পাঠান। এই সুযোগে এডমিরাল চুইচি নাগুমোর বাহিনী মিডওয়েতে মার্কিন ক্যারিয়ার ফ্লিটের উপর অতর্কিত হামলা করবে। তার কয়েকশ মাইল পিছনেই থাকবে এডমিরাল ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্স। সামনে থাকা দুই নৌবহরকে প্রয়োজনে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে এবং অবশিষ্ট মার্কিন নৌ-শক্তির যথাসাধ্য ক্ষয়ক্ষতি করবে।


চুইচি নাগুমোর মূল বাহিনীতে ছিল ৪টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও ২৪৮টি ক্যারিয়ারভিত্তিক যুদ্ধবিমান। পার্ল হারবার আক্রমণে অংশ নেয়া ৬টি ক্যারিয়ারের ৪টি মিডওয়ের যুদ্ধে অংশ নেয়। এদের সাথে ছিল ২টি ব্যাটল ক্রুজার, ২টি হেভি ক্রুজার, ১টি লাইট ক্রুজার ও ১২টি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ। এছাড়া গোয়েন্দা মিশন পরিচালনার জন্য ১৬টি যুদ্ধজাহাজভিত্তিক সি-প্লেন এই অপারেশনে অংশ নেয়। এছাড়া জাপানি সাপোর্টিং ফ্লিটে ছিল ৪টি হেভি ক্রুজার, ২টি ডেস্ট্রয়ার ও ১২টি সি-প্লেন। এদেরকে মূল নৌবহরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে সঙ্গে আনা হয়।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরের রাজা ছিল জাপান। তাই অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ মিডওয়ের আশেপাশের অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। দরকার হলে তারাও যেন মিডওয়ের যুদ্ধে অংশ নেয় সেই নির্দেশনাও ছিল। জাপানি ফ্লিটে ছিল কিন্তু যুদ্ধে অংশ নেয়নি এমন যুদ্ধজাহাজের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। ২টি লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ৫টি ব্যাটলশিপ, ৪টি হেভি ক্রুজার, ২টি লাইট ক্রুজার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজসহ ৩৫টি লজিস্টিক সাপ্লাই জাহাজ যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। এগুলো ছিল অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্সের অধীনে। তিনি মূলত মিডওয়েতে ফাঁদে পড়া মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য রিএনফোর্সমেন্ট হিসেবে আসা যুদ্ধজাহাজদের ঠেকানোর জন্য এত বেশি সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ মিডওয়ের যুদ্ধে স্ট্যান্ডবাই রেখেছিলেন। কিন্তু মার্কিনীরা তো আগেই অ্যাম্বুশের কথা জেনে গেছে। ফলে শিকার হয়ে গেছে শিকারি!

ব্যাটল অফ মিডওয়ে

অ্যাডমিরাল নিমিটজ এলিউশন দ্বীপে হামলার জবাবে পার্ল হারবার থেকে সেখানে অযথা নৌ-শক্তি মোতায়েন করেননি। একই সঙ্গে ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্সকে আক্রমণের জন্যও কোনো জাহাজ পাঠাননি। বরং মিডওয়েতে ৩টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারসহ অন্যান্য সাপোর্ট শিপ পাঠিয়েছিলেন পাল্টা অ্যাম্বুশের জন্য। হায় ইয়ামামোতো! তিনি যদি জানতেন যে মার্কিন ক্যারিয়ার দুটি নয় বরং তিনটি, তবে কি এলিউশন দ্বীপে অযথা হামলা করতেন? (চলবে)

© লেখা: সমরাঙ্গন অবলম্বনে এম আর নাইন।

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের  ইউটিউব চ‌্যানেল Shohan MonsteR
Powered by Blogger.