স্টিলথ টেকনোলজি বিস্তারিত

স্টিলথ টেকনোলজি বিস্তারিত

আধুনিক যুগের ফিফথ জেনারেশন এয়ারক্রাফট গুলোতে স্টিলেথ হলো কমন একটি ফিচার।ফিফথ জেনারেশন ফাইটার গুলোতে স্টিলেথ ফিচার না থাকলে সেই ফাইটারের কদর নাই বললেই চলে। আমরা অনেক সময় এই স্টিলেথ বিমানের কথা শুনে থাকি।তাই অনেকেই হয়তো মনে করে স্টিলেথ এমন কোন প্রযুক্তি যা এয়ারক্রাফটকে অদৃশ্য করে দেয়।এবং ফাইটারটিকে কেউ দেখতে পারবে না।চলুন আজকে জানবো এই স্টিলেথ প্রযুক্তি সম্পর্কে।


স্টিলেথ টেকনোলজি কি??♦
♣স্টিলেথ টেকনোলজি হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি যার সাহায্যে এয়ারক্রাফট শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিতে পারবে।আর যে সব এয়ারক্রাফটে এই প্রযুক্তি আছে তাকে স্টিলেথ ফাইটার বলে।চলুন আপনাকে আরো একটু সহজ করে বলি।ধরুন ১০০ মিটার উপর থেকে একটি ঈগল উড়ছে। আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন।এবং চোখে চোখে রাখতে পারছেন। কিন্তু তার জায়গায় যদি একটি চড়ুই পাখি রাখি আপনি তাকে দেখতে পাবেন না।কিন্তু চড়ুই পাখিটি যখন ১০ মিটার দূরত্বে আসবে আপনি তাকে দেখতে পারবেন।কিন্তু নজর রাখতে পারবেন না।কারণ আকারে ছোট এবং গতিশীল হওয়ায় তাকে নজরে রাখা কঠিন।দেখবেন এখন শব্দ করতে করতে আসছে যখনই আপনি চোখ রাখবেন সে হাওয়া হয়ে গেছে। এই খানে ঈগল হচ্ছে সাধারণ বিমান এবং চড়ুই পাখি হচ্ছে স্টিলেথ বিমান।
স্টিলেথ টেকনোলজি বুঝতে হলে আপনাকে রাডার কিভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে জানতে হবে।

♦এখন আপনি নিশ্চয় জানতে চাচ্ছেন রাডার কিভাবে এয়ারক্রাফট ডিটেক্ট করে??

রাডার মূলত কাজ করে তার এন্টেনা দিয়ে।একটি এন্টেনার সাহায্যে ইলেকট্রো মেগনেটিক ওয়েব চারদিকে নিক্ষেপ করা হয়। তখন এই ইলেকট্রো মেগনেটিক ওয়েব শত্রুর এয়ারক্রাফটের সাথে বা আকাশের অন্য কোন অবজেক্টের সাথে ধাক্কা লেগে আবার রাডারের কাছে ফেরত আসে।সেই ফেরতকৃত ওয়েব হতে সেই ফাইটার বা অবজেক্টের আকার রাডার স্কিনে RCS আকারে শো করে।RCS মানে হলো রাডার ক্রস সেকশন। আরেকটু সহজ ভাবে বলি।রাডার ডিসপ্লেতে শত্রুর বিমানের পরিমাপ।শত্রুর বিমান আকারে কত বড় তা RCS আকারে রাডার স্কিনে শো করে।আরসিএসের গুরুত্ব অসীম।কেন বলছি এই কারণে কোন ফাইটারের আরসিএস কম হলে সেই ফাইটারকে রাডার পক্ষে ডিটেক্ট করা খুবই কঠিন।যেমন ইউরোফাইটারের আরসিএস ০.৫ স্কয়ারমিটার।রাশিয়ার সু-৩৫ আরসিএস ১ স্কয়ারমিটারের মতো।কিন্তু এফ-২২ এর আরসিএস কত জানেন??। ০.০০০১ স্কয়ারমিটার।মানে যে ফাইটারের RCS কম সেটি তত বেশি স্টিলেথ।

♦স্টিলেথ ফাইটারকে কি ডিটেক্ট করা যায়??
স্টিলেথ প্রযুুক্তিকে বলা হয় delay-ডিলাই ডিটেক্টশন।মানে কিছুক্ষণ পরেই ডিটেক্ট হচ্ছে। অবশ্যই রাডার স্টিলেথ বিমানকে ডিটেক্ট করতে পারবে এবং ট্র্যাকও করতে পারবে ।কিন্তু কত কিলোমিটার দূর থেকে ডিটেক্ট করতে পারবে সেটাই কথা।ধরুন এস-৪০০ এফ ২২ কে ডিটেক্ট করতে পারবে।তবে সেটা ১০০ কিলোমিটার দূর থেকেও হতে পারে আবার ২০০ কিলোমিটার দূর থেকেও হতে পারে।কিন্তু অন্য ফাইটারের বেলায় সেটা হবে ৩০০+ কিলোমিটার। আরেকটা কথা বলি সু-৩৫ কিন্তু ৫৯ কিলোমিটার দূর থেকে এফ-২২ কে ডিটেক্ট করতে পারে[কেউ আবার বইলেন না সব ফাইটারের রাডারই ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে স্টিলেথ ফাইটার ডিটেক্ট করতে পারে ♣😅]।কিন্তু এফ-২২ স্টিলেথ হওয়ার সুবাদে সু-৩৫ কে ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে ডিটেক্ট করতে পারবে।
কেন ফাইটারকে স্টিলেথ বানানো হয়?
স্টিলেথ ফাইটারের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন একজন পাইলটের সবচেয়ে বড় বাধা হলো শত্রুর রাডার।মানে রাডার যদি আপনাকে ডিটেক্ট করে তাহলে সে মিসাইল ফায়ার করবে।আর আধুনিক এই এক্টিব রাডার হোমিং গাইডেড মিসাইল গুলো হলো ক্রিকেটার নাছিরের মতো।নাছির যেমন টার্গেটকৃত মেয়েটাকে যতক্ষণ পটাতে না পারে, তার পিছনে ঘুরে, ঠিক এই মিসাইল গুলোও ফাইটারকে যতক্ষণ ধ্বংস করতে না পারে তার পিছনে ছুটতে থাকে।

সুতরাং পাইলটের ভাগ্যে মৃত্যু এটা অনেকটা নিশ্চিত।এছাড়া ডাগফাইট বা বিভিআর রেঞ্জের ক্ষেত্রে আপনার এয়ারক্রাফট স্টিলথ হলে শত্রুর ফাইটার আপনাকে আগে ডিটেক্ট করতে পারবে না।তখন আপনি কিন্তু তার ফাইটার ঠিকই ডিটেক্ট করতে পারবেন। যেহেতু তার ফাইটার স্টিলথ না।তখন আপনি এয়ার-AAM মিসাইল মেরে তাকে ধ্বংস করে দিতে পারবেন।

কিন্তু রাডার যদি আপনাকে ডিটেক্ট করতে না পারে তাহলে মিসাইল আসার কোন সম্ভাবনা নেই। ঠিক এই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য স্টিলেথ ফাইটার সার্ভিসে আসা।যেমন রাডার এটিকে ডিটেক্ট করতে না পারায় স্টিলথ বিমানকে রাডার ট্র্যাক করতে পারে না।

♦কিভাবে বিমানকে স্টিলেথ বানানো হয়??
♦বিমানকে স্টিলেথ বানানোর দুইটি পদ্ধতি রয়েছে

১).প্রথমত ডিজাইন এবং
২).দ্বিতীয়ত রাডার ওয়েব শোষনকারী পদার্থ বা র্যাম।
♦১) ডিজাইনঃ- প্রথমত আপনি যদি স্টিলেথ বিমান গুলোকে ভালো ভাবে দেখেন, দেখবেন এগুলো কৌণিক আকৃতির।যেমন এফ ২২ বা সু-৫৭ অথবা এফ-৩৫।কৌণিক আকৃতির ডিজাইনের কারন হচ্ছে রাডারের রেডিও তরঙ্গ ধাক্কা খেয়ে যাতে অন্যদিকে চলে যায়।রাডারের দিকে যেতে না পারে। আপনি দেখবেন এই জাতীয় এয়ারক্রাফট গুলোর নাক কৌণিক আকৃতির এর এয়ার ইনটেক গুলো বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা।এবং এয়ারক্রাফটের পেট সমতল। পিছনের ভার্টিকেল লেজ গুলো বাঁকা করে তৈরি করা হয়।

♦২) দ্বিতীয়ত রাডার ওয়েব শোষনকারী পদার্থ বা র্যামঃ- এয়ারক্রাফটকে স্টিলেথ বানানোর আরেকটি নিয়ম হচ্ছে রাডার ওয়েব শোষনকারী পদার্থ দিয়ে বিমানকে রং করা।যাকে আমরা RAM বা রাডার অবজারবেল ম্যাটেরিয়াল হিসাবে চিনি।এই বিশেষ পদার্থটি রাডার থেকে নির্গত রেডিও ওয়েব শোষন করে।যার ফলে প্রতিফলিত হয়ে ওয়েব রাডারে ফেরত আসে না।।

♦স্টিলেথ বিমানের অসুবিধা:
স্টিলেথ বিমানের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক আবার অসুবিধাও রয়েছে। যেমন
♣স্টিলেথ বিমানকে IRST দিয়ে ডিটেক্ট করা যায়।
♣আধুনিক বেশ কিছু সোপহিসটিকেটেড রাডার রয়েছে। যেগুলো স্টিলেথ বিমানকে ডিটেক্ট করতে পারে।
♣স্টিলথ বিমান যখন মিসাইল ফায়ার করার জন্য এর ওয়েপন বে খুলে তখন রাডার ক্রস সেকশন বেড়ে যায়।ফলে তাকে ডিটেক্ট করা যাবে।
♣স্টিলথ বিমানের মেইনটেইন কস্ট অনেক বেশি।এরজন্য বিশেষ হাঙ্গার তৈরী করতে হয়।এটা অনেক ব্যায়বহুল।কেননা অনেকটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে রাখতে হয়।
♣RAM বা রাডার অবজারবেল ম্যাটেরিয়াল গুলো খুবই বিষাক্ত। এগুলো গোপন রসায়নিক মিশ্রন দিয়ে তৈরি করা হয় বলে এগুলো খুবই মূল্যবান।এছাড়া এগুলো বারবার ফাইটার লাগাতে হয়।একবার লাগাতে মিনিমাম ৪ দিন লাগে।
♦সাবমেরিনের স্টিলথ টেকনোলজিঃ- আধুনিক বিশ্বে মানবতাবাদী রাস্ট্র গুলোর কাছে স্টিলথ সাবমেরিন সোনার হরিণের মতো। সাবমেরিনকে ডিটেক্ট করা এমনিতে কষ্ট সাধ্য।তার উপর যদি স্টিলথ হয় তাহলে আর কোন কথায় নাই।সাবমেরিনকে দুইভাবে স্টিলথ করা যায়। প্রথমত বডিতে মোটা রবারের প্রলোপ দিয়ে। দ্বিতীয়ত এর প্রপোলার ডিজাইন করে।প্রপোলারের ডিজাইন করার কারণ হচ্ছে কম শব্দ উৎপন্ন করার জন্য।যে সাবমেরিন যত কম সাবমেরিনের উৎপন্ন করবে সে সাবমেরিন ততবেশি স্টিলথ।


নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের  ইউটিউব চ‌্যানেল Shohan MonsteR
Powered by Blogger.