১৯৭১: দুর্ধর্ষ স্পাই অপারেশনে পাকিস্থানি জাহাজের পতন

 

অগস্ট, ১৯৭১ সাল।

মুক্তিবাহিনীর স্পাই মমতাজ খান গোপন এক অ্যাসাইনমেন্টে দখলকৃত ঢাকায় এসেছেন। তাকে বুড়িগঙ্গার এক জেটিতে কয়েকটা জাহাজের খোঁজ নিতে হবে তার।
কয়েকদিন আগেই মুক্তিবাহিনী এক ওয়্যারলেস বার্তা ইন্টারসেপ্ট করে। জানা যায় সদরঘাটের ইপিআর জেটিতে কয়েকটা বড় বড় জাহাজে অস্র বোঝাই করা হচ্ছে!

গুপ্তচর মমতাজ খান থাকতেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। তারা পাঠান বংশোভুত বিড়ি পাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ি। অবাঙালি হয়েও এই পরিবারগুলো নিয়েছে ন্যায়ের পক্ষ, মাটির পক্ষ। নিজ জাতির কিছু লোকের অপকর্মের ভাগীদার না হয়ে বরং মুক্তিযোদ্ধারা সহায়তা করছেন। কাদেরিয়া বাহিনীর সাথে তাদের যোগাযোগ নিবিড়।
ঝড়ের বেগে মমতাজ খান চলে যান ঢাকায়। তার আপন ভাই পাকবাহিনীর কর্নেল। মমতাজ খানকে সন্দেহ করা দূরে থাক উল্টো পরিচয় পেয়ে রাজকীয় সম্মান দিয়ে চলে পাক সেনারা।

কিভাবে যেন সদরঘাটের সেই জাহাজ বহরের বাঙালি সারেং গোলাম মোস্তফার সাথে দেখাও করে আসেন তিনি। পাকি গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে তার লেখা এক চিরকুট নিয়ে আসেন মমতাজ। জাহাজের যাত্রাপথ, রুটিন সবই লেখা ছিল তাতে। স্পাই মমতাজ ফিরে যান মুক্তিবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায়।

৫ দিন পর সেই জাহাজ বহর টাঙ্গাইলের পাশ দিয়ে যমুনার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় হামলা করে কম্যান্ডার হাবিবের নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনীর একটা দল। সামান্য কয়েকটা গুলি আর মর্টারের টোকা খেয়েও জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। আসলে ভেতরে থাকা বাঙালি সারেং মোস্তফা জাহাজ থামিয়ে দিয়েছিলেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২১ কোটি টাকার অস্র হারায়। বর্তমানে দিনে যার মূল্য ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

বেশি জাহাজের লগবুক থেকে জানা যায় জাহাজে ১২০০০ রাইফেল, ১০০ মেশিনগান, ১০০ মর্টার, ২০টা রিকয়েললেস গান, ২৮টি কামান, ২.৫০ কোটি গুলি, ১৩.৫ লক্ষ শেল, ২ লক্ষ গ্রেনেড ছিল। এছাড়াও ওই বহরের একটি ওয়েল ট্যাংকারে আগুন ধরিয়ে দেয় মুক্তিবাহিনী যার শিখা ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে দেয়া গিয়েছিল।

অস্র হারিয়ে পাগলপ্রায় পাকি বাহিনী জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযান চালায় এবং 'অত্যন্ত সফলভাবে' ব্যর্থ হয়। এক যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এক যুদ্ধ বলা হয়, কম্যান্ডার হাবিবের নাম হয়ে যায় ‘জাহাজামারা হাবিব’ (বীর বিক্রম)। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে আসলে কাদের সিদ্দিকি তার কাছে ৫৮ ট্রাক অস্র জমা দেন।

তবে মমতাজ খান কিভাবে গোলাম মোস্তফা পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন এবং তার চিরকুট আনেন এই রহস্য কাদের সিদ্দিকী নিজেও জানেন না। স্পাইদের কিছু জিনিস যে রূপকথার মত রহস্যই থেকেই যায়!
সবমিলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা Intelligence Operations ছিল এটি।

লেখকঃ Sartaj Alim
© ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন ( সারতাজ আলীম )

তথ্যসূত্রঃ
1. স্বাধীনতা’৭১- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
2. মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অভিযান (৪)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সংগৃহীত সম্মুখযুদ্ধের তথ্যবিবরণী
3. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- একাদশ খণ্ড
4. মুক্তিযুদ্ধের সেরা লড়াই – সেজান মাহমুদ
Powered by Blogger.