ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-৩)

  


প্রথম পর্ব: ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-১)

২য় পর্ব: ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-২)


জাপানি অপারেশন প্ল্যান সবসময়ই বেশ জটিল। নেভাল ওয়ারফেয়ার বিশেষজ্ঞ ও ইতিহাসবিদদের ভাষায় যাকে বলা যায় 'Unnecessary Complex' বা সোজা বাংলায় যাকে আজাইরা 😅। এটি একাধিক ব্যাটল গ্রূপের সমন্বিত কাজের সমন্বয়ে গঠিত এবং খুবই জটিল অ্যাকশন প্ল্যান মেনে চলে। অর্থাৎ দুই বা ততোধিক গ্রূপ একসাথে একই শিডিউল মেনে চলবে। কিন্তু একজন মিলিটারি কমান্ডার হিসেবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে যতই প্ল্যান করে যুদ্ধে নামুন না কেন, যুদ্ধ কখনোই শতভাগ প্ল্যান মোতাবেক হয় না। কোরাল সি যুদ্ধে যেরকম প্ল্যান করেছিল তা কার্যকর না হওয়াতে প্রথমবারের মতো জাপানের কোনো ইনভেশন অপারেশন ব্যর্থ হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাদের দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। তবে কোরাল সি যুদ্ধে জাপানের একটাই প্রাপ্তি যে ইউএসএস লেক্সিংটন ডুবে গিয়েছিল এবং ইউএসএস ইয়র্কটাউন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু জাপানিরা ধরেই নিয়েছিল যে দুটো ক্যারিয়ারই ডুবে গেছে। কয়েক মাস আগেই ইউএসএস সারাটোগাকে জাপানি সাবমেরিন টর্পেডো মেরে ক্ষতিগ্রস্ত করায় যুক্তরাষ্ট্রে মেরামত করার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো তার নেভাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতি শতভাগ আস্থা রেখেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এই মুহূর্তে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ও ইউএসএস হরনেট রয়েছে। তাদেরকে পার্ল হারবার থেকে বের করে এনে মিডওয়েতে ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করতে তিনি 'Operation MI' নামে বিশাল এক প্ল্যান তৈরি করেন। MI দিয়ে Midway Invasion বোঝানো হয়েছে।

ব্যাটল অফ মিডওয়ে


ফেজ ১: এলিউশন দ্বীপে ইনভেশন পরিচালনা করবেন ভাইস এডমিরাল শিরো তাকাসু।

সম্ভাব্য_ফলাফল: তার উপর মার্কিন কাউন্টার অ্যাটাক আসবে পার্ল হারবার থেকে এবং মার্কিন বাহিনীকে অবশ্যই মিডওয়ে দ্বীপ অতিক্রম করতে হবে। তাই এখানে ফাঁদ পাতা হবে।

ফেজ_২: এখানে দুটো ব্যাটল গ্রূপ একসাথে কাজ করবে। মিডওয়ে দ্বীপ দখলের জন্য আসবে এডমিরাল নাবুটাকে কন্ডোর ইনভেশন ফোর্স। মার্কিনিদের ফাঁদে ফেলে ধ্বংসের জন্য অগ্রবর্তী দল হিসেবে আগে আসবে এডমিরাল চুইচি নাগুমোর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক ফোর্স। মিডওয়ের জলসীমায় আগেই পজিশন নেয়া জাপানি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো মিডওয়ে দ্বীপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করবে যেন এডমিরাল কন্ডোর ইনভেশন ফোর্স বাধা না পায়। এরপর মার্কিন ক্যারিয়ারের উপর অতর্কিতভাবে হামলা করা হবে।
সম্ভাব্য ফলাফল: ফাঁদে পড়ে মার্কিন ক্যারিয়ার ফোর্স ধ্বংস হবে। এজন্য দুটো মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোকাবেলায় চারটি ক্যারিয়ার এনেছিল জাপানিরা। নিজেদের ক্যারিয়ারের উপর হামলার খবর শুনে রিএনফোর্সমেন্ট পাঠাতে বাধ্য হবেন প্যাসিফিক ফ্লিট কমান্ডার এডমিরাল নিমিটজ।

ব্যাটল অফ মিডওয়ে


ফেজ ৩: সেক্ষেত্রে প্যাসিফিক অঞ্চলের আশেপাশের সমস্ত আমেরিকান নৌ-শক্তি মিডওয়েতে রওনা দিতে পারে। যদি তেমনটাই হয় তবে তাদেরকে মোকাবেলা করবে নাগুমো ও কন্ডোর পিছু পিছু আসা এডমিরাল ইয়ামামোতোর কম্বাইন্ড নেভাল ফোর্স। এতে ভারী ভারী ব্যাটলশিপ/ক্রুজার থাকায় ইম্পেরিয়াল জাপানি নেভির সেন্টার ফোর্স নামে পরিচিত। ফলে প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপর অল-আউট স্ট্রাইক করতে পারবে জাপান। দরকার হলে এডমিরাল তাকাসু এলিউশন দ্বীপ থেকে তার এসকর্ট ক্রুজার ফোর্স মিডওয়ের দিকে পাঠাবেন এডমিরাল কন্ডো, ইয়ামামোতো ও নাগুমোকে সাহায্য করতে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন যে তিনটি মেজর ব্যাটল গ্রূপের কো-অর্ডিনেটেড স্ট্রাইক প্ল্যান হচ্ছে অপারেশন এম-আই।


কিন্তু গতমাসের কোরাল সি যুদ্ধের যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্লেষণে এডমিরাল ইয়ামামোতোর বোঝা উচিত ছিল যে দুদিন আগেও যে মার্কিন ক্যারিয়ার দুটো পার্ল হারবারে বসে রোদ পোহাচ্ছিল, সেই ক্যারিয়ারগুলো কেন কয়েক হাজার মাইল দূরের একদম নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট লোকেশনে হঠাৎ করে আবির্ভূত হলো? তার মানে কি মার্কিন নেভাল ইন্টেলিজেন্স আগেই সব টের পেয়ে যাচ্ছে? 🙄🤔

☆ ফেজ ০১ :
এলিউশন দ্বীপেইনভেশন (অপারেশন এ-এল)

হিটলার যেভাবে ইউরোপ জয় করেছেন, তেমনি করে প্যাসিফিক অঞ্চল জয়ের চিন্তা ছিল জাপানের মাথায়। কিন্তু ইউরোপের ভূমি ও প্রশান্ত মহাসাগর তো আর এক জিনিস না। তারপরও জাপান একের পর এক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপগুলো শক্তিশালী নৌ ও সেনাবাহিনীর শক্তিতে দখল করে নিচ্ছিল। মিডওয়ের পাশাপাশি এলিউশন দ্বীপে নিজেদের বিমানঘাঁটি করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমিতে হামলা করা জাপানের জন্য আরো সহজ হয়ে যাবে। এই দ্বীপ সামরিকভাবে যত গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিকভাবে। এই দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত 'আট্টু' এবং 'কিসকা' দ্বীপ অফিসিয়ালি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। ফলে ১৮১২ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম মার্কিন ভূমি অন্য কেউ দখল করে নিলো- এই প্রোপাগান্ডা চালাতে পারবে জাপান।

ব্যাটল অফ মিডওয়ে

এডমিরাল ইয়ামামোতো পরিকল্পনানুযায়ী 'অপারেশন এ-এল' লঞ্চ করা হবে মিডওয়ে দ্বীপের মার্কিন বিমানঘাঁটিতে আক্রমণের সময়। কিন্তু এডমিরাল নাগুমোর ক্যারিয়ার টাস্কফোর্স যাত্রাপথে একদিন দেরি করে ফেলে। ফলে মিডওয়েতে হামলার আগেই ৩ জুন এলিউশন দ্বীপে হামলা শুরু হয়। ইতিহাসবিদ ও যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এডমিরাল ইয়ামামোতোর যুদ্ধ কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি যদি এলিউশন দ্বীপে হামলাকে যুক্তরাষ্ট্র ধোঁকা দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে চান তবে কেন তিনি একই দিন একই সময়ে মিডওয়ে দ্বীপেও হামলা করতে চাইবেন? (হালা বলদ 🙄) তাহলে তো মিডওয়ের আশেপাশে জাপানিদের ক্যারিয়ারের উপস্থিতির কথা যুক্তরাষ্ট্র জেনেই গেল! বরং একদিন দেরি হওয়ায় মার্কিন নৌবহর ফেজ-১ এর জাপানের অনুমান মোতাবেক কাউন্টার অ্যাটাক ফোর্স প্রেরণ করে। অর্থাৎ অপারেশন ঠিকঠাক মতোই সামনে এগোচ্ছে। কিন্তু মার্কিনিরা এলিউশন দ্বীপ নয়, বরং মিডওয়ের জন্যই এই ফোর্স পাঠিয়েছে। সেটাও আবার জাপানি অনুমানের একদিন আগে! 😕 (চলবে)
(প্রাণ চাটনি, বেকার খাটনি 🤣)

© লেখা: সমরাঙ্গন অবলম্বনে এম আর নাইন।

নিয়মিত রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়ক পোষ্ট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেইসবুক ফ‌্যান পেইজে- Click here

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের  ইউটিউব চ‌্যানেল Shohan MonsteR
Powered by Blogger.